টাঙ্গাইল

নির্বাচনী খরচ চালাতে দুশ্চিন্তায়!

আব্দুস সাত্তার, বিশেষ প্রতিনিধি:

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনে জাকের পার্টি মনোনীত প্রার্থী সখীপুর উপজেলা মৎস্যজীবী ফ্রন্টের সভাপতি আব্দুল জলিল নির্বাচনের খরচ চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তিনি একজন মাছ বিক্রেতা। তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চাননি। তারপরও দল থেকে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দুই উপজেলায় প্রচারণা চালাতে তার কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। এ মুহূর্তে তার হাতে নগদ কোনো টাকা নেই। ব্যাংকে আছে মাত্র দুই হাজার টাকা। তাই তিনি নির্বাচনের নূন্যতম খরচ চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। তিনি জেলার সখীপুর উপজেলার বৈলারপুর গ্রামের মৃত বারেক মিয়ার ছেলে।

সখীপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান জানান, টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনের সাতটি রাজনৈতিক দলের সাতজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাচাই-বাছায়ের সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে।

প্রার্থীরা হচ্ছেন- বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী (কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ), অনুপম শাজাহান জয় (আওয়ামী লীগ), রেজাউল করিম (জাতীয় পার্টি), পারুল আক্তার (তৃণমূল বিএনপি), আবুল হাশেম (বিকল্পধারা বাংলাদেশ), আব্দুল জলিল (জাকের পার্টি) ও মোস্তফা কামাল (বাংলাদেশ কংগ্রেস)।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, বিধি মোতাবেক একজন সংসদ সদস্য প্রার্থী নির্বাচনে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন। আব্দুল জলিল নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেওয়া হলফনামায় বাৎসরিক আয় উল্লেখ করেছেন ২ লাখ ৪০ হাজার। অনুরূপ টাকা ব্যয়ের খাতেও উল্লেখ করেছেন। ফলে তার হাতে কোন নগদ টাকা নেই। পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন মাছ ব্যবসা।

কীভাবে নির্বাচনের খরচ চালাবেন জানতে চাইলে আব্দুল জলিল জানান, আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা ধার করবেন। তিনি কয়েকটি পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করছেন। সেসব পুকুরের মাছ বিক্রি করলে ৫০ হাজার টাকার মতো পাওয়া যাবে। এই আড়াই লাখ টাকা দিয়েই নির্বাচন চালাতে চেষ্টা করবেন। এই অল্প টাকায় নির্বাচন শেষ করা তার জন্য খুবই কষ্টের হবে। এজন্য তিনি দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। আর্থিক সহযোগিতার বিষয়ে দলীয় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এখনও কোন আলোচনা হয়নি।

চার ছেলের জনক আব্দুল জলিল আরও জানান, তিনি পড়াশোনা করেন নি। শুধু নাম-দস্তখত করতে পারেন। তিনি লোক মুখে শুনেছেন অনেক অশিক্ষিত লোকও জনগণের ভোটে এমপি হয়। জনগণ ভোট দিলে এমপি হওয়া অসম্ভব কিছু না। সব আল্লাহর ইচ্ছা। তিনি এমপি নির্বাচিত হলে মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন।

নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার বিষয়ে তিনি জানান, অনেকে পঞ্চাশ বছর রাজনীতি করেও দলীয় মনোনয়ন পায়নি। তিনি চাওয়ার আগেই দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি অবশ্যই বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।

সখীপুর উপজেলার বৈলারপুর গ্রামের বিএনপির সাবেক নেতা শরিফ পাপ্পু জানান, তিনি প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে রাজনীতি করছেন- এমপি তো দূরের কথা, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন করার সাহস পাননি। জলিলের বাবা বারেক মিয়া একজন শ্রমজীবী মানুষ ছিলেন। তার মা অন্যের বাড়িতে সারা জীবন কাজ করেছেন, তারা দুই ভাই। আব্দুল জলিল মাছ বিক্রি করে সংসার চালান। তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন- এটা তাদের গ্রামের জন্য গৌরবের।

সখীপুর উপজেলা জাকের পার্টির সভাপতি লুৎফর রহমান জানান, ২০০৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি জাকের পার্টির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর আর কোনো কমিটি হয়নি। সখীপুরে এখন জাকের পার্টি অনেকটা নিষ্ক্রিয়। দলের প্রার্থী আব্দুল জলিলকে তিনি চিনেন না। কখনো দেখেছেন বলেও মনে করতে পারেন না। তিনি যেহেতু দলে নিষ্ক্রিয় তাই এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker