নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে টাঙ্গাইলে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে অসংখ্য মুরিদান ও ভক্তদের কন্ঠে যুগ যুগ জিও তুমি মওলানা ভাসানী শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে টাঙ্গাইলের সন্তোষে মজলুম জননেতার মাজার প্রাঙ্গন। সকাল সাড়ে সাতটায় মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড: মো: ফরহাদ হোসেন মাজারে পুস্পস্তবক অর্পন, ফাতেহা পাঠ ও মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসুচী শুরু করেন।
এরপর জেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় পার্টি, কমিউনিষ্ট পার্টি, ভাসানী স্মৃতি সংসদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, জাসাস, ভাসানী আদর্শ অনুশীলন পরিষদ, ভাসানী স্মৃতি পরিষদ, ন্যাপ ভাসানী, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুস্পস্তবক অর্পন করা হয়। অপরদিকে দেশী বিদেশী অসংখ্য ভক্ত মুরিদান ও সর্বস্তরের জনতা মরহুমের মাজারে পুস্পস্তক অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একুশে পদক প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম এমপির নেতৃত্বে নেতাকর্মীদের নিয়ে মাজারে ফাতেহা পাঠ ও পুস্পস্তবক অর্পন করেন। এরপর ভাসানীর পরিবারের পক্ষ থেকে পুস্পস্তবক অর্পন করা হয়। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম ও কেন্দ্রীয় বিএনপি’র পক্ষ থেকে ভাইস চেয়ারম্যান শামছুজ্জামান দুদু ভাসানীর মাজারে পুস্পস্তবক অর্পন ও মোনাজাত করেন। এসময় কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকীর নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা ভাসানীর মাজারে পুস্পস্তবক অর্পন ও মোনাজাত করেন।
মাজার জিয়ারত শেষে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বলেন, আগামী নির্বাচন যদি ৫৪, ৭০ এর মত না হয় তাহলে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, মজলুম জননেতা ভাসানী সারা জীবন অসহায় নির্যাতিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করে গেছেন। বর্তমানে তিনি জীবিত থাকলে আজ দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতেন।
বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শামছুজ্জামান দুদু বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপি ঢাকায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মাধ্যমে জানিয়ে দিবে বাংলাদেশের জনগণ আর এই সরকার কে দেখতে চায় না। তিনি বলেন, এ দেশের জনগণ আর রাতের ভোট দেওয়া মেনে নেবে না। আওয়ামী লীগের অধীনে এই দেশে কোন নির্বাচন হবে না।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকী বলেন, জাপানের রাষ্ট্রদূত যখন বলেন বাংলাদেশে রাতের বেলায় ভোট হয়েছে তখন দেশের সম্মান কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়! বর্তমান সরকার বিশে^র দরবারে দেশের সম্মানহানি করেছে। এই সরকার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য যেকোন কিছু করতে প্রন্তুত আছে। মানুষের জাগরণ শুরু হয়েছে। সরকার দমন-পীড়ন করে এই জাগরণকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। মানুষ যখন নাগরিক মর্যাদার লড়াইয়ে নেমেছে,তখন এই গণজোয়ার কোন ভাবেই ঠেকাতে পারবে না।
দিবসটি উপলক্ষে প্রতি বছরের মত এবারো দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ,ওরশ, স্মরণ সভা, গনভোজ,মেলাসহ দিনব্যাপি নানা কর্মসুচীর আয়োজন করেছে বিভিন্ন সংগঠন।
উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরন করেন। ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে মওলানা ভাসানী জন্মগ্রহন করেন। সিরাজগঞ্জে জন্ম হলেও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তার জীবনের সিংহভাগই কাটিয়েছেন টাঙ্গাইলের সন্তোষে। সন্তোষের মাটিতেই তিনি চির নিদ্রায় শায়িত আছেন। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তার কৈশর জীবন থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি তৎকালীন বাংলা-আসাম প্রদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন। শ্রেণীপ্রথা উচ্ছেদ, জমিদারদের নির্যাতন বিরোধী আন্দোলনসহ সারাজীবন তিনি সাধারণ মানুষের কল্যাণে আন্দোলন-সংগ্রাম করে গেছেন। তার উদ্যোগে ১৯৫৭ সালে কাগমারীতে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলন বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মোড়ের জন্ম দিয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি সর্বদলীয় কাউন্সিল’র উপদেষ্টা ছিলেন। স্বাধীনতার পর তার সর্বশেষ কীর্তি ছিল ফারাক্কা লং মার্চ। বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। বঙ্গবন্ধুও তাকে পিতার মত শ্রদ্ধা করতেন।