আগামী সোমবার পঞ্চম ধাপের তফসিল ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ধাপে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে। এদিকে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা না হলেও এ উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোয়ন পেতে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা আগাম প্রচারণা শুরু করেছেন। অন্যদিকে বিএনপির সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীরাও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা ভোটারদের খোঁজ-খবর নেওয়াসহ করছেন কুশল বিনিময়।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইউনিয়নগুলোতে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্ন সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান, ধর্মীয়সভা, সমাবেশে উপস্থিত হয়ে উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। দলীয় প্রতীক নৌকা পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
এদের মধ্যে গত ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীরাও নৌকা প্রতীক পাওয়ার আশায় প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া কোনো কোনো ইউনিয়নে যুবলীগের নেতারাও দলীয় মনোনয়ন পেতে নিজেদের চেয়ারম্যান প্রার্থীতা ঘোষণা দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। দলীয় মনোনয়ন ও সমর্থনের জন্য এলাকায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন তাঁরা। অনেকেই দলীয় মনোনয়ন পেতে ঢাকায় গিয়ে কেন্দ্রীয় ও টাঙ্গাইলের জেলা নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তদবির শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট, পাড়া-মহল্লায় প্রার্থীদের কে ভালো কে মন্দ এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
অন্যদিকে ইউপি সদস্য পদের প্রার্থীরাও ভোটার ও সাধারণ মানুষের কাছে দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের অনেকে দলীয় মনোনয়ন ও সমর্থন চেয়ে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার সাটিয়ে নিজের প্রার্থীতা জানান দিচ্ছেন।
কয়েকজন প্রার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ইউপি নির্বাচনে এলাকায় অনেক প্রার্থীর জনপ্রিয়তা থাকা সত্তে¡ও তাদের মনোনয়ন না দিয়ে স্থানীয় শীর্র্ষ নেতাদের পছন্দের ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়া হয়। এজন্য ওইসব জনপ্রিয় ব্যক্তিরা মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এদের মধ্যে একজন বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ীও হয়েছেন।
এ কারণে দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে অন্য প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার কারণেও দলীয় প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
আগামী ইউপি নির্বাচনে এবারও উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের প্রত্যেক ইউনিয়নে একাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য প্রচারণা শুরু করেছেন। এরমধ্যে গত ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীরাও এ প্রচারণায় রয়েছেন। তবে দলীয় হাই কমান্ড থেকে বিদ্রোহীদের মনোনয়ন দেয়া হবে না বলে ইতোমধ্যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে অনেকেই আবারও বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন বলে তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
প্রচারণায় থাকা প্রার্থীদের মধ্যে দলীয়ভাবে চূড়ান্ত সমাধান করা না হলে ভোটের মাঠে দলীয় প্রার্থী পরাজয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সরকার টানা ক্ষমতায় থাকায় উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নেতাদের অবস্থান শক্তিশালী করতে গ্রুপিং রয়েছে। ভোটের মাঠে নিজেদের অবস্থান না থাকলেও পাল্লা ভারি করতে তাঁরা বিভিন্ন কৌশলে রয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। আর যারা তৃনমূলে ভোটারের সাথে রয়েছেন তাঁরা নেতাদের কাছে মুল্যায়িত হচ্ছেন না বলে একাধিক প্রার্থী অভিযোগ করেছেন। এজন্য আগামী ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর ভরাডুবি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতা জানান, মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তৎপরতা মূল ধারায় ঐক্যবদ্ধ রাখতে ইউপি নির্বাচন দলীয় প্রতীকে নয়, স্বতন্ত্র প্রতীকে হওয়া প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন।
উপজেলার তরফপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুইবারের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো: শরীফুর রহমান গত ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় বিএনপির প্রার্থী জয়ী হন। এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন, না পেলেও চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে তিনি জানান।
আনাইতারা ইউনিয়নে আনাইতারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা কামাল ময়নাল গত ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বর্তমান চেয়ারম্যান মো: জাহাঙ্গীর আলম নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হন।
এ ছাড়া মিজানুর রহমান আবু, এম এ লতিফ লেবু দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হন। আগামী নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্বাস বিন হাকিম, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলামও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
বানাইল ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো: শামীম কবীর দলীয় মনোনয়ন পেলেও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের প্রথম সারির নেতাকর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মো: ফারুক হোসেনের পক্ষে কাজ করেন। এ কারণে পরাজিত হন বলে শামীম কবির অভিযোগ করেন।
জামুর্কী ইউনিয়ন পরিষদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাহফুজুর রহমান কনক দলীয় মনোনয়ন পেলেও মুক্তিযোদ্ধা আবু মতিন ফাক্কন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আলী এজাজ খান চৌধুরী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
মহেড়া ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো: বাদশা মিয়া দলীয় মনোনয়ন না পেলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নৌকার চেয়ে ২ হাজার ৮০ ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হন। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক জাতীয় পার্টি নেতা বিভাস সরকার নুপুর দলীয় মনোনয়ন পেয়ে পরাজিত হন।
মির্জাপুরের শিল্পাঞ্চল এলাকা নিয়ে গঠিত গোড়াই ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের পাঁচবারের সাবেক চেয়ারম্যান ও টানা তিনবারের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টুর বড় ভাই জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মীর দৌলত হোসেন বিদ্যুৎ বিএনপির প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। এই ইউপিতে আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ুন কবীর, মো: আশরাফ খান, সালাউদ্দিন ভূইয়া ঠান্ডু, আদিল খান দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।
বহুরিয়া ইউনিয়নে সাবেক ইউপি নির্বাচনে আবু সাইদ সাদু দলীয় মনোনয়ন পেলেও বিদ্রোহী পার্থী থাকায় ৫৪ ভোটে পরাজিত হন তিনি। শিল্পপতি রেজাউল করিম বাবুল গত ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এবারও নিজেকে প্রার্থীতা ঘোষণা দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
ওয়ার্শী ইউনিয়নে গত ইউপি নির্বাচনে উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুল আলম মল্লিক হুর মহলকে মনোনয়ন দেয়া হয়। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুল্লাহেল সাফি মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বর্তমান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফির ছোট ভাই আব্দুল্লাহ হেল বাকিও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
ভাওড়া ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মো: আমজাদ হোসেন দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন।
ভাতগ্রাম ইউনিয়নে উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক ভিপি আবু সাইদ মিয়া দলীয় মনোনয়ন পেয়ে পরাজিত হন। এ নির্বাচনে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি মোবারক হোসেন সিদ্দিকী দলীয় মনোনয়ন না পেলেও দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেন বলে আবু সাইদ অভিযোগ করেন।
এই ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শহীদুর রহমান লাবু ও মোবারক হোসেন সিদ্দিকী এবার দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর শরীফ মাহমুদ বলেন, গত ইউপি নির্বাচনে অংশ নেয়া বিদ্রোহী প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারবেন। তবে মনোনয়ন দেয়া না দেয়া কেন্দ্রের বিষয়।