নিখোঁজের ১৩ দিন পর হাসপাতালের মর্গে আল আমিনের (২৯) মরদেহ পেল স্বজনরা। শনিবার (১৭ আগস্ট) শহিদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে তার লাশ খুঁজে পান পরিবারের সদস্যরা।
এর আগে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মিছিলে যোগ দিয়ে গুলিবিদ্ধ হন আল আমিন। এরপর থেকে তার কোনো সন্ধান পাচ্ছিল না পরিবার। নিহত আল আমিন শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বিঝারী ইউনিয়নের দক্ষিণ মগর গ্রামের ইসমাইল মীর মালত ও জিয়াসমিন বেগম দম্পতির ছেলে।
জানা গেছে, আল আমিন পরিবারের সঙ্গে সৌদি আরবে থাকতেন। চার মাস আগে দেশে ফিরে সাভারের বাইপাল এলাকায় বাবার সঙ্গে মুদি দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করেন।
রোববার আল আমিনের মরদেহ নিয়ে যৌক্তিক আহ্বান নামের শরীয়তপুরের একটি সংগঠন জেলা শহরে আসে। পরে তারা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে আল আমিনকে শহিদের মর্যাদা দেয়া ছাড়াও তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা ও তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানান।
আল আমিনের পরিবারের সদস্যরা জানান, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বিঝারী ইউনিয়নের দক্ষিণ মগর গ্রামের ইসমাইল মীর মালত তার স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সৌদি আরবে থাকতেন। আল আমিন ওই দম্পতির বড় ছেলে। এক বছর আগে আল আমিনের পরিবার বাংলাদেশে ফিরে আসে। আর চার মাস আগে ফিরে আসেন আল আমিন। দেশে ফিরে বাবা ইসমাইল মীর মালতের সঙ্গে সাভার বাইপাল এলাকায় একটি মুদি দোকান খোলেন। এরপর বাবার সঙ্গে সে দোকানটি পরিচালনা করছিলেন।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মিছিলে যোগ দেয়ার জন্য বিকেল ৪টার দিকে বাসা থেকে বের হন আল আমিন। এরপর আর বাসায় ফিরে যাননি। মিছিলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে শহিদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরের দিন ৬ আগস্ট মার যান আল আমিন। তবে পরিবারের সদস্যদের খুঁজে না পাওয়ায় অজ্ঞাত হিসেবে তার লাশ শহিদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়।
গেল শুক্রবার (১৬ আগস্ট) এক সংবাদ মাধ্যমের খবর দেখে আল আমিনের ছোট বোন আফলান সিনথিয়া ছুটে যান শহিদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। পরে হাসপাতালের মর্গে আল আমিনের মরদেহ শনাক্ত করেন। এরপর রাতে তার মরদেহ নিয়ে বাড়ি পৌঁছান। পরে রাতেই গ্রামের বাড়িতে জানাজা দেয়া হয়। পরবর্তীতে যৌক্তিক আহ্বান নামের শরীয়তপুরের একটি সংগঠনের কর্মীরা আল আমিনের লাশ নিয়ে আসেন জেলা শহরে। সেখানে রাত ৩টার দিকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গের ফ্রিজে রাখা হয় আল আমিনের লাশ। একপর্যায়ে খবর পেয়ে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ ও পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম হাসপাতালে ছুটে যান।
সবশেষ রোববার (১৮ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে ওই সংগঠনের কর্মীরা আল আমিনের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জড়ো হন। তারা সেখানে আল আমিনকে শহিদের মর্যাদা দেয়া ছাড়াও তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা ও তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানান। পরে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার তাদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। একপর্যায়ে সভায় সিদ্ধান্ত হয় বিকেলে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে আল আমিনের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হবে।
আল আমিনের বোন আফলান সিনথিয়া বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে সৌদি আরবে থাকি। দেশের রাজনীতি আমরা বুঝি না। আমার ভাই সেই নোংরা রাজনীতিতে পরে জীবন হারালো। বাবা-মায়ের ইচ্ছে ছিল ডিসেম্বরে ওকে বিয়ে দেয়ার। সেই আশা আর পূরণ হলো না। আমরা ভাইকে হারিয়েছি। আমরা চাই তাকে যেন শহিদের মর্যাদা দেয়া হয়। এ কারণে তার লাশ নিয়ে প্রশাসনের কাছে এসেছি।
আল আমিনের বাবা ইসমাইল মীর মালত বলেন, আমরা পরিশ্রম করে জীবনযাপন করছিলাম। কেন আমাদের ওপর এমন বিপর্যয় নেমে আসলো? ছেলের লাশটা ১২ দিন বেওয়ারিশ হয়ে হাসপাতালের মর্গে পড়ে ছিল। বাবা হিসেবে এই যন্ত্রণা কি তা আমি কাউকে বুঝাতে পারবো। আমি ছেলে হত্যার বিচার কার কাছে চাইবো?
শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম বলেন, ছেলেটির মৃত্যুর ঘটনায় আমরাও ব্যথিত। ওর পরিবার ও একটি সংগঠনের কিছু দাবি তুলে ধরা হয়েছে। আইনের মধ্যে থেকে যা করা যায় আমরা সেগুলো বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর ওই পরিবারটির পাশে স্থানীয় প্রশাসন ও আমরা সবসময় থাকবো।