স্বপ্নের দেশ ইতালি যাওয়ার জন্য দালালের খপ্পরে পড়ে লিবিয়ার বন্দিশালায় নির্যাতনের শিকার হয়ে শিবচরের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে বুধবার রাতে সজীব সরদার (২৮) নামে নিহত যুবকের সাথে শেষ কথা হয়েছে পরিবারের সাথে।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) ভোরে মৃত্যুর খবর বাড়িতে পৌঁছালে এতে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহত সজীব সদর জেলার শিবচর উপজেলার নিলখী ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামের চান মিয়া সরদারের ছেলে।
জানা গেছে, ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্য চারমাস আগে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল সজীব ও তার চাচাতো ভাই রাকিব। স্থানীয় দালালের মাধ্যমে প্রথমে তাদেরকে লিবিয়া পৌঁছায়ে দিয়েছিলেন তারা। লিবিয়া যাওয়ার পরই দালাল চক্রের হাত বদল হয়ে তারা বন্দী হয় মাফিয়াদের হাতে।
এরপর থেকেই চালানো হয় নির্যাতন। নির্যাতনের ভিডিও বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে আদায় করা হতো মোটা অঙ্কের টাকা। লিবিয়ার বন্দিশালায় পালাক্রমে নির্যাতনের শিকার হতেন সজীব ও রাকিব। এক পর্যায়ে সজীব গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরলে লিবিয়াতে থাকা আরেক দালালের তত্ত্বাবধানে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল তাকে। পরে বৃহস্পতিবার ভোরে সজীব মারা যায়।
নিহতের স্বজনেরা জানান, মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া এলাকার দালাল বোরহান বেপারীর মাধ্যমে ১৫ লাখ টাকা চুক্তিতে ইতালির নিয়ে যাওয়ার কথা বলে লিবিয়া নেয়। সেখান থেকে সরাসরি ইতালি নেয়ার জন্য কথা বলে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেয়। দুই দফা বিক্রি করে সজিবকে।
মারধর করে দফায় দফায় ৪৬ লাখ টাকা আদায় করে দালাল চক্র। বুধবার সজিবের অবস্থা খারাপ দেখে মাফিয়ারা রাস্তায় ফেলে যায়। পরে খোঁজ নিয়ে লিবিয়ায় থাকা পরিচিত কয়েকজন সজিবকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে আসে। পরে বেসরকারি একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
নিহত সজিবের বাবা চান মিয়া সরদার বলেন, আমার ছেলেকে দালাল বোরহানের ইতালি নেয়ার কথা বলে লিবিয়া নিয়ে যায়। সেখানে বিক্রি করে দেয়। চার মাস আটকে রেখে মারধর করে। শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে। মারতে মারতে আমার ছেলেটা গতকাল মরে গেছে।
নিহত সজীবের বোন শামীমা আক্তার বলেন, দফায় দফায় ৪৬ লাখ টাকা দিয়েও ভাইকে বাঁচাতে পারলাম না। জমিজমা বিক্রি করে দিছে ওর জন্য। সরকারের কাছে আমার ভাইয়ের লাশ যেন বাড়ি আসে এই দাবি জানাই। আর দালাল বোরহানের ফাঁসি চাই। শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভীন খানম বলেন, বিষয়টি মর্মান্তিক। আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি। মরদেহ আনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।