মাদারীপুর

মাদারীপুরে হামলায় ৪০ কোটি টাকার ক্ষতি, ৫ মামলায় আসামি ৮ শতাধিক

মাদারীপুরে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের রক্তক্ষয়ী ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়েছে। সংঘর্ষের চলাকালে বিক্ষুব্ধরা সরকারি বেসরকারি অন্তত ১০ প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় একটি পেট্রলপাম্প, ৩২টি যাত্রীবাহী বাস, ৩টি ট্রাকসহ একাধিক ছোট যানবাহন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৪০ কোটি ৮ লাখ টাকার।

মাদারীপুরে ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় ৮ শতাধিক আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় শতাধিক গ্রেফতার করা হয়েছে। জানা গেছে মামলাসহ আসামীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এদিকে হামলার ফলে ধ্বংসস্তূপে রূপ নিয়েছে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা গুলো। এসব স্থাপনা নতুন করে ঠিক করতে প্রায় ৬ মাস সময় লাগবে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানাজায়, গত বৃহস্পতিবার সকালে শহরের ডিসিব্রিজ এলাকায় আন্দোলনকারীদের অবরোধ কর্মসূচির সময়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগ–যুবলীগের সাথে সংঘর্ষের সময়ে পুলিশের লাঠিপেটা এবং ছাত্রলীগের বোমা হামলার পরে ধাওয়া খেয়ে লেকের পানিতে পড়ে দীপ্ত দে নামে এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এরপরেই আন্দোলনকারীরা বিক্ষুবদ্ধভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে একযোগে হামলা চালিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, এসপি-ডিসির কর্যালয়সহ বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এসময়ে তারা সদর থানাধীন ১ নম্বর পুলিশ ফাঁড়িটিতেও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।

পরের দিন শুক্রবার দুপুর ৩টার দিকে আন্দোলনকারী অন্তত ৫/৭ হাজার মানুষ শেখ হাসিনা মহাসড়কের মস্তফাপুর থেকে একযোগে হামলা চালায়। হামলায় তারা মস্তফাপুর গোল চত্বরের ট্র্যাফিক পুলিশ বক্স ও একটি প্রাইভেটকারে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পল্লি বিদ্যুতের গেস্ট হাউসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।

Image

এরপর খাগদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশ ও শাজাহান খানের অনুসারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে রোমান বেপারী ও তওহিদ সন্নামাত নামে দুজন নিহত হয়। এঘটনায় অন্তত শতাধিক মানুষ আহত হন। পরে আন্দোলনকারীরা এক পর্যায় পুলিশের প্রতিরোধ ভেঙে শাজাহান খানের মালিকানাধীন সার্বিক পেট্টোলপাম্পে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে পরে আগুন ধরিয়ে দেয়। একই সময় তারা পেট্টোল পাম্পের পিছনে থাকা সার্বিক পরিবহনের ডিপোতে আগুন দিয়ে সার্বিক পরিবহনের অন্তত ৩২টি বাস আগুনে পুড়িয়ে দেয় ভাঙচুর করা হয় আরো পাঁচটি বাস। এ সময় পাম্পে থাকা পাঁচটি মোটরসাইকেলসহ তিনটি ট্রাক আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। পরে তারা নতুন বাসস্ট্যান্ড, সার্কিট হাউস, লেকভিউ হোটেল, মহিলা সংস্থা কার্যালয়সহ পৌর মুক্তিযোদ্ধা অডিটোরিয়াম ভবনে ভাঙচুর চালিয়েছে। এরপরে শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে শহরের শকুনি লেকের দক্ষিণপাড়ে অবস্থিত ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পৌর মুক্তিযোদ্ধা অডিটোরিয়াম ভবনটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নতুন বাসস্ট্যান্ডের পাশেই সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান এমপির মালিকানাধীন সার্বিক পেট্টোলপাম্প ও বাসডিপোতে থাকা যাত্রীবাহী বাসগুলো আগুনে পুড়ে এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। পেট্টোলপাম্পের যন্ত্রাংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। একই অবস্থা পৌর মুক্তিযোদ্ধা অডিটোরিয়াম ভবনটির ভিতরে থাকা সব চেয়ার টেবিলসহ সকল আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে পড়ে রয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়টির দশাও করুণ ভাঙচুর করা হয়েছে আসবাবপত্রসহ দরজা জানালা।

মাদারীপুর শহরের বাসিন্দা বিল্লাল মোল্লা বলেন, আমার ৪০ বছর বয়স। আমরা জীবনে মাদারীপুরে এ রকমের ধ্বংসযজ্ঞ দেখি নাই।

সার্বিক পরিবহনের ব্যবস্থাপক গোপাল হালদার বলেন, আমাদের কোম্পানির বাসগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আমাদের প্রায় ৩৫ কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হয়েছে। সরকারিভাবে সাহায্যসহ যোগিতা পেলে পেট্টোলপাম্পসহ পরিবহণ চালু করতে ৬ মাসের অধিক সময় লাগতে পারে।

পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ বলেন, অগ্নিকাণ্ডে পৌর অডিটোরিয়ামের ৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ছাত্রদের আন্দোলনকে ইস্যু করে বিএনপি জামাতের লোকজন চোরা গুপ্ত হামলা শুরু করেছে। এ আগে তারা ভাঙচুর চালিয়েছে। সরকারি বিভিন্ন স্থাপনাকে তারা লক্ষ্য করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয় পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাই।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা বলেন, হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫টি মামলায় হয়েছে। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা ৮ শতাধিক আসামি করা হয়েছে। দোষীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। মামলার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশীদ খান বলেন, তদন্ত কমিটি করে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়েছে। পুরো জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৪০ কোটি ৮ লাখ টাকা।

Author

দ্বারা
মাসুদ রেজা ফিরোজী, মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker