মাদারীপুর

এনজিওর ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় নারী’কে আটকে রাখার অভিযোগ

মাদারীপুরের কালকিনিতে ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারায় দুগ্ধপোষ্য এক নারীকে ৮ ঘন্টা আটকে রাখার এমন অভিযোগ ‘গণউন্নয়ন প্রচেষ্টা’ নামে এক এনজিও বিরুদ্ধে। এঘটনা স্থানীয় লোকজন ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে থানা পুলিশের সহযোগীতায় ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করেন। এদিকে স্থানীয় সচেতন মহলে এই ঘটনা ছড়িয়ে পরলে ওই এনজিওর বিরুদ্ধে চরমক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং অভিযুক্তদের বিচার দাবি জানিয়েছেন। রোববার (৩০ জুন) দিবাগত রাত ১১টার দিকে কালকিনি উপজেলার গণউন্নয়ন প্রচেষ্টার অফিস কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

সোমবার (১ জুলাই) সকালে উপজেলা প্রশাসন ও ভূক্তভোগী পরিবার এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, ওই নারী তিনটি শিশু সন্তান রয়েছে এর মধ্যে দুগ্ধপোষ্যছোট বাচ্চার বয়স ৯ মাস।

পুলিশ ও ভূক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গনউন্নয়ন প্রচেষ্টা নামে একটি এনজিওর কালকিনি শাখা থেকে সম্প্রতি ৮০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন ডাসার উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের বাঘরিয়া গ্রামের অসহায় ওই গৃহবধূ। এরমধ্য তিনি ৩২ হাজার টাকার ঋণ পরিশোধ করেন। পরে ওই অসহায় গৃহবধূর স্বামী বিদেশ গিয়ে নিখোঁজ থাকায় ওই ঋণের বাকী টাকা পরিশোধ করতে পারেননি।

এ কারণে রোববার দুপুর তিনটায় গনউন্নয়ন প্রচেষ্টার কালকিনি শাখার ম্যানেজার মো: জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে অফিস কর্মী সুবেন্দু বৈদ্য ও রুপালী বৈরাগী ওই গৃহবধূকে তার স্বামীর বাড়ি হতে তাদের অফিস কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। পরে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদ সজিব স্থানীয় লোকজন নিয়ে ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে থানা পুলিশের সহযোগীয় পরে রাত ১১ টার দিকে ওই এনজিও কার্যালয় থেকে অসহায় নারীকে উদ্ধার করেন। এদিকে এই ঘটনা জানাজানি হলে ওই এনজিও কর্মীদের বিরুদ্ধে চরমক্ষোভ প্রকাশ করাসহ অভিযুক্তদের বিচার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

অসহায় নারী কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বামী নিখোঁজ থাকার কারণে ঋণের কিস্তি সময় মতো পরিশোধ করতে পারিনাই। তাই ম্যানেজার মো: জসিম উদ্দিন, অফিস কর্মী সুবেন্দু বৈদ্য ও রুপালী বৈরাগী আমাকে আমার স্বামী বাড়ি থেকে এনে তাদের অফিসে আটকে রাখেন। আমি অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে কোনো রকম সংসার চালাছি। আমি কি করে এ ঋণের টাকা পরিশোধ করবো তা বলতে পারছিনা।

ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদ সজিব বলেন, আমার এলাকার অসহায় গৃহবধূকে আটকে রাখার অভিযোগ পেয়ে ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে স্থানীয় লোকজন নিয়ে থানা পুলিশের সহযোগীতায় উদ্ধার করতে পারি। তার ছোট বাচ্চার বয়স মাত্র ৯ মাস। তাকে যখন নিয়ে আসা হয় তখন বাচ্চাটা অনেক কান্না করেছে দুধের জন্য। তবুও তাকে ছাড়েনি।

মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, দুগ্ধপোষ্য নারীকে বাচ্চা থেকে আলাদা করে রাখা অমানবিক। এটা আইনগতভাবে করতে পারে না তারা। এনজিওটির বিরুদ্ধে তদন্ত করে রাষ্ট্রের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

স্থানীয় রফিক ও রাজ্জাকসহ বেশ কয়েকজন সচেতন ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গনউন্নয়ন প্রচেষ্টার এমন কাজ মেনে নেয়া যায় না। আমরা এর বিচার চাই। তবে এর পূর্বেও তারা এ ধরনের কার্যক্রম চালিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

গণউন্নয়ন প্রচেষ্টার ম্যানেজার মো: জসিম উদ্দিন আটকে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কিস্তির টাকা পাওনা থাকায় ওই গৃহবধূকে অফিসে আনা হয়েছিলো।

এ ব্যাপারে কালকিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তম কুমার দাশ বলেন, ঋণের জন্য এক গৃহবধূকে আটকে রাখার বিষয়টি জেনেছি। পরে থানা পুলিশ গিয়ে ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করেছে।

Author


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

দ্বারা
মাসুদ রেজা ফিরোজী, মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker