মাদারীপুর

সৌদি প্রবাসীর মৃত্যু: সাইকেল চাই না, আমার বাবার লাশটা চাই

মাদারীপুরের এক সৌদি প্রবাসীর ব্রেইন স্ট্রোকে মৃত হয়েছে। নিহত মিলন মাতুব্বর (৩৫) ৫ বছর আগে সৌদি আরবে যান। মাদারীপুর সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম খৈয়ার ভাঙ্গা গ্রামের সিরাজুল হক মাতুব্বরের ছেলে মিলন।

বাবার শোকে ৯ বছর বয়সী ছেলে আবির মাতুব্বর কান্না করতে করতে বলছিল, বাবার কাছে একটি সাইকেল চেয়েছিলাম, সে আমাকে কিনে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন আর আমি সাইকেল চাই না। আমি শুধু আমার বাবাকে শেষবারের মতো একটু
দেখতে চাই। আমার এখন বাবার লাশটা দেখতে চাই।

বাবাকে একনজর দেখার শেষ আকুতি জানিয়ে শিশু আবিরে আরো বলে, আমি তার বড় ছেলে। আমার ছোট দুই ভাই ও মা আছে। আমি মাদ্রাসায় পাড়াশুনা করছি। আমার বাবা সৌদিতে মারা গেছে। আমার মাদ্রাসার খরচ এখন কে দেবে? আমাদের
দেখার মতো আর কেউ নেই। আপনারা আমার বাবাকে একটা নজর দেখার ব্যবস্থা করে দিন।

স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরানোরে উদ্দেশে ৫ বছর আগে সৌদি আরবে যান মাদারীপুর সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম খৈয়ার ভাঙ্গা গ্রামের সিরাজুল হক মাতুব্বরের ছেলে মিলন মাতুব্বর। ৪ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন মেঝ ভাই। তিনি সৌদি আরবের রিয়াদ শহরের হালুজারায় থেকে কাজ করে আসছিলেন। কিন্তু মিলন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেনি। সৌদির আকামাসহ নিজ খরচ শেষে কোনো রকম টেনেটুনে সংসারের খরচ
চালিয়ে আসছিলেন তিনি। গত ১৮ জুন রাতে সৌদি আরবে বসবাসরত বাসায় ব্রেইন স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন মিলনকে সেখান একই সঙ্গে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীরা সৌদি আরবের রিয়াদ শহরের একটি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ দিন পর মারা যান তিনি। গতকাল রোববার দুপুরে সৌদি থেকে তার পরিবারের কাছে মৃত্যুর খবর জানাল হলে স্বজনদের মাঝে আহাজারি শুরু হয়ে যায়।

নিহত মিলনের প্রতিবেশী রুহুল আমিন ও কেরামত আলীসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, মিলন কয়েক লাখ টাকা দেনা রেখে গেছেন। তবে তিনি খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন। আমরা চাই সরকার যেন মিলনের লাশটি দ্রুত দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেন। আমরা অন্তত দেশের মানুষ যেন তাকে দাফন করতে পারি।

নিহত মিলনের স্ত্রী জানান, আমাদের দেখার মতো আর কেউ রইলো না। আমাদের ৩ জন শিশু ছেলেকে এখন কে দেখবে? আমরা প্রায় ২০ লাখ টাকার দেনা রয়েছে। এই দেনা কিভাবে শোধ করবো। আমার স্বামীর লাশটা দেখতে চাই। কিন্তু সৌদি থেকে টাকা খরচ করে লাশ দেশে আনার সামর্থ্য আমাদের নেই। সরকারের কাছে দাবি আমার স্বামীর লাশটা যেন দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেন।

শেষ বারের মতো ছেলের লাশটি দেখতে একইভাবে সকলের কাছে আকুতি জানিয়েছেন নিহত মিলনের মা ও বাবা।

এ বিষয়ে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মারুফুর রশিদ খান বলেন, আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা ঢাকায় যোগাযোগ করে লাশটি দেশে আনার চেষ্টা করবো। তবে আর্থিক সহযোগিতা করার মতো আমাদের কাছে কিছু নেই। কিন্তু আবেদন করলে স্থানীয়ভাবে সহযোগিতা করবো।

Author

দ্বারা
মাসুদ রেজা ফিরোজী, মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker