মাদারীপুর

পদ্মাসেতুর রেললাইনে দেড় বছরে ২ ডজন মৃত্যু, স্থানীয়দের উদ্বেগ!

মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মাসেতুর রেললাইন চালু হওয়ার পর গত দেড় বছরে রেলে কাটা পড়ে অন্তত ২ ডজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঘুরতে এসে, রেললাইন পার হতে গিয়ে বা ছবি তুলতে গিয়ে অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন। স্থানীয়দের ধারণা, রেললাইনে অবাধ বিচরণের পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটে থাকতে পারে, যা নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

মাদারীপুর জেলার শিবচরে রেল লাইন চালু হওয়ার পর থেকে ওই এলাকায় দেড় বছরে রেলে কাটা পড়ে কমপক্ষে **২ ডজন** মৃত্যু হয়েছে। এসবের মধ্যে কেউ ঘুরতে এসে, কেউ রেল লাইন পার হতে গিয়ে আবার কেউ পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়াও দুর্ঘটনার পর রেলে কাটা পড়া অনেকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি।

তবে স্থানীয়রা মনে করছেন, দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিন বিকেলে শিবচরের পাঁচ্চর এলাকার রেললাইনে মানুষের আড্ডা বসে। বিকেল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই ভিড় থাকে। মূলত, ঘুরতে এসেও রেলে কাটা পড়ে মারা যায় অনেকেই। তবে অনেকেরই ধারণা, রেললাইনে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাও ঘটে থাকতে পারে!

জানা যায়, ঢাকার কমলাপুর থেকে রাজশাহী, খুলনা পর্যন্ত এই রুটে ট্রেন চলাচল করছে। প্রতিদিন সকাল, দুপুর, বিকেল এবং রাতে ট্রেনগুলো যাওয়া-আসার মধ্যে থাকে।

এই এলাকায় প্রথমবারের মতো রেললাইন নির্মাণের সময় থেকে সাধারণ মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এই রেল সড়ক পথটি। বাড়ির আশেপাশে হওয়ার কারণে প্রতিদিন বিকেলে স্থানীয়রা ঘুরতে বের হয় এই রেললাইনে। সন্ধ্যার পর থেকে ভিড় যেন আরও বাড়তেই থাকে। রেল চালুর পরও এই ধারা অব্যাহত রয়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত শিবচরের রেললাইনের পাঁচ্চর সংলগ্ন স্থানে রেলে কাটা পড়ে মারা গেছে এখন পর্যন্ত **৯ জন**। ভাঙ্গা এলাকায় **২ জনের** মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। চলতি বছরের ছয় মাসে কমপক্ষে **১১ জনের** মৃত্যুর খবর জানা যায়। এছাড়া গত ২০২৩ সালের অক্টোবর হতে রেলে কাটা পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা কমপক্ষের **দুই ডজনের মতো**। এদের মধ্যে ঘুরতে এসেই ছবি তুলতে গিয়ে মারা গেছে দশ জনের মতো। এরা সকাল এবং বিকেলের দুর্ঘটনায় মারা গেছে। অন্যদের মরদেহগুলো রেললাইন থেকে রাতে এবং ভোরে উদ্ধার করেছে।

পাঁচ্চর এলাকার রেল সড়কে ঘুরতে আসা স্থানীয় শিক্ষক **মো. জলিল** বলেন, “বিকেল হলেই রেললাইনে মানুষের আড্ডা জমে উঠে। এছাড়া সকাল-দুপুরেও রেললাইন ধরে যুবক-যুবতীদের মাঝে মধ্যে হাঁটতে দেখা যায়। আসলে স্থানীয় ছাড়া অনেকেই ট্রেন চলাচলের সময় জানে না। দূর থেকে ট্রেন দেখে সরতে গিয়েও দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। দেখলে মনে হয় ট্রেন ধীরে আসছে, কিন্তু উলটো। প্রচণ্ড গতিতে ট্রেন চলে এখানে। তাই রেললাইনে যত্রতত্র ঘুরাঘুরি করা ঠিক না।”

শিবচর রেললাইনে দায়িত্বরত রেল পুলিশের উপ-পরিদর্শক **মো. সাফুর আহমেদ** বলেন, “আমরা দুর্ঘটনার পরই ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করি। বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে এখানে। সাধারণ মানুষের অবাধে রেললাইনে বিচরণ করা বন্ধ করতে হবে। এই এলাকার রেললাইনে মানুষের ঘুরাঘুরি বেশি। স্থানীয়দের আরও সচেতন হতে হবে।”

শিবচর স্টেশনের মাস্টার **মো. সেলিম হোসেন** বলেন, “এই লাইনটি খুবই গতিশীল। এখানে ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি গতিতে রেল চলাচল করে। দুর্ঘটনা এড়াতে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত রেললাইনে হাঁটাহাঁটি বন্ধ করতে হবে। মানুষকে সচেতন হতে হবে। রেললাইন ঘুরার জায়গা না।”

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker