মাদারীপুরে একটি শতবর্ষী বট গাছকে ‘শিরক’ আখ্যা দিয়ে কেটে ফেলার ঘটনার বিষয় নিয়ে ১৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে পুরো দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এই গাছটি কেটে ফেলায় এখন স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে গাছটি দেখতে প্রশাসনের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে যায়। গাছটি কাটার সাথে জড়িতরা এখন গাঢাকা দিয়ে আছেন। তবে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান উপজেলা প্রশাসন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের আলম মীরার কান্দি গ্রামের কুমার নদের পাশে স্থানীয় হান্নান হাওলাদার ও সাত্তার হাওলাদারের মালিকানাধীন একটি বাগানে ছিল শত বছরের একটি বটগাছ। গত কয়েক বছর ধরে গাছটিকে ঘিরে স্থানীয়রা নানা কর্মকাণ্ড করতেন। স্থানীয় মুসলিম ও হিন্দু উভয় ধর্মের কিছু মানুষ তাদের মনের বাসনা পূরণ, রোগ বালাই থেকে মুক্তিসহ নানা বিষয় নিয়ে মানত করে আসছেন।
গাছের গোড়াতে মোমবাতি, আগরবাতি জ্বালাতেন সেই সাথে নতুন গামছা, কাপড়, মিষ্টিসহ নানা জিনিসপত্র রেখে আসতেন। সম্প্রতি স্থানীয়রা বৈশাখকে ঘিরে ওই বটগাছের নিচে মেলা ও বাউল গানের আয়োজন করেন। এতে করে চোখে পড়ে যায় স্থানীয় কয়েকজনের মধ্যে। তারা বাধা দিলে আর সেখানে বৈশাখের এই আয়োজন করা হয়নি। তবে মানতের বিষয়টি চলে আসছিল।
পরে স্থানীয় কয়েকজন আলেম ও জনতা মিলে সোমবার (৫ মে) সকালে গাছ কাটা শুরু করেন। সারাদিন ধরে তারা গাছটি কাটেন। গাছটির প্রায় অনেক অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। এখন বটগাছটির গোড়ার দিকে সামান্য অংশ কাটা বাকী রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি এই গাছটির মালিক মাত্র পনের’শ টাকায় গাছটি বিক্রি করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা শারমিন বেগম বলেন, আমি বিয়ের পর প্রায় ৩০ বছর ধরে এই গাছটি দেখে আসছি। কিন্তু সামান্য এই অজুহাত দিয়ে গাছটি কেটে ফেলা ঠিক হয়নি। এই গাছ কাটা বন্ধ করার জন্য অন্য ব্যবস্থা নিতে পারতো। কিন্তু শতবছর বয়সী গাছটি কাটা ঠিক হয়নি।
স্থানীয় মো. মাহবুব হোসেন বলেন, গাছ আমাদের অনেক উপকারে আসে। নদী পার হয়ে এখানে বটের ছায়ায় অনেক মানুষ বিশ্রাম নিতো। পাপ ও শিরকের অজুহাত দিয়ে গাছটি কাটা ঠিক হয়নি। তবে এগুলো বন্ধের জন্য অন্য ব্যবস্থা নিতে পারতেন। মাদারীপুর বন বিভাগের জেলা বন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গির আলম বলেন, ঘটনাটি আমরা জানি। সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ব্যাপারটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তারা যে সিদ্ধান্ত দেন, সেইভাবে পরবর্তী কাজ করা হবে।