কটিয়াদী

শীতের আগমনী বার্তা খেজুর রস! উপজেলায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কোটি টাকা

শীতের তীব্রতা দেখা না দিলেও এরই মধ্যে অনেক গাছি অভাবের কারণে খেজুর রস সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আর শীতের মৌসুম শুরু হতে না হতেই আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস আহরণে কটিয়াদী উপজেলার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে গাছিরা ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় শীতের আগমন উপলক্ষে অগ্রিম খেজুর গাছ থেকে রস পাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে গাছিরা। বছর এ উপজেলা থেকে এক কোটি টাকার ওপরে রস থেকে গুড় উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে। সুস্বাদু এ গুড় নিজ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে সরবরাহ করা হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শীতের সঙ্গে জড়িয়ে আছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস। কটিয়াদী উপজেলার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে খেজুর রস সংগ্রহের জন্য গাছিরা খেজুরগাছ কাটার কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর সপ্তাহ দুইয়েক পর গাছ থেকে রস সংগ্রহের পর্ব শুরু হবে। এখন খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি কটিয়াদী উপজেলার প্রতিটি গ্রামে চোখে পড়ছে। খেজুর রস ও গুড়ের জন্য এ উপজেলার এক সময় খ্যাতি ছিল।

মসুয়া ইউনিয়নের বেতাল গ্রামের গাছি আওয়াল মিয়া জানালেন, বাপ দাদার পেশা এখনও ধরে রেখেছেন। তার ৮০টি খেজুর গাছ চাঁচা ছিঁলার কাজ চলছে। সপ্তাহখানে সময় লাগবে পুরো কাজ শেষ হতে। তারপর গাছে গাছে ঘাট কেটে রাখা হবে। শীতের শিশির যত বাড়বে ঘাট দিয়ে রস গড়িয়ে পড়তে শুরু করবে। তিনি আরও বলেন, তার জমির আইল এ নিজস্ব গাছ রয়েছে ৪০টি। আরও ৪০টি গাছ তিনি বর্গা নিয়েছে। এ শীত মৌসুমে দাম ভাল থাকলে এসব গাছ থেকে প্রায় দুই লাখ টাকার মত গুড় বিক্রি করতে পারবেন।

কটিয়াদী উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, উপজেলায় ১০ হাজারেরও বেশি খেজুর আছে। বছরে এক কোটি টাকার ওপরে গুড় উৎপাদন করা হয়। নিজ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে যায় এ অঞ্চলের সুস্বাদু খেজুর গুড়। শীতকালীণ মৌসুমি এ পেশায় উপজেলার প্রায় সাড়ে ৭ হাজার চাষি সম্পৃক্ত রয়েছে। অতীতে এ উপজেলা শীতকালে রস সংগ্রহের ব্যপকতা আরও বেশি ছিল। ইট ভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করায় বর্তমানে দিন দিন গাছের পরিমাণ কমছে। এখনও শীতকালে শহর থেকে মানুষ দলে দলে ছুটে আসে গ্রামে খেজুর রস খেতে। শীতের পুরো মৌসুমে চলে রস, গুড়, পিঠা, পুলি ও পায়েস খাওয়ার পালা। এছাড়া খেজুর পাতা দিয়ে আর্কষণীয় ও মজবুত পাটি তৈরি হয়।

বোনা গ্রামের আব্দুল করিম জানান, আমরা পেশাগত কারণে প্রায় প্রতি বছরই খেজুরগাছ মালিকদের কাছ থেকে চার মাসের জন্য গাছ বর্গা নিয়ে থাকি। গাছ ভেদে পাঁচ থেকে সাত কেজি করে খেজুরের গুড় দিতে হয় মালিকদের। এবারও প্রায় ২০০টি খেজুর গাছের জন্য মালিকদের সাথে চুক্তি করেছি। বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে না দিয়ে জীবন-জীবিকার জন্য এই পেশা ধরে রেখেছি। খেজুর রস সংগ্রহে অগ্রিম প্রস্তুতি নিচ্ছি।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ মুকশেদুল হক বলেন,সময়ের ব্যবধানে এ অঞ্চলেই খেজুরগাছ অনেকটাই কমছে। গাছিদের খেজুরগাছ কাটার কাজটি শিল্প আর দক্ষতায় ভরা। ডাল কেটে গাছের শুভ্র বুক বের করার মধ্যে রয়েছে কৌশল, রয়েছে ধৈর্য ও অপেক্ষার পালা। এ জন্য শীত মৌসুমে আসার সাথে সাথে দক্ষ গাছিদের কদর বাড়ে। আশা করছি, আবহাওয়া ভাল থাকলে চাষিরা খেজুর গুড় থেকে অধিক লাভবান হবেন।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker