কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে ফসলী দিগন্তে তাকালেই চোখে পড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে সাদা বক। এখন বসন্তকাল না আসলেও সাদা বকের মিলন মেলা দেখে মনে হয় আগাম জানান দিচ্ছে বসন্তকাল।
ফসলের মাঠে ঝাঁকে ঝাঁকে সাদা বক যেন চিরন্তন বাংলার রূপ। এই সময়টাতে খাদ্যের সন্ধানে উপজেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠ, নদী ও জলাশয়ের ধারে ভিড় করে দেশি সাদা বকের দল। তা দেখে মনে হয় এ যেন বকেদের মিলন মেলা। চাষ করার সময় শত শত বক উড়ে এসে লাঙলের ফলার চারপাশে ঘিরে থাকে। মাটির নিচের পোকামাকড় খায়।
সরেজমিনে চরাঞ্চলের মাঠে দেখা যায়, কুয়াসায় ঘেরা আকাশ, কৃষকের জমিতে কাদা মাটির উপরে সাদা বকের অবস্থান, মিলেমিশে যেন একাকার। মনে হয় এটা যেন বকের অভয়াশ্রম।দিনশেষে আবার ফিরে যাই গ্রামের কোন গহিন জঙ্গল কিংবা বাঁশের ঝাড়ে বা উঁচু গাছে।
এক সময় সাদা বকের প্রচুর দেখা মিলত বিল, পুকুর, ডোবায়, ফসলের মাঠে। এরা সাধারণত গাছের মগডালে বাসা বাঁধে। আর এই পাখির প্রধান খাদ্য মাছ ও পোকামাকড়। এ ছাড়া ফসলি জমিতে পোকামাকড় দমনে এদের ভূমিকা অপরিসীম। এই পাখিটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। শুধু গ্রামগঞ্জে ফসলের জমিতে ও নদীর ধারে শীতের মৌসুমে দেখা মেলে এই বকের অতিথি পাখির সাথে।
পৃথিবীতে প্রায় ৫ লাখ প্রজাতির পাখি আছে। শুধু ইউরোপ আর এশিয়ায় আছে প্রায় ৬০০ প্রজাতির পাখি। এসব পাখিদের মধ্যে অনেক প্রজাতিই বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় অন্য দেশে চলে যায়। এর মধ্যে কিছু কিছু পাখি ২২ হাজার মাইল পথ অনায়াসে পাড়ি দিয়ে চলে যায় দূরদেশে।
নদী-নালা আর খাল-বিল নিয়ে আমাদের দেশ। এ দেশ প্রকৃতির লীলাভূমি। আর প্রাকৃতিক এ লীলাভূমির সৌন্দর্য ও রূপলাবণ্য দেখে মানুষ ও প্রাণী সবাই মুগ্ধ। মুগ্ধতার মধুর টানে ছুটে আসে অতিথি পাখি। প্রতি বছর সহস্রাধিক অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে এ দেশ। সাদাবকের সাথে অতিথি পাখির কলরব আর গুঞ্জনে উপজেলার চরাঞ্চলের মাঠ ঘাট যেন প্রকৃতিগত কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালন হচ্ছে। মনে হচ্ছে সাহেবের চর, চর আলগী,চরকাটিহারী মাঠ যেন পাখিদের প্রিয় অবকাশ কেন্দ্র।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা.মো.উজ্জ্বল হোসাইন জানান, সাদা বক প্রকৃতির বন্ধু। ফসলের জমিতে ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফসলের উপকার করে। বকসহ সব উপকারি পাখি ফসলের জমিতে পোকামাকড় খায়। এতে করে মাটি তার পরিপূর্ণ পুষ্টি পায়। ফসল ভালো হয় আর কৃষক হন লাভবান।