মাহফুজ রাজা, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:
আপন ঘরের খবর নে না। অনা’সে দেখতে পাবি কোনখানে সাঁইর বারামখানা।
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদিতে দেশের অন্যতম বৃহত্তম কুড়িখাই মেলা অভিমুখী কাফেলা থেকে এমন উচ্চারণ শোনা যায়।
কুষ্টিয়ার লালন উৎসব-মেলার পর সাধু-সাধক, পীর-ফকিরদের উপস্থিতিতে জমে উঠেছে মেলা। কুড়িখাই গ্রামের এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকায় মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন দোকানপাট বসেছে।৫ম দিনেও মেলার জমজমাট অবস্থা।
প্রায় ৪০০ বছরের ঐতিহ্য কুড়িখাই মেলা শুরু হয়েছে। মেলা উপলক্ষে উৎসবের আমেজে ভাসছে মুমুরদিয়া। সোমবার থেকে হজরত শাহ শামসুদ্দিন বুখারি (রহ.)-এর মাজারের ওরস ঘিরে এই মেলার আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেয় সর্বস্তরের মানুষ।
অনেকটা তীর্থ জ্ঞান করে ওরস উপলক্ষে আয়োজিত কামেল পীরের মাজারের এ বিশাল আঙিনায় সপ্তাহব্যাপী মেলা বসে। দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এ সাত দিনই হাজারও নারী-পুরুষের কাফেলায় উপজেলার সব পথ মিশে যায় কুড়ি খাই মেলায়।
এবার এ মেলায় আসা সাধু-সাধক, পীর-ফকিরের সঙ্গে সমাগম ঘটেছে অনেক চারুকলা শিল্পীরও। তারা পছন্দের সাধু-সাধকদের সামনে কাছে বসিয়ে ক্যানভাসে রঙ তুলির আঁচড় কাটছেন। আঁকছেন অবিকল নান্দনিক পোট্রের্ট।
লাখো দর্শনার্থী, আগন্তুক, সাধক-ফকির ও বৈষ্ণব-বৈষ্ণবীসহ বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের প্রাণের স্পন্দনে মুখরিত হয়ে ওঠেছে এ মেলা।
বসেছে মৃৎ শিল্প, বাঁশ বেত শিল্পের ব্যবহার্য সামগ্রীর পাশাপাশি, বিন্নি খৈ, কদমা (তিলুয়া), বাতাসা, জিলাপি, নানান রকমের মিষ্টির দোকান। রয়েছে নাগর দোলা, যাদু, মোটরসাইকেল খেলার মৃত্যুকূপ, সার্কাস,সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদির আয়োজন।
মেলার বড় আকর্ষণ মাছের হাট। এ ছাড়া সাত দিনজুড়ে বেচাকেনা হয় কাঠের আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী। সব মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার বাণিজ্য হয় এই মেলায়।এই মেলার বিশেষ আকর্ষণ শেষ দুই দিনের বউ মেলা। ওই দুই দিন এলাকার নারীরা মেলায় গিয়ে কেনাকাটা ও আনন্দ করেন। সবকিছুতে থাকে নারীদের প্রাধান্য।
জনশ্রুতি রয়েছে, ১২২৫ সালে হজরত শাহ শামসুদ্দিন বুখারি তিন সহচর শাহ নাছির, শাহ কবীর ও শাহ কলন্দরকে সঙ্গে নিয়ে ইসলাম প্রচারের জন্য কটিয়াদী উপজেলার মুমুরদিয়া ইউনিয়নের কুড়িখাইয়ে আস্তানা স্থাপন করেন। তিনিই এ অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের প্রথম প্রচারক। তাঁর মৃত্যুর পর ভক্তরা মাজার ঘিরেই কুড়িখাই মেলার প্রবর্তন করেন। এই কুড়িখাইয়ে প্রতি বছর মাঘ মাসের শেষ সোমবার সাত দিনব্যাপী ওরস উপলক্ষে মেলা শুরু হয়।
স্থানীয়দের বিশ্বাস, মেলার বোয়াল মাছ খেলে এ বছরের জন্য বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তাই বোয়াল মাছের দিকে সাধারণ মানুষের চোখ থাকে বেশি। তবে শুধু বোয়াল নয়, সব ধরনের বড় মাছই মেলায় পাওয়া যায়। মূলত দাওয়াতি জামাইরাই এসব মাছের মূল ক্রেতা। তাঁরা শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে খুশি করতে বড় মাছ কেনেন।
কুড়িখাই মেলা উদযাপন কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সহকারী কমিশনার (ভূমি) তামারা তাসবিহা জানান, প্রায় ৪০০ বছর ধরে কুড়িখাই মেলাটি হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই মেলা এখন সর্বজনীন উৎসব ও ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে।