মাহফুজ রাজা,কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:
পনির শব্দটা আসতেই দেশ বিদেশের সবাই মন ভিরিয়ে দেয় কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত অষ্টগ্রামে। বিশ্ব বিখ্যাত মুখরোচক খাবার পনির মানেই মেইড ইন অস্ট্রগ্রাম। দিনদিন এর চাহিদা দেশ বিদেশে বেড়েই চলেছে। উপহার হিসেবে এ পনির যাচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাসহ দেশের বাইরেও। মোগল দরবার,বঙ্গভবন,গণভবন সর্বত্রই এর সুনাম সুখ্যাতি ও গ্রহনযোগ্যতা ছিলো এবং আছে।
সেই মোগল শাসনামল থেকে শুরু ঐতিহ্যের এই গল্প অন্তত ৩০০ বছর আগের। সেই সময় কয়েক বছরের মধ্যে গুণ, মান ও বর্ণে এই পনিরের পরিচিতি দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। শুধু তা–ই নয়, জিবে জল আসা এই পনির একসময় ইউরোপের বাজারও দাপিয়ে বেড়ায়।
উপজেলার মূল ভূখণ্ডে দত্তপাড়া নামে একটি বসতি অঞ্চল ছিল। বিস্তৃর্ণ হাওরের গবাদিপশু পালনের অনুকূল পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে দত্তপাড়ার কয়েকজনের হাতে তৈরি হওয়া পনির বাণিজ্যিক সম্ভাবনা জাগায়।
দেশ ও বিশ্ববাজারে দিন দিন চাহিদা বাড়লেও প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিকতার এই সময়ে অষ্টগ্রামের পনিরের প্রসার সংকুচিত হয়ে এসেছে। অষ্টগ্রামের কারিগরদের বড় একটি অংশ এখন ঢাকা, চটগ্রাম ও সিলেটে স্থায়ী বসতি করে পনির ব্যবসা খুলে বসেছে। তবে বড় একটি অংশ চলে গেলেও অষ্টগ্রামে পনির তৈরি বন্ধ হয়ে যায়নি। বিলীন হয়ে যায়নি পেশার পরিবারগুলোও। অসংখ্য প্রতিকূলতার মধ্যে এখনো বেশ কয়েকটি পরিবার সম্পূর্ণ হাতে তৈরি করে পনিরের স্বাদ ও মান ধরে রেখেছে। দেশ-বিদেশে সুখ্যাতি অর্জন করা অষ্টগ্রামের পনির এখন হয়ে উঠেছে গোটা কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যের অন্যতম স্মারক।
কারবালাহাটি গ্রামের নিশানসহ এই পেশার অনেকে জানালেন, হাওরের বুকচিরে তৈরি হওয়া অষ্টগ্রাম, মিঠামইন ও ইটনা সড়ক এখন দেশবাসীর বিশেষ আগ্রহের জায়গা। প্রতিবছর, বিশেষ করে বর্ষায় সারা দেশ থেকে লাখো পর্যটক এখন ভিড় জমান হাওরের এই সড়কে। ফেরার সময় অনেকে হাতে করে নিয়ে যান পনির। এতে পনিরের চাহিদা বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। চাহিদার কারণে প্রতিবছর নতুন করে কিছু মানুষ এই পেশায় যুক্ত হচ্ছেন।
জানা যায়,এখাকার গরু ও মহিষ বছরের বেশির ভাগ সময় সতেজ ঘাস খাওয়ার সুযোগ পায়। সেই দুধে ক্রিম থাকে প্রচুর। ফলে পনির তৈরির পর সুন্দর রং আসে এবং স্বাদেও ভিন্নতা থাকে।
এ পেশায় জড়িত মো. রফিক উপজেলা সদরের আলমদীঘির পাড় এলাকার বাসিন্দা তিনি জানান,এক কেজি পনির তৈরি করতে ১০ কেজি দুধের প্রয়োজন হয়। হাঁড়িতে দুধ গরম করে ছানা করা এবং ছেঁকে পনির তৈরি করতে হয়। উৎপাদন খরচ ৭০০ টাকার কম নয়। বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায়। অনলাইনে অর্ডার আসছে সারা দেশ থেকে। বিদেশের চাহিদাও মেটাতে হয়।