মাহফুজ হাসান,কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:
সর্বনাশা ব্রহ্মপুত্রের মরণ সমরে অবশেষে জিতে গেলো সাহেবের চরবাসী। ব্রহ্মপুত্রের কালো থাবা যে কতো নির্মম হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে সাহেবেরচর বাসী।
জানা যায়,ব্রহ্মপুত্রের উৎপত্তি হিমালয় পর্বতমালার কৈলাস শৃঙ্গের নিকট জিমা ইয়ংজং হিমবাহে, যা তিব্বতের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। জাঙপো নামে তিব্বতে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে এটি ভারতের অরুণাচল প্রদেশে প্রবেশ করে যখন এর নাম হয়ে যায় শিয়াং বা সিয়ং। তারপর আসামের উপর দিয়ে দিহাং নামে বয়ে যাবার সময় এতে দিবং এবং লোহিত নামে আরো দুটি বড় নদী যোগ দেয় এবং তখন সমতলে এসে চওড়া হয়ে এর নাম হয় ব্রহ্মপুত্র। ব্রহ্মপুত্র হিমালয় পর্বতের কৈলাস শৃঙ্গের নিকটে মানস সরোবর থেকে উৎপন্ন হয়ে তিব্বত ও আসামের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের কাছে ব্রহ্মপুত্র দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বাঁক নিয়ে জামালপুর ও ময়মনসিংহ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের পাশ ঘেঁষে ভৈরববাজারের দক্ষিণে মেঘনায় পড়েছে। এ নদের জল যেন মানুষের কান্নার অশ্রু, কতো বসত ভিটে, আবাদী জমি, তার বিধ্বস্ত থাবায় যে বিলিন করেছে যার কোন ইয়ত্তা নেই। এই সেদিনের কথা ২০২০ সাল পর্যন্তও কিশোর গঞ্জের হোসেনপুরের সাহেবের চর গ্রামে মরণ সমরে মেতে উঠেছিল ব্রম্মপুত্র, কেঁড়ে নিয়েছিল মানুষের চোখের ঘুম। মসজিদ,মাদ্রাসা, স্কুলসহ হাজার হাজার বিঘা আবাদি ভূমি শতশত বসতঘর হাসতে হাসতে উদরস্থ করেছিল। বাতাসের মর্মর ধ্বণিতে শুধু মানুষের কান্নায় ভেসে আসতো।
সারাদিন কাজ শেষে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত শরিল মন নিয়ে যখন ঘুমের ঘরে প্রবেশ করতো গ্রামবাসী চোখের তাঁরা এক হতে না হতেই হঠাৎ চমকে উঠতো করুণ আর্তনাদে, “লয়া গেলোরে লয়া গেলো গাংগে সব লয়া গেলো।
কে কোথায় আছ বাঁচাও আমার জিনিসপত্র ঘর বাড়ি।
অবশেষে কষ্টের সমাপ্তি হলো উদিত হলো নবসূর্য সাহেবের চরের আকাশে।প্রয়াত মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ডিও লেটারের প্রেক্ষিতে পাশ হলো ৫০ কোটি টাকার বাম তীরের প্রতিরক্ষা বাঁধ। তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দীনসহ কিছু সুন্দর মনের মানুষের চেষ্টায় শেষ রক্ষা হলো।
সিদলা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দীন জানান,খুব কাছ থেকে দেখেছি আমার সাহেবের চর গ্রামের মানুষের করুণ ইতিহাস,ব্রহ্মপুত্রের ধ্বংসাত্বক কর্মকাণ্ড।শত চেষ্টার ফলস্বরূপ অবশেষে আল্লাহর অশেষ রহমতে বামতীরের প্রতিরক্ষা বাঁধ সম্পন্ন হয়েছে।