কিশোরগঞ্জ

বাঁচতে চায় শওকত: টাকার অভাবে মরছে ধুকে ধুকে

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার সাহেবের চর গ্রামের পঞ্চাশ বছর বয়সী দৈনিক শ্রমিক শওকত আলী দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুময় যন্ত্রণায় ঘরে থেকে কাতরাচ্ছেন। টাকার অভাবে না পারছেন নিয়মিত খেতে,না পারছেন চিকিৎসা চালাতে।

শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) সরেজমিনে শওকতের বাড়ী গিয়ে দেখা যায়, চৌকি থেকে পা ঝুলিয়ে বসে বসে কাঁদছেন আর অসুস্থতার অস্থির যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তার স্ত্রী এবং ভাতিজা ও ভাতিজা বধুদের ভাষ্য অনুযায়ী এভাবেই নাকি রাত-দিন পা ঝুলিয়ে রেখে চিৎকার করেন, দু-মাস ধরে ঘুম নেই, বিছানায় না শুয়ে এভাবেই বসে থাকেন। তার সামনে আবার বাঁশের খুটি গেড়ে আড় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, না হয় বসে থাকতে থাকতে ভারসাম্য রাখতে না পেরে চৌকি থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। অল্প খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করতেছেন স্ত্রী ও ছোট ছোট দুটি সন্তান নিয়ে।

ঘরে খাবার নেই, চিকিৎসার টাকা নেই, থাকবেই বা কেমন করে দৈনিক খেটে খাওয়া মানুষ শওকত সংসারের একমাত্র উপার্জন সক্ষম ব্যক্তি তিনিই ছিলেন। সয়সম্বল কিছু নেই, তার বাবা আব্দুল এর রেখে যাওয়া এক শতাংশ মাটিতেই ছোট একটি ঘরে থাকেন।

শওকতের স্ত্রী নাছিমা বেগম জানান, গত ৩/৪ বছর থেকেই শওকত অসুস্থ, এর আগে তিনি পরের জমিতে দৈনিক শ্রমিকের কাজ করতেন মোটামুটি বেশ ভালো আনন্দেই চলতো তার সংসার কিন্তু হঠাৎ একদিন অসুস্থ হয়ে পড়েন, যেহেতু দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ সেহেতু সঞ্চয় বলতে কিছু নেই, যাইহোক স্থানীয় যুবকদের সহযোগিতায় টাকা উঠিয়ে ডাক্তারের কাছে পাঠানো হয়, আলসার ধরা পড়ে। স্থানীয়দের মারফত চিকিৎসা ঔষধ কোনোমতে ব্যবস্তা হয় কিন্তু কাজে যাওয়ার মতো শারিরীক সক্ষমতা হয়নি, তারা আরও বলেন সংসারের এমন কঠিনতম দূরাবস্থার কথা তৎকালীন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন এর কানে যায়, স্থানীয় যুবকদের মাধ্যমে। চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন খুঁজ খবর নিয়ে পরিবারটির খাবার কষ্ট লাঘব করতে শওকতের স্ত্রী নাছিমার নামে একটি দুস্থ মাতা (বিনামূল্যে মাসে ৩০ কেজি চালের কার্ড) ও শওকতের নামে একটি ফেয়ার প্রাইজ কার্ড (১০ টাকা কেজি মূল্যে ৩০ কেজি চাল) কিন্তু বর্তমানে কোন কার্ডেই তাদের নামে নেই। আগের কার্ড দুটি অদৃশ্য কারণে বাতিল করা হয়েছে। অথচ আগের তুলনায় খুব বেশি নাজেহাল পরিবারটি। হঠাৎ পায়ের একটি আঙ্গুলের মাথা ফুটা হয়ে যায়, যন্ত্রণা করতে থাকে কিশোরগঞ্জ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে চেক-আপ করলে জানতে পারে আঙুলে পচন ধরেছে এবং পায়ের একটি আঙুলের অগ্রভাগ কেটে ফেলে দেয় তাতে কোন লাভ হয়নি। কিছুদিন পরে আবার ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার জানায় হাটু পর্যন্ত কেটে ফেললেও লাভ নেই রক্তের সাথে বাস করতেছে ক্যান্সার সেল। ঢাকা নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করলে হয়তো এহেন দুরারোগ্য থেকে মুক্তি মিলতে পারে।

কিন্তু হায়! নিয়তির কি নির্মম পরিহাস চিকিৎসা চালানো তো দূরের কথা মুখেই খাবার জোটেনা পরিবারটির।

মূমূর্ষ রোগি ঘরে রেখে সুযোগ পেলে অন্যের জমিতে মরিচ তোলার কাজ করে যা পায় তা দিয়ে খাবার জুটে নাছিমা-শওকতের ঘরে।শুক্র বার কার্ড বিষয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার কামরুজ্জামান কাঞ্চনের সাথে কথা বলতে মুঠোফোনে কল দিলে রিসিব হয়নি। মতামত নেয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু এর আগে এ প্রতিবেদককে বলছিলেন কার্ডের মেয়াদ শেষ তাই কার্ড জমা নেওয়া হয়েছে।

স্বজনরা বলছেন, শওকতের চিকিৎসার জন্য লাখ লাখ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু চিকিৎসার ব্যয় বহন করার মতো আর্থিক অবস্থা তার পরিবারের নেই।

শওকতের স্ত্রী নাছিমা বলেন, সারা দিন রাইত কান্দে নড়াচড়া করতে পারেনা ‘মাঝে মাঝে ডর লাগে উনার কিছু অইয়া গেলে আমার ছোট ছেরাছেরিরে দেখবো কেলা? আমি কি করাম বুঝদাছিনা। আমার পক্ষে এত টাকার ব্যবস্থা করা সম্ভব না। সমাজসেবা অধিদফতর থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা চিকিৎসা বাবদ অনুদান দেয় হুনছি কিন্তু এইডা তো মেলা সময়ের ব্যাপার।আবার কেউ কেউ কয় এইতাতে নাহি তদবির লাগে, কই পায়াম মানুষ? আমরার তো এইরম কেউ নাই। তবু কাগজ পত্র রেডি করতাছি। উনির অবস্থা দিন দিন খুবই খারাপের দিকে যাইতাছে।

পাড়া-প্রতিবেশী যোবকরা বলেন, ‘আমরা সবাই চেষ্টা করে হয়তো কিছু টাকা সংগ্রহ করতে পারবো। কিন্তু তাতে ঢাকা নিয়ে চিকিৎসা করানোর মত হবে না। তাই হৃদয়বান ধনী ব্যক্তিদের সামর্থ্যানুযায়ী সাহায্যের আবেদন জানাই।

সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন বলেন, শওকতের অসুস্থতা ও দূরাবস্থা দেখে দুটি কার্ড পরিবারের জন্য ব্যবস্থা করছিলাম। আমার জানামতে শওকতই প্রকৃত সরকারি পৃষ্ঠ-পোষকতা সর্ব্রাগে পাওয়ার অধিকার রাখে। তার অবস্থার উন্নতি হওয়ার আগ পর্যন্ত পূণরায় কার্ডের মেয়াদ বাড়ালে ক্ষতির কিছু না। আমি চেয়ারম্যান এখন নেই তবুও অসহায়দের পাশে ছিলাম, আছি থাকবো ইনশাআল্লাহ। শওকতের জন্য ব্যক্তিগত ভাবেও কিছু করার আশ্বাস দেন তিনি।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker