কিশোরগঞ্জবিবিধ

আপন-পর চেনার মেশিনের নাম বিপদ

“রঙের এই দুনিয়ায় কেউ কারো নয়,
স্বার্থের টানে সবাই কাছে আসে
স্বার্থ ফুরালে দূরে সরে রয়।”

কবি হাসান আল মাহদী তার পঙক্তি ছুরলেন অধম সরল মানুষদের উদ্দেশ্যে, কারো উপর কোনো কিছু আশা না করে নিজের মাঝে শক্তি তৈরি করো কিম্বা নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করো যেকোনো বিপদে অন্তত মনোবল হারাবে না,এটায় বাস্তবতা। কথায় কথায় মনে হলো আরেকটি চয়ন –

“গ্রন্থগত বিদ্যা আর পর হস্তেধন,
নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন”

এখানেতু শুধু বিদ্যা আর ধনকে উপমা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর যেকোনো জিনিস পরের কাছে থাকলে নিজের দাবী করে বিপদে নিরাশ হওয়া নতুন কিছু নয়! এহেন কর্ম বোকামিও বটে!

যেমনঃ- দেশের প্রচলিত বাস্তবতা নিরিখে স্যোসাল মিডিয়া বা বাস্তবে আমরা কারো প্রশংসা এতোটাই করতে থাকি যে, লোকের কাছে হাসির পাত্র হই, অনেকে আবার ভাবতে থাকে তেল মারতে মারতে বুঝি নিজের যুগ্যতায় হারিয়ে ফেলেছি! টাকার কিনা দাস হয়ে গেছি।তবুও লোকের মন্দ পুষ্প চন্দন ভেবে সৎ ভাবে সঙ্গ দিতে থাকি। আর মনে মনে ভাবনা থাকতেই পারে আমার আপদে-বিপদে বুঝি অন্তত পরামর্শটুকু পাবো।কিন্তু যদি দেখা যায় বিপদে বিধ্বস্ত হওয়ার পরেও শান্তনা টুকুও দিতে আসলনা তখন সত্যিসত্যিই মনে হয় পৃথিবীতে মানবতা বলতে কিছু নেই। সবার ক্ষেত্রে আবার এমনটি হয়না। সত্যিকার অর্থেই যারা ভালো মানুষ তারা স্বীয় কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত সঙ্গ দিয়ে থাকে।

প্রকৃতপক্ষে কঠিন বিপদে, যাদের জন্য সর্বস্ব উৎসর্গ করা সেই চাচারা, জীবনের মূল্যবান সময়টুকু ব্যয় করা বন্ধু-বান্ধব, প্রশংসা করতে করতে মুখে ফেনা তুলা সেই নেতা, কিম্বা জীবনে যাদের জন্য কিছু করেছেন সেই মানুষগুলো কেউ কাজে আসেনা।

কাজে আসে একমাত্র স্রষ্টা মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহ চুবাহানাহু তায়ালা। আল্লাহর হুকুমে তখন সত্যের সঙ্গ দেয় সহজ সরল মনের মানুষগুলো। অথচ আপনার বিপদে এমন সব লোকদের পাশে পাবেন, যাদের জন্য জীবনে কিছু করতে সুযোগ পাননি।

তাই জীবনে চলার পথে থাকুক হাজার প্রিয়জন কিন্তু জীবনের অংশ ভাবা যাবেনা। জীবন শুধুমাত্র নিজস্ব সম্পদ।

বাউল সুকুমার রায়ের গাওয়া গান বাস্তবতার সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায় “আপন মানুষ চিনা বড় দায়”।

পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন থেকে কঠিনতম কাজটাই হলো আপন মানুষ চিনা। আপন মানুষ চিনার একমাত্র যন্ত্রই হচ্ছে বিপদ।বিপদ নামক যন্ত্র দ্বারায় স্বচ্ছ ও নির্ভুল মাপা যায় কে আপন কে পর।

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের সাহেবের চর গ্রামের মানবিক পুরুষ আবুল কালাম (কালা মানিক) প্রতিবেদকের সাথে ঐক্যমত পোষন করে বলেন, আমরা চাই না আমাদের কোনো বিপদ আসুক। আমরা সকলে ভালো থাকতে চাই, সুস্থ থাকতে চাই; আমরা অশান্তি চাই না, শান্তিতে ও সুখে থাকতে চাই, মনের আনন্দে থাকতে চাই। কিন্তু যদি বিপদ এসে যায় হঠাৎ করেই, সেটা আমাদের মোটেও প্রত্যাশীত নয়। বিপদ থেকে রক্ষার জন্যে আমরা চেষ্টা করি। তখন অন্যের সাহায্যের আমাদের দরকার হয়। আমরা তখন আশা করি, আমাদের আপনজন ছুটে আসুক বিপদের মুহূর্তগুলোতে এবং আমাদের পাশে থেকে আমাদের সাহায্য করুক। কিন্তু যদি এমন হয় যে, যাদের প্রতি আমাদের আশা, তারাই যদি আমাদের বিপদের দিনে না আসে তখন আমাদের কেমন লাগবে! নিশ্চয় দুঃখ হবে, মনে অনেক কষ্ট হবে। বিপদের দিনে কিছু বন্ধু, আত্মীয়স্বজন অথবা প্রতিবেশী স্বার্থপরের মতো আচরণ করে, যদিও আমরা এটা প্রত্যাশা করি না তবুও, এটাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে হয়। কিছু মানুষ এমনই হয়ে থাকে।

হোসেনপুর উপজেলার সহকারী পরিচালক ও শিক্ষক, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কোরআন শিক্ষা, ক্বারী আব্দুস ছাত্তার বলেন, বস্তুত পার্থিব জীবনের পরতে পরতে রয়েছে সুখ-দুঃখ ও হাসি-কান্না। আবার এ থেকে উত্তরণের সহজ এবং কার্যকর পথ ও পন্থাও আল্লাহ বলে দিয়েছেন। বান্দার জীবন যেন বিপদের কারণে থমকে না দাঁড়ায়। বিপদের ঘোর অমানিশায়ও যেন সমাধানের পথ খুঁজে পায়। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী পড়লে এর প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়। সাহাবি হজরত হুযাইফা (রা) বলেন, ‘যখন কোনো কঠিন বিষয় সামনে আসত হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।’ -সুনানে আবু দাউদ: ১৩১৯

এভাবে মেহেরবান আল্লাহ বান্দার জন্য মানুষের জীবন সহজ করে দিয়েছেন। বলেছেন, বিপদে যদি পড়ো, নামাজে দাঁড়াও আর আল্লাহর সাহায্য প্রত্যক্ষ করো। সাহাবাদের জীবন-কর্ম এমনই ছিলো, যেকোনো প্রয়োজন, বিপদ-আপদ, অসুখ-বিসুখ ও বালা-মুসিবতে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।

হোসেনপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক আশরাফ আহমেদ (সোহাগ) বলেন, দোলা মুখার্জির বানীতে বলেছিলেন “যাকে তুমি বন্ধু বলে পরিচয় দাও সকলের সামনে,
সেকি বন্ধুত্বের মান রাখে তুমার বিপদের দিনে?”

তিনি আরো বলেন, ” বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে পারে যেজন, সেই কেবল প্রিয়জন”

বিপদের দিনে যাদের পাশে পাওয়া যায় তাঁরাই প্রকৃত আপনজন। বিপদে কাছে না পেলে রক্তের সম্পর্কও ভিত্তিহীন।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker