কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে তীব্র বিশুদ্ধ পানির সংকট; ঘনঘন লোডশেডিং এ জনজীবন বিপন্ন

মাঠ ফেটে চৌচির,
গরমে অস্থির,
শান্তি সুখ ঝিরঝির,
বৃষ্টির অভাবে।
তৃষ্ণায় পানি চাই,
নলকূপেও পানি নাই,
গোসল খাওয়া ভেস্তে যায়,
চৈত্রের স্বভাবে।।

কবিতার এ পঙক্তি গুলি আজিকার লগনে বাস্তবে রুপান্তরিত হয়েছে, ব্যস্ততায় কিম্বা অভাবে খাবারের সংকীর্ণতায় এই পানিটায় হয় শেষ ভরসা বেঁচে থাকার জন্য। অথচ এই পানির তীব্র সংকট কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে।

চৈত্রের প্রচণ্ড খরতাপ ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বেশির ভাগ নলকূপেই পানি উঠছে না। যেগুলিতে উঠছে তাতে এক গ্লাস পানি ভরতে সময় এবং শারিরিক শক্তি ব্যয় হয় বর্ষাকালে এক ড্রামের সমান। আবার কিছু নলকূপ এমন ভাবে পড়ে আছে দেখলে মনে হয় যুগযুগ ধরে পানির সাথে কোনো সম্পর্কই নাই।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে চরমে উঠেছে জনজীবন উপজেলার কোথাও কোথাও খাবার পানি সংগ্রহের জন্য এক বাড়ী থেকে অন্য বাড়ীতে মহিলাদের দীর্ঘ সারিতে অবস্থান করতে হয়।

বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জের সাধারণ মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। তাছাড়া, সাব-মার্সেবল পাম্পসহ অন্যান্য বৈদ্যুতিক মোটরও জ্বলে যাওয়ায় সেচ সংশ্লিষ্ট কৃষক ও সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

উপজেলার সাহেবের চর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক (সূতি মিয়া) জানান, পানির নিম্নগামী চাপে নলকূপে তু পানি উঠছেই না, যাও একটা বৈদ্যুতিক মোটর ছিল পারিবারিক চাহিদা মেঠানোর জন্য তাও হঠাৎ জ্বলে গেছে, এখন খাবার পানি সংগ্রহ যেন সোনার হরিণ।

একই গ্রামের মহসিন আহমেদ হক মিয়া (প্রবাস ফেরত) আমাদের জানান, একদিকে নলকূপে পানি নাই অন্যদিকে পল্লী বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং বৈদ্যুতিক মোটরও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। লোডশেডিং এর কারণে পবিত্র এ মাহে রমজানে রোজাদারসহ শিশু কিশোর, বৃদ্ধাদের চরম কষ্ট হচ্ছে। ছাত্র -ছাত্রীদের পড়াশোনাতেও নেমে আসছে বড় ট্র্যাজেডি।বিদ্যুতের সুসেবা নিশ্চিত করার জন্য কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

উপজেলার চরকাটিহারী গ্রামের সামিম আহমেদ, প্রবাস ফেরত খামারি রনি মিয়া, গড়মাছুয়ার সাব্বির আহমেদ (শিক্ষার্থী), হারেঞ্জা গ্রামের আর এ সাইফুল আলম (চাকুরীজীবি), টান সিদলার বিল্লাল হোসেন বিপ্লব পানির তীব্র সংকট ও বিদুৎ এর বেহাল দশার জন্য মনোক্ষুণ্ণতা প্রকাশ করেন।

সাংবাদিক সাগর মিয়া এবং অধ্যাপক ও সাংবাদিক আশরাফ আহমেদ উপজেলায় পল্লী বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করার আশু সমাধান কামনা করেন।

জানা যায়, গত কয়েক দিনে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রায় অর্ধ-শতাধিক শিশু-বৃদ্ধ ডায়রিয়া ও পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের মতে,মানুষের এ পয়োবর্জ্য এবং ওই এলাকার বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা মিলে জলাশয়ের পানি দূষিত হয়ে পড়ে। লোকজন তখন যদি এসব জলাশয়ের পানি বিশুদ্ধ না করে পান করে, খাবারের কাজে ব্যবহার কিংবা থালাবাসন ধোয়া, কাপড় কাচা ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করে, তখন ডায়রিয়া বা পানিবাহিত রোগবালাই হতে পারে। পাতাল থেকে পানি উঠানোর ব্যর্থতায় লোকজন জলাশয়ের পানি ব্যবহার করাই পানিবাহিত বা ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।

স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় সরকারি,বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে প্রায় ২০ হাজার নলকূপ থাকলেও গভীর নলকূপ ছাড়া বেশির ভাগ নলকূপেই পানি উঠছে না। এতে কেউ কেউ বিভিন্ন উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করে ফিটকিরি ও পানি শোধন ট্যাবলেট দিয়ে পরিবারের খাবার পানির চাহিদা পূরণ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর চৈত্র মাসে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপ দিয়ে পানি উঠলেও অগভীর ও সাধারণ নলকূপগুলো থেকে পানি উঠছে না। তাই চলমান পরিস্থিতিতে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে বৈদ্যুতিক মোটরগুলো নিচে স্থাপনের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker