কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের জলাশয়ের ধারে ঝোপঝাড়ে বা রাস্তার ধারে, একটু উঁচু জায়গায় অযত্নে এই আগাছা বেড়ে ওঠে “হাতিশুঁড়”। এক প্রকার এক বর্ষজীবী আগাছা জাতীয় উদ্ভিদ। একে হাতিশুঁড়ি, হাতিশুণ্ডি, হস্তীশুণ্ডী, শ্রীহস্তিনী, মহাশুণ্ডী ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম “Heliotropium indicum”, এবং ইংরেজি নাম Indian heliotrope, Indian Turnsole।
উপজেলার প্রতিটি গ্রামেই এর দেখা মিলে, ১৫ থেকে ৫০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর কাণ্ড রোমযুক্ত, যাতে একান্তর বিন্যস্ত ডিম্বাকার পাতা থাকে। পাতা গাঢ় সবুজ। পত্রপিঠ অমসৃণ, খসখসে। কিনারা ঢেউ খেলানো। উটকো গন্ধও পাওয়া যায়। কাণ্ডের শীর্ষে লম্বা ও বাঁকানো পুষ্পদণ্ড জুড়ে ছোট ছোট সাদা ফুল ফোটে। বাঁকা পুষ্পদন্ড দেখতে হাতির শুঁড়ের মত বলেই এর নাম হাতিশুঁড়। ফুলের রঙ সাধারণত সাদা, তবে হালকা বেগুনিও হতে পারে। আকৃতি অনেকটা মাইক এর মতো। এর পাপড়ি একটি, তাতে ৫টি খাঁজ থাকে; অনেকটা কলমি ফুলের মতো। সারা বছর ফুল ফোটে তবে বর্ষাকালে বেশি ফুটতে দেখা যায়। গর্ভাশয় চারখন্ডিত। ফল ও বীজ ক্ষুদ্র। এই গাছে নানারকম জৈব উপাদান পাওয়া গেছে। যেমন ইনডিসিন, পাইরোলিজিডিন অ্যালকালয়েড্স, হেলিওট্রিন ইত্যাদি। শিকড়ে আছে এসট্রাডিওল।
জানা যায়, চরক সংহিতাসহ অন্যান্য প্রাচীন গ্রন্থে এর উল্লেখ আছে। এই গাছটি বিভিন্ন রোগে ব্যবহৃত হয়।
- ফোলায়- পাতা বেটে অল্প গরম করে ফোলায় লাগালে, ফোলা কমে যায়।
- আঘাতজনিত ফোলায়- পাতা বেটে অল্প গরম করে লাগালে, ফোলা এবং ব্যথা কমে যায়।
- রিউম্যাটিক বাতে- রেড়ির তেলের সঙ্গে পাতার রস মিশিয়ে পাক করে গাঁটে লাগাতে হয়।
- বিষাক্ত পোকার কামড়ে- পাতার রস লাগালে জ্বালা এবং ফোলা কমে যায়।
- টাইফয়েড জ্বরে- পাতার রস গরম করে, ছেঁকে নিয়ে পানি মিশিয়ে খাওয়ানোর নিয়ম আছে।
- ফ্যারিঞ্জাইটিস রোগে- পাতার রস অল্প গরম পানিতে মিশিয়ে গার্গল করা।
- একজিমা- একজিমা স্থানে পাতার রস লাগানো হয়।
- দাঁতের মাড়ি ফোলায় এই গাছের ব্যবহার রয়েছে।
- দেহে ছত্রাকজনিত সংক্রমণে লাল চাকা চাকা দাগ নিরাময়ে এর পাতার রস ব্যবহার করা হয়।
- ৯ জ্বর ও কাশিতে এ গাছের মূল পানির সঙ্গে ফুটিয়ে ক্বাথও তৈরি করে ব্যবহার করা হয়।
- কাটা-ছেঁড়া ও আঘাত প্রশমনে এই গাছের ব্যবহার রয়েছে আরো নানাবিধ গুনাগুন বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ আছে।
গাছটি বোরাজিনেসি পরিবারভুক্ত। বিজ্ঞানীরা এই গাছটির ভেষজগুণ নিয়ে নিরন্তর গবেষণা করে চলেছেন। তাদের আশা- অদূর ভবিষ্যতে এই গাছ থেকে নানা রোগের ওষুধ তৈরি হবে।
হাতিশুঁড়ে ‘পাইরোলিজিডিন অ্যালকালয়েড’ (pyrrolizidine alkaloids) বিষ থাকে। এই বিষের প্রভাবে মানবদেহে টিউমার সৃষ্টি হতে পারে।