কিশোরগঞ্জ

শীতে গরীবের কান্না দেখার মানুষ নাই

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে প্রকৃতির নৈসর্গিক রূপ; অন্যদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ায় উষ্ণ পোশাক ও আশ্রয়ের অভাবে অসহায়দের চরম দুর্ভোগ

ভোরে কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকে পথঘাট ও ফসলের মাঠ। রাতভর বৃষ্টির মতো টপটপ করে পড়ে কুয়াসার পানি। সকাল সকাল সূয্যি মামার দর্শন পেয়েই কাঠফাটা রোদের ঝলকানি। এ যেন বাংলার ভিন্ন এক নৈসর্গিক প্রকৃতি। প্রকৃতিগত সৌন্দর্যের পশরা সবার মঙ্গল বয়ে আনলেও গরীবদের জন্য শীত মানে জীবন যন্ত্রণার আরেক নাম

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) অগ্রহায়ণের শেষার্ধ; দু-তিন দিন পরেই শীত ঋতুর আবির্ভাব ঘটবে। শীত যতো শক্তিশালী হবে গরীবরা হতে থাকে দূর্বল। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় এরই মধ্যেই প্রকৃতিতে বইতে শুরু করেছে হিম বাতাস। শিশির ভেজা সবুজ ঘাসের ওপর ভোরের সূর্যের আলো হালকা লালচে রঙয়ের ঝিলিক দেখা গেছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় ঘাসের মাথায় যেন মুক্তোর মতো শিশির কণা জমে আছে।

শীতকে ঘিরে সক্রিয় হচ্ছে গ্রাম অঞ্চলের পিঠাপুলির দোকানগুলো। অন্যদিকে শীতের আগমনী বার্তা লক্ষ্য করেই দুশ্চিন্তায় ঘিরে ধরেছে অসহায় গরিব মানুষদের। শীত বাড়ার সাথে সাথে গরিব মানুষের কষ্টও বাড়ে কারণ তাদের শীতের পোশাক, উষ্ণ আশ্রয় এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তীব্র শীত ও কনকনে ঠান্ডা হাওয়া তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে, নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী ও ভাসমান মানুষজন সবচেয়ে বেশি কষ্ট পান শীতে। ঠান্ডাজনিত রোগব্যাধি যেমন ডায়রিয়া, জ্বর, হাঁচি, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের ভোগান্তি আরও বাড়তেই থাকে। ইতিমধ্যেই ঠান্ডা জনিত রোগ দেখা দিচ্ছে প্রাণীকুলে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন হত-দরিদ্র মানুষ জানান, শীতে ঠিকমতো কাজে যেতে পারেনা, সামর্থ্য নেই পরিবার পরিজনের শীতের পোষাক কিনে দিতে, ঘরে লেপ, কম্বলও নেই, দাতারা তাদের চোখে দেখেনা বলে আক্ষেপের সুরে বলেন। দুনিয়ার সবাই তেলের মাথায় তেল দেয়।

জিনারী ইউনিয়ন সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান ও মানবিক মানুষ আমিনুল হক মাখন মৃধা দেশ ও প্রবাসের মানবিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রকৃতিতে শীত আসে আবার চলেও যায় কিন্তু অসহায় মানুষের কষ্টের শেষ থাকেনা তাই প্রত্যেকে যেন অন্তত আশ পাশের মানুষগুলির সাথে একটু সুখ শেয়ার করে, এতে করে সমাজের বিত্তবানদের নৈতিক চরিত্র আরো বিকশিত হবে, রচিত হবে সুদৃঢ় সম্প্রীতি।

হোসেনপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক ও মানবিক মানুষ এবিএম সিদ্দিক চঞ্চল বলেন, ঘাসের ওপর শিশির কণা রৌদ্রে ঝলমল করে, হাঁটাচলা করলে কুয়াসার পানিতে পা ভিজে যায়। এতে আবার মনে করিয়ে দেয় সমাজের জীর্ণ মানুষগুলির কষ্টের কথা। বিত্তবান ও দানবীর মানুষদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি, যেন প্রত্যেকেই যার যার অবস্থান থেকে প্রতিবেশীদের প্রতি একটু যত্নশীল হয়।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker