কিশোরগঞ্জ

কলামিস্ট মামুনের পরিশ্রমে মাথা গোঁজার ঠাঁই হলো অসহায় খোকনের

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের চৌদার গ্রামের অসহায় ও কর্মহীন খোকন মিয়া দীর্ঘদিনের মানবেতর জীবন থেকে মুক্তি পেয়েছেন। সমাজসেবক এসএম মিজানুর রহমান মামুনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগে তিনি এখন একটি নতুন ঘরের মালিক। প্রায় চার মাসের প্রচেষ্টায় সম্পন্ন হওয়া এই ঘরটি দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে, যা ভালোবাসা ও সহানুভূতির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে একটি ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছিলেন হোসেনপুর উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের চৌদার গ্রামের অসহায় ও কর্মহীন **খোকন মিয়া**। কাঠ, টিন ও পলিথিনে তৈরি সেই অস্থায়ী ঘরটি ছিল তার একমাত্র আশ্রয়। বর্ষার সময় ছাউনি দিয়ে বৃষ্টির পানি আটকাতে হতো, আর শীতে ঘরের ফাঁকফোকর দিয়ে ঠান্ডা ঢুকতো অবলীলায়। সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে অসহায় এই মানুষটি দিনের পর দিন জীবনের কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছিলেন।

তবে সেই লড়াইয়ের চিত্র বদলে দেয় একজন মানবিক মানুষের সাহসী উদ্যোগ। উপজেলার পিতলগঞ্জ এলাকার তরুণ সমাজসেবক **এসএম মিজানুর রহমান মামুন** এগিয়ে আসেন খোকনের পাশে। নিজের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মানুষের সহানুভূতি আর ভালোবাসাকে পুঁজি করে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দেন খোকনের অসহায় জীবনের চিত্র তুলে ধরে। তার সেই পোস্টে সাড়া দেন দেশের ভেতরের অনেকেই, বিশেষ করে প্রবাসে অবস্থানরত অনেক হৃদয়বান ব্যক্তি। ইতোপূর্বেও উপজেলার সাহেবের চর গ্রামের এক বিধবা মহিলার জন্য ঘর নির্মাণের ব্যবস্থা করেছেন, লক্ষ্মীপুরের বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, এছাড়াও সর্বদা অসহায় ও হতদরিদ্র এবং বিপদগ্রস্ত মানুষদের নিয়ে কাজ করে থাকেন মামুন।

সোমবার (৩০ জুন) সকালে খোকন মিয়ার হাতে নতুন ঘরের চাবি তুলে দেওয়া হয়।

মামুন বলেন, “বারবার পোস্ট দিয়েছি, মানুষের দরজায় গিয়েছি। অনেক সময় অপমান সহ্য করেছি, কেউ সাহায্য করেছেন হাসিমুখে, কেউ আবার কটাক্ষ করেছেন। তবুও হাল ছাড়িনি। ধাপে ধাপে কাজ করেছি। কেউ ২০০ টাকা দিয়েছেন, কেউ ৫০০০ টাকা পাঠিয়েছেন। সব কিছুর সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই আজ খোকনের জন্য মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।”

তার এ ঘর নির্মাণে প্রায় **দেড় লাখ টাকার** মতো খরচ হয়েছে। প্রায় **চার মাসের** চেষ্টায় সম্পন্ন হয়েছে ঘরের নির্মাণকাজ। এতে রয়েছে দুইটি কক্ষ। টিনের ছাউনি, শক্ত মাটির মেঝে ও দরজা জানালার ব্যবস্থা সহ একেবারে বসবাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি হয়েছে খোকনের জন্য।

তিনি আরও বলেন, “এই ঘর শুধু ইট, কাঠ আর টিন দিয়ে তৈরি না—এটা ভালোবাসা, সহানুভূতি আর মানুষের একসঙ্গে এগিয়ে আসার প্রতীক।”

স্থানীয় ইউপি সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা মামুনের এই মহতী উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তারা বলেন, “আজকের দিনে যেখানে মানুষ নিজের প্রয়োজন নিয়েই ব্যস্ত, সেখানে একজন তরুণের এই মানবিক উদ্যোগ নিঃসন্দেহে সমাজের জন্য অনুকরণীয়। এ ধরনের উদ্যোগগুলো অন্যদেরও উৎসাহিত করবে।”

নতুন ঘর পেয়ে আবেগ আপ্লুত খোকন মিয়া বলেন, “জীবনে ভাবিনি এমন একটা ঘরে একদিন থাকবো। মামুন ভাই শুধু ঘর দেননি, নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। যেসব ভাই-বন্ধু টাকা দিয়েছেন, বিশেষ করে প্রবাসীরা—তাদের জন্য আমি সারা জীবন দোয়া করবো। আল্লাহ যেন তাদের ভালো রাখেন।”

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker