ঢাকা

গুলশানে অগ্নিকাণ্ড : অনাগত সন্তানের মুখ দেখা হলো না আনোয়ারের

আর মাত্র দুই মাস পরেই সন্তান পৃথিবীর আসার কথা রয়েছে। অনাগত সন্তানকে ঘিরে কত স্বপ্ন ছিল ভোলার দৌলতখান উপজেলার চরখলিফা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আনোয়ার হোসেনের। কিন্তু রবিবার রাতে ঢাকার গুলশান এলাকায় ১২ তলা একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের সময় জীবন বাঁচাতে লাফিয়ে পড়ে মৃত্যু হয় তার। সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আমেনা বেগমের গর্ভের সন্তানের মুখ দেখার আগেই পৃথিবী থেকে চলে গেলেন আনোয়ার।

দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণের পর তেমন লেখাপড়া করতে পারেননি আনোয়ার। ৭-৮ বছর আগে ঢাকায় ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ফাহিম সিনহার বাসায় বাবুর্চি ও বাজার করার কাজ নেন। পাঁচ ভাই এক বোনের মধ্যে আনোয়ার ছিলেন তৃতীয়। ওই বাসায় কাজ করে ভালোই চলছিল তার সংসার। এক বছর আগে নিজ এলাকায় বিয়ে করেন। তিনি ঢাকায় থাকলেও স্ত্রী আমেনা বেগম গ্রামের বাড়িতেই থাকতেন।

দুই-তিন মাস আগে ছুটিতে বাড়ি এসে কয়েক দিন পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়ে আবার কর্মস্থলে চলে গেছেন। ৪-৫ দিন পর আবারও আসার কথা ছিল আনোয়ারের। কিন্তু তা আর হলো না। এর আগেই পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন তিনি।

আজ সোমবার দুপুরে সরজমিনে আনোয়ারের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তার বাবা-মা, ভাই-বোন ও আত্মীয়স্বজন শোকে স্তব্ধ। আনোয়ারের বাবার কাছে তার কথা জিজ্ঞেস করতেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। সবাই মরদেহের অপেক্ষায়। তবে স্ত্রী আমেনা বেগম বাবার বাড়িতে ছিলেন।

আনোয়ারের বাবা নুর ইসলাম বলেন, আগুন লাগার আগে ছেলের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়। রাতে খবর আসে সে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা গেছে।

আনোয়ারের চাচাতো ভাই কামাল জমাদ্দার জানান, ভাইদের মধ্যে আনোয়ার একটু ভালো অবস্থানে ছিলেন। তার বাবা কৃষিকাজ করে অনেক কষ্টে সংসার খরচ চালাতেন। তাই আনোয়ার টাকা-পয়সা দিয়ে পরিবারকে সহযোগিতা করতেন।

নিহতের ছোট ভাই জুলহাস মুঠোফোনে বলেন, ভাইয়ের মরদেহ নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে করে ভোলার উদ্দেশে রওনা হয়েছি। আসরের পর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরের ১০৪ নম্বর সড়কের একটি বহুতল ভবনে আগুন লাগে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত এই একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আগুন লাগার পর ভবনের বিভিন্ন তলা থেকে ২২ জনকে উদ্ধার করে আশপাশের হাসপাতালে পাঠানো হয়। লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েছেন কয়েকজন।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, এখন পর্যন্ত কিভাবে আগুনের সূত্রপাত, সেটি জানা সম্ভব হয়নি। তদন্তে এই অগ্নিকাণ্ডের কারণ বেরিয়ে আসবে। ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker