চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে মজিবুর রহমান মঞ্জু: ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলো এখন পারস্পরিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু অভিযোগ করেছেন যে, ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলো এখন বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। তিনি এই বিভেদ ফ্যাসিবাদী শক্তির পুনরায় ফিরে আসার পথ তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু বলেছেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতনের পর রাজনীতির মাঠে নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা দলগুলো এখন পারস্পরিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। এই দ্বন্দ্বে একদিকে আছে বিএনপি, আরেক দিকে জামায়াতে ইসলামী। তাদের এই দ্বন্দ্বের কারণে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী পুনরায় ফিরে আসার পথ সুগম হবে। এ বিষয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও ঐক্য
মঞ্জু বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখছি কিছু কিছু নেতা তাঁদের বক্তব্যে ও স্লোগানে রাজনৈতিক শালীনতা বা শিষ্টাচারের সীমা অতিক্রম করছেন।” বিশ্লেষকদের মতে, আগামী জাতীয় নির্বাচন ও ক্ষমতার রাজনীতিকে কেন্দ্র করে এই কাদা-ছোড়াছুড়ি বাড়ছে। তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগবিরোধী আন্দোলন বা যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্য দলগুলো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং কেউ কেউ ভেতরে-ভেতরে দুই শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। এমন বিভেদের জেরে ফ্যাসিবাদী শক্তির ফিরে আসার পথ তৈরি হয় কি না, সে আশঙ্কার কথা তিনি তুলে ধরেন।
মতবিনিময় ও অন্যান্য বক্তব্য
তিনি বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব মো. জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে ও বৈশাখী টিভির ব্যুরো প্রধান গোলাম মওলা মুরাদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক এড. গোলাম ফারুক, পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও হাটহাজারী থেকে এবি পার্টির সংসদ সদস্য সম্ভাব্য প্রার্থী লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম পিএসসি, জাতীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ লোকমান, চট্টগ্রাম মহাগর যুগ্ম আহ্বায়ক ছিদ্দিকুর রহমান, চট্টগ্রাম মহানগরের সদস্য সচিব এড. সৈয়দ আবুল কাসেম ও হায়দার আলী চৌধুরী।
সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগের প্রতি মন্তব্য
এবি পার্টির সভাপতি আরও বলেন, হাসিনার ফ্যাসিবাদকে উৎসাহিত করেছে কিছু সাংবাদিক নামের অ্যাক্টিভিস্ট। আদর্শ ও দল-মতের পার্থক্য থাকলেও ফ্যাসিবাদ প্রশ্নে সবাইকে এক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকেও রিকনসিলিয়েশন করা যায়, তবে তার আগে তাদেরকে ভুল স্বীকার করতে হবে এবং জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। গণহত্যা, গুম, খুন, লুটপাট এবং দেশকে ধ্বংস করার পরও যারা গলা উঁচু করে কথা বলে, তাদের কপালে দুঃখ ছাড়া আর কিছু নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের কবলে পড়েছিল ইসলামিক টিভি, দিগন্ত টিভি, চ্যানেল ওয়ান ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা, এ সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল এবং অনেক সাংবাদিক বেকার হয়ে গিয়েছিলেন। আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং আমাকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য ফরম পূরণ করার পরও সদস্য হতে দেয়নি ফ্যাসিবাদের দোসর সাংবাদিকেরা।
আন্দোলন ও ঐক্যের গুরুত্ব
তিনি বলেন, যাত্রাবাড়ী ও ভান্ডারিয়ার জুলাইয়ের আন্দোলনে “একটা মরলে আরেকটা আগাইয়া আসে”। কিভাবে আন্দোলন দমন করা যাবে বলে আক্ষেপ করেছে সেই ফ্যাসিবাদী পুলিশ। যাদের আমরা কখনো নাম শুনিনি সেই সারজিস, নাহিদ ও হাসনাতরাই আমাদের নতুন স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। দলগুলো ১৫-১৭ বছর আন্দোলন করে সফল হয়নি। সেই সব রাজনৈতিক দলকে মনে রাখতে হবে। ঐক্য ও সংহতির ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই বলেও মন্তব্য করেন এবি পার্টির সভাপতি।