চট্টগ্রাম

প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টা ও যৌন হয়রানির অভিযোগ

কলাভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নির্যাতন; অভিযুক্ত ছাত্র আলমাস মাহফুজ রাফিদ, আগেও নারী হেনস্তার অভিযোগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় এক প্রথম বর্ষের (২০২৩-২৪ সেশন) ছাত্রীকে ছাদে ডেকে নিয়ে ধর্ষণচেষ্টা ও যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে আলমাস মাহফুজ রাফিদ নামের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ভুক্তভোগী ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযুক্ত আলমাস মাহফুজ রাফিদ চারুকলা ইনস্টিটিউটের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।

ভুক্তভোগী ছাত্রী তার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, “গত ৮ জুলাই সকালে আলমাস তাকে পুরনো কলাভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যায়। ছাদে নিয়ে সে আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। আমি অনেক অনুরোধ করে নিচে নামতে পারি। পরে ক্লাসরুমে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাই। পরে মাথায় পানি ঢেলে আমাকে জ্ঞান ফেরানো হয়।” তিনি আরও জানান, “প্রেমে রাজি না হওয়ায় আগের রাতেই সে আমাকে হুমকি দেয়।”

ভুক্তভোগী ছাত্রী আরও বলেন, “আলমাস আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে ছাদে যেতে বাধ্য করে। সেখানে সে জোর করে কিছু করার চেষ্টা করে। এর আগেই আমি জানতে পারি, তার বিরুদ্ধে আগেও একাধিক ছাত্রীকে নিয়ে কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে। পরে আমি বিষয়টি এক ব্যাচমেটকে জানালে তাকেও সে হুমকি দেয়।”

ভুক্তভোগী ছাত্রীকে সহায়তা করতে গিয়ে চারুকলার প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী এথেন সরকার ইউসা নিজেও হুমকির শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, “ঘটনা জানার পর আমি আমার বান্ধবীকে সাহায্য করতে গেলে আলমাসের ছোট ভাই মাইনুল হিমেল ফোন করে আমাকে গুম করে ফেলার হুমকি দেয়। আমি নিরাপত্তার অভাবে হাটহাজারী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। এরপর প্রক্টর অফিসেও গিয়েছিলাম, কিন্তু তাঁরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। আমাদের যদি কিছু ঘটে যায়, দায় কে নেবে?”

অভিযুক্ত আলমাস মাহফুজের বিরুদ্ধে আগেও নারী হেনস্তার অভিযোগ রয়েছে বলে দাবি করেছেন চারুকলার ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রী। তিনি বলেন, “চলতি বছরের জানুয়ারিতে আমি প্রক্টর অফিসে আলমাসের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। সে আমাকে ক্যাম্পাসে কারো সঙ্গে দেখলেই উত্ত্যক্ত করত। একবার কলা ঝুপড়িতে আমি ও বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম, তখন আলমাস ও তার কয়েকজন জুনিয়র এসে আমার এক বন্ধুকে মারধর করে এবং আমাদের সবাইকে হেনস্তা করে। অভিযোগ দিলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।”

অভিযুক্ত আলমাস মাহফুজ অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, “মেয়েটি আমার পরিচিত। আমরা প্রায়ই ছাদে আড্ডা দিতাম। ওই দিনও কথা বলার জন্যই গিয়েছিলাম। আমি কোনো ধরনের অশোভন কাজ করিনি।” তিনি আরও বলেন, “এথেনের সঙ্গে মেয়েটির সম্পর্ক আছে কি না, সেটা জানতে চেয়েছিলাম। আমি শুধু তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। হুমকি দিইনি। আমার ছোট ভাই তার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছে মাত্র।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ জানান, “ছাত্রী একবার ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এবং পরে প্রক্টরের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি নিপীড়নবিরোধী সেলে পাঠানো হবে। উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) এটি দেখছেন।”

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker