বাড়িওয়ালার ‘মিথ্যা অভিযোগের’ ভিত্তিতে হাসপাতাল বন্ধ: চট্টগ্রামের সেন্ট্রাল সিটি হাসপাতালের প্রতিবাদ
চট্টগ্রাম নগরীর প্রবর্তক মোড়স্থ সেন্ট্রাল সিটি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে গত ২৯শে জুন সিভিল সার্জন কার্যালয় সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে সিলগালা করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা এই পদক্ষেপকে 'অন্যায্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
গত **২৯শে জুন** চট্টগ্রাম নগরীর প্রবর্তক মোড়স্থ **সেন্ট্রাল সিটি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক** কর্তৃপক্ষকে কোনো রকম আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে এবং সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে সিভিল সার্জন কার্যালয় কর্তৃক হাসপাতালটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শত মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী এই হাসপাতালটি বন্ধের পদক্ষেপ কেবল অন্যায় নয়, বরং সম্পূর্ণরূপে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কর্তৃপক্ষকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ না দিয়ে, তাদের বিরুদ্ধে জঘন্য মিথ্যাচার করে এ ধরনের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের দাবি, এই হাসপাতালটি সুনামের সাথে রোগীদের সেবা দিয়ে আসছে এবং গত ৮ বছর ধরে চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে নেই। এমন একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যাচাই-বাছাই না করে এবং ভিত্তিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করাটা জনসেবামূলক কার্যক্রমকে ব্যাহত করবে।
তাদের অভিযোগ, বাড়িওয়ালার অন্যায় অভিযোগের ভিত্তিতেই একটি কুচক্রী মহলের যোগসাজশে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় বাড়িওয়ালাকে অবৈধভাবে হাসপাতালের দখল দেওয়ার জন্য এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে উচ্ছেদ করতেই এইসব অবৈধ কার্যক্রম করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত **বৃহস্পতিবার (২৬ জুন)** হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য নোটিশ দেয় সিভিল সার্জন কার্যালয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নোটিশ পেয়েই হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় এবং কেয়ারটেকারকে দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু **রবিবার (২৯ জুন)** তারা আবার তড়িঘড়ি করে হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে ডাক্তার, নার্স পাওয়া যায়নি বলে মিডিয়ার সামনে যে মিথ্যাচার করেছে, তাতেই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ হয় যে, তারা এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়েই করেছে। এছাড়া সিভিল সার্জন কার্যালয় নিজেরাই স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিদ্যুৎ অফিসে বারবার ফোন করে হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করতে বলেছে।
এই প্রসঙ্গে জানা যায়, এই প্রতিষ্ঠানের ভবনটি হাসপাতাল সংক্রান্ত ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে হাটহাজারীর নাঙ্গল মোড়ার মো. সৈয়দ মিয়া থেকে ভাড়ায় গ্রহণ করা হয়। এটি একটি জরাজীর্ণ ভবন ছিল মাত্র। বিভিন্নজনের কাছ থেকে বিনিয়োগ ও ঋণ গ্রহণ করে এই জরাজীর্ণ ভবনে প্রায় **পাঁচ কোটি টাকা বিনিয়োগ** করে একটি আধুনিক হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সহ ফার্মেসী, ডেন্টাল চেম্বার, মেডিক্যাল ও সার্জিক্যাল মার্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার কিছুদিন পরেই বাড়িওয়ালা স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডি ব্যবসা করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট হতে হাসপাতালের অভ্যন্তরে অনৈতিকভাবে একটি অফিস রুম দাবি করে এবং হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স স্বর্ণ চোরাচালানের জন্য ব্যবহার করার কুপ্রস্তাব দেয়। তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি উত্তেজিত হয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। ঘরভাড়া চুক্তি বলবৎ থাকা অবস্থাতেই, হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের নিকট অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করে এবং তাতে রাজি না হওয়ায় তিনি হাসপাতালকে কুক্ষিগত করে তাদেরকে উক্ত দালান থেকে অবৈধভাবে উচ্ছেদ করার জন্য নানাভাবে পাঁয়তারা শুরু করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হয়রানি করবার উদ্দেশ্যে আইন বহির্ভূতভাবে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ডা. রেজাউল ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানান ধরনের মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ প্রদান করে দীর্ঘদিন ধরে হয়রানি করে আসছেন।
বাড়িওয়ালার বিষয় নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে একটি রীট করেছিলেন। সেখানে মহামান্য হাইকোর্ট বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়া সংক্রান্ত ব্যক্তিগত বিরোধের মধ্যে প্রশাসনকে ব্যবহার না করতে সুস্পষ্ট ভাবে নিরুৎসাহিত করেছেন। বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়া সংক্রান্ত ইস্যু আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তির নির্দেশনাও দেয়। মহামান্য হাইকোর্টের সেই রায় অনুযায়ী সিটি করপোরেশন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সুস্পষ্ট ভাবে তাদের রিপোর্টে সেটা উল্লেখ করেছেন। তারপরও বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়া ইস্যু নিয়ে প্রশাসনের গুটিকয়েক মানুষের নগ্ন হস্তক্ষেপ সমগ্র বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং এটি আদালত অবমাননাও বটে।
গত ৮ বছর ধরে বাড়িওয়ালা ও কতিপয় সুযোগসন্ধানী দুষ্কৃতকারী এবং একটি কুচক্রী ভূমিদস্যু মহলের ধারাবাহিক হয়রানির কারণে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা বারবার ব্যাহত হয়েছে। যার ফলে হাসপাতালটি চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ও নানারকম ধার-দেনায় জর্জরিত আছে, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং হাসপাতালটি পুনরায় খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। একই সাথে, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটন এবং দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছে।