ব্রাহ্মণবাড়িয়া

শহরের জ্যাম নিরসন, মডেল থানা পরিষ্কার ও মন্দির পাহাড়ায় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন: বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থী ও সংগঠন

গত ৫/৮/২৪ ইং রোজ সোমবার সরকার পতনের পর পুলিশ বাহিনীও নিজ নিজ থানা থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গিয়েছে। এমতাবস্থায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সকল ভেদাভেদ ভুলে স্বতস্ফূর্তভাবে পুড়ে যাওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা পরিষ্কার। শহরের জ্যাম নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বপালন ও বিভিন্ন মন্দির পাহাড়া দিচ্ছেন জামিয়া ইউনুসিয়ার শিক্ষার্থী, ক্লিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদস্য, বাতিঘরের সদস্য, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কর্মী ও জেলা সরকারি কলেজের ছাত্রবৃন্দ সহ আরও অনেকেই।

এ ব্যাপারে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সমন্বয়ক আবু বকর বলেন, আমরা আন্দোলনের দিন সদর মডেল থানাকে রক্ষা করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। এমনকি দূর্বৃত্তদেরকে সরিয়ে দিতে গিয়ে আমিসহ আরও কয়েকজন আহতও হয়েছি। কারো কারো মাথায় সেলাই পর্যন্ত লেগেছে। শেষ পর্যন্ত আমরা থানাকে রক্ষা করতে পারিনাই। আমরা জ্বালাও, পোড়াও এর পক্ষে নই। আমরা শান্তি শৃঙ্খলার পক্ষে। তাই আন্দোলনের পর থেকেই আমরা শহরের ট্রাফিক জ্যাম নিরসন ও থানা পরিষ্কারের কাজ করে যাচ্ছি, যা এখনো চলমান। যতদিন না পর্যন্ত আমাদের দেশের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসবে ততোদিন পর্যন্ত আমরা এ দায়িত্ব গৌরব মনে করে পালন করে যাবো ইনশাআল্লাহ।

Image

তিনি আরও বলেন, আমাদের সাথে ক্লিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামক একটি সেবামূলক সংগঠনও কাজ করে যাচ্ছেন। উনারা আমাদেরকে বিভিন্ন দিক দিয়ে সহযোগিতাও করে যাচ্ছেন আলহামদুলিল্লাহ।

পৌর সুপার মার্কেটের সামনে জ্যাম নিরসনের দায়িত্বে থাকা বাতিঘরের সদস্য মুহা: আরমান বলেন, আমরা সকাল ৯টা থেকে রাত্র পর্যন্ত জ্যাম নিরসনে কাজ যাচ্ছি। একটু পর বিভিন্নজন এসে আপেল, পেয়ারা, বিরিয়ানি ও পানি দিয়ে অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন। তাই আমাদের কাছে এটা কষ্টের বিষয় মনে হচ্ছে না। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমরা সকলের ভালোবসায় মুগ্ধ। 

তিনি আরও বলেন, আমি সামান্য একজন মানুষ হিসেবে দেশের এত বড় একটা কাজে দায়িত্ব পালন করে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।

ফকিরাপুলে জ্যাম নিরসনের কাজে দায়িত্বে থাকা, সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসাইন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ট্রাফিক পুলিশ নেই তাই যাত্রীরা যেনো ভোগান্তিতে না পড়েন সেদিকে লক্ষ্য করেই কয়েকদিন যাবৎ জ্যাম নিরসনে কাজ করে যাচ্ছি।

Image

এমন পরিস্থিতিতে মাদরাসার ছাত্র ও কোনো কোনো সংগঠন থেকে আমাদেরকে বিভিন্ন খাবার ও পানীয় দিচ্ছেন। যাদ্দরুন আমাদের কাছে এটা কোনো কষ্টই মনে হচ্ছে না। এভাবেই আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পরস্পরের সহযোগিতায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ। 

মন্দির পাহাড়ার ব্যাপারে জামিয়া ইউনুসিয়ার ছাত্র আব্দুর রাকিব বলেন, আমরা আমাদের দেশকে সম্মিলিত চেষ্টায় স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্ত করেছি। এরপর থেকেই একটা কুচক্রী মহল হিন্দুদের উপর আক্রমণ হয়েছে বলে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছিলো। তাই আমরা স্বতর্কতাস্বরুপ রাত জেগে মন্দির পাহাড়া দিচ্ছি। পাশাপাশি আমরা কুচক্রী মহলকে বুঝিয়ে দিতে চাই, আমাদের দেশে হিন্দু মুসলিম কোনো ভেদাভেদ নাই।

Image

এ পাহাড়ায় নিযুক্ত থাকা শেখ সাদী নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমাদের দেশের গৌরবময় স্বাধীনতা অর্জন হওয়াটা গুটিকয়েক স্বার্থান্বেষি মহলের গাত্র দাহের কারন হয়েছে। তাই কিছু হলুদ মিডিয়ার সাহায্যে তারা আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমন হচ্ছে, হিন্দুদের মন্দির ভাংচুর হচ্ছে, তাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে এমন অপপ্রচারে।

অথচ সারা বাংলাদেশের কোথাও এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা যা ঘটেছে এটা ঐ স্বার্থান্বেষী মহলেরই ষড়যন্ত্রের ফসল এবং তাদের এজেন্ডারাই এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। এর দায়ভার বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম প্রান মুসলমানদের কাধে চাপিয়ে দেয়ার জন্য। তাই আমরা সংখ্যালঘু হিন্দুদেরকে আশ্বস্ত করে দেশের শান্তি শৃঙ্খলা টিকিয়ে রাখার জন্য। এবং তারা যেনো আতঙ্কিত না হয় এজন্যে আমরা তাদের উপাসনালয়গুলো পাহারা দিচ্ছি। এবং যতদিন প্রয়োজন হয় দিয়ে যাবো।

Author

দ্বারা
দেলোয়ার হোসাইন মাহদী (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker