ব্রাহ্মণবাড়িয়া

নাসিরনগরে তিতাস নদীতে ডুবে আপন দুই বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের তিতাস নদীতে ডুবে মারিয়া (১১) ও সামিয়া (৮) নামে আপন দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে তারা গরু আনতে গিয়ে খালের প্রবল স্রোতে ভেসে গিয়েছিল।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের তিতাস নদীতে ডুবে মারিয়া (১১)সামিয়া (৮) নামে আপন দুই বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তারা স্থানীয় মিনার আলীর মেয়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সারাদিন ভারী ঝড়-বৃষ্টির পর বিকেলে গোকর্ণ মধ্যপাড়ার আকাশিয়া মাঠ থেকে গরু আনতে যায় দুই বোন। এ সময় হঠাৎ খালের পানির প্রবল স্রোতে তারা ভেসে যায়।

রাতভর এলাকাবাসী ও স্বজনরা নৌকা নিয়ে খোঁজাখুঁজি করলেও তাদের কোনো খোঁজ মেলেনি। পরদিন আজ (শনিবার, ৩১ মে) সকাল ৬টার দিকে গোকর্ণ বেরিবাঁধ সংলগ্ন তিতাস নদীতে প্রথমে একজনের মরদেহ ভেসে ওঠে এবং অপরজনের মরদেহ স্থানীয় এক জেলের জালে উঠে আসে।

নিহতদের বাবা মিনার আলী কিছুদিন আগে প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছেন। মেয়েদের মৃত্যুসংবাদে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন,

“ওরা আমার আদরের সন্তান ছিল, কে জানতো এমনভাবে বিদায় নেবে! সবকিছু শেষ হয়ে গেলো।”

চাচা জালাল আহমেদ বলেন,

“বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই সারারাত খোঁজাখুঁজি করেছি, কিন্তু পাইনি। সকালে একজনের লাশ পানিতে ভেসে ওঠে, আরেকজনের লাশ জালে উঠে আসে। আমার কলিজা টুকরোগুলো শেষ হয়ে গেলো।”

স্থানীয় কৃষক জাহিদ মিয়া জানান,

“আমরা শুনেছি সন্ধ্যার দিকে তারা খালের পাশে ছিল। হঠাৎ পানির স্রোত বেড়ে গেলে হয়তো তারা দুজনেই ভেসে যায়। স্রোত এতটাই তীব্র ছিল যে কিছুই করার সুযোগ ছিল না।”

ঘটনাস্থলে গিয়ে গোকর্ণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ শাহীন বলেন,

“এটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ঘটনা। এলাকাবাসীকে অনুরোধ করছি বর্ষার সময়ে খাল ও নদীর আশপাশে সাবধানতা অবলম্বন করতে। পরিবারটিকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।”

নাসিরনগর থানার ওসি খায়রুল আলম জানান,

“খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীনা নাছরিন জানান,

“খবর পাওয়ার পর এসিল্যান্ড ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে যায়। স্থানীয়দের সহায়তায় রাতভর খোঁজাখুঁজি চললেও সন্ধ্যার পর নিখোঁজ দুই শিশুর সন্ধান মেলেনি। রাত গভীর হলে ভৈরব থেকে ডুবুরি আনার ব্যবস্থা করা হয়, কিন্তু সকালেই নদী থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার হয়।”

তিনি আরও জানান,

“মেয়েদের বাবা মিনার আলী কিছুদিন হলো প্রবাসে গেছেন। চার সন্তানের মধ্যে ওরা দুজন বড়। এমন বেদনাদায়ক ঘটনার পর ভাষা খুঁজে পাওয়া কঠিন। এ ক্ষতি কোনোভাবেই পূরণযোগ্য নয়।”

Author

মো: মেহেদী হাসান, ব্রাহ্মনবাড়িয়া প্রতিনিধি

পেশায় একজন সাংবাদিক। তিনি ৩০ জুন থেকে মিশন ৯০ নিউজে ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি হিসেবে, সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker