তৈরি পোশাক রপ্তানির আড়ালে ঢাকা ও গাজীপুরের ১০টি প্রতিষ্ঠান প্রায় তিন কোটি ৫৪ লাখ ডলার বা প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। গতকাল সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
অর্থপাচারে অভিযুক্ত কম্পানিগুলো হলো—প্রজ্ঞা ফ্যাশন লিমিটেড, ফ্যাশন ট্রেড, এমডিএস ফ্যাশন, হংকং ফ্যাশনস লিমিটেড, থ্রি-স্টার ট্রেডিং, ফরচুন ফ্যাশন, পিক্সি নিটওয়্যারস লিমিটেড, স্টাইলাইজ বিডি লিমিটেড ও ইডেন স্টাইল টেক্স। সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, নাইজেরিয়া, ফ্রান্স, কানাডা, রাশিয়া, স্লোভেনিয়া ও পানামায় এসব অর্থ পাচার করা হয়।
শুল্ক গোয়েন্দা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, অভিনব কায়দায় রপ্তানি জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিদেশে পণ্য চালান হচ্ছে, কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রা প্রত্যাবাসিত হচ্ছে না—এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শনাক্ত করা হয়।
রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বিল অব এক্সপোর্ট জালিয়াতি করে অন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ইএক্সপি ব্যবহার করে পণ্য রপ্তানি করেছে। বিল অব এক্সপোর্টের ২৪ নম্বর কলামে নমুনার কোড ২০ ব্যবহার করেছে। এ ক্ষেত্রে কোনো অর্থ দেশে প্রত্যাবাসিত না হয়ে পুরো অর্থ রপ্তানি মূল্য বাবদ বিদেশে পাচার হয়েছে।
শুল্ক গোয়েন্দার যুগ্ম পরিচালক শাসমুল আরেফিন খান বলেন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো পারস্পরিক যোগসাজশে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা পাচার করেছে। ইএক্সপির কার্যকারিতা না থাকায় বৈধ পন্থায় বৈদেশিক মুদ্রা দেশে প্রত্যাবাসিত হওয়ার সুযোগ নেই। অর্থাৎ মানি লন্ডারিং সংশ্লিষ্ট অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। অভিযুক্ত ১০ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
শাসমুল আরেফিন জানান, এর আগেও শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর চারটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একই পন্থায় ৩৭৯ কোটি টাকা পাচারের ঘটনা উদ্ঘাটন করে। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং অনুসন্ধানসহ ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৬৭৯ কোটি টাকা পাচারের ঘটনা উদ্ঘাটন করল শুল্ক গোয়েন্দা।
শুল্ক গোয়েন্দারা জানান, তদন্তকালে ১০টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বিগত সময়ে এক হাজার ২৩৪টি পণ্য চালানে এমন জালিয়াতি করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। চালানের বিপরীতে পণ্যের পরিমাণ এক হাজার ৯২১ মেট্রিক টন, যার বিপরীতে ফেরতযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার সম্ভাব্য পরিমাণ তিন কোটি ৫৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯১৮ মার্কিন ডলার।
প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্ট দলিলাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, তারা টি-শার্ট, টপস, লেডিস ড্রেস, ট্রাউজার, বেবি সেট, পোলো শার্ট ইত্যাদি পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, নাইজেরিয়া প্রভৃতি দেশে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি দেখিয়ে অর্থ পাচার করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত বিল অব এক্সপোর্টের কোড ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, ১০টি প্রতিষ্ঠানের বিল অব এক্সপোর্ট পর্যালোচনায় বিল অব এক্সপোর্ট ও ইএক্সপিতে বর্ণিত তথ্যের মিল পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বিল অব এক্সপোর্টে উল্লেখিত ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ১০ প্রতিষ্ঠানের কোনোটিই সেই ব্যাংকে লিয়েনকৃত নয়। এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাবসায়িক কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সম্পর্কিত নয় বলে সেই ব্যাংকের মাধ্যমে বিল অব এক্সপোর্টে উল্লিখিত সেলস কন্ট্রাক্ট বা ইএক্সপির রপ্তানি মূল্য প্রত্যাবাসিত হয়নি বা হওয়ার সুযোগও নেই।
এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টগুলো হলো—এমএজে শিপিং করপোরেশন, এএন্ডজে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, জিআর ট্রেডিং করপোরেশন, এনএইচ করপোরেশন, কেআরএস সিঅ্যান্ডএফ লিমিটেড, প্যান বেঙ্গল এজেন্সি, পরাগ এসএমএস লিমিটেড, রিয়াঙ্কা ইন্টারন্যাশনাল এবং মেসার্স একে এন্টারপ্রাইজ।