বাণিজ্য

ডলারের বিকল্প স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন বাড়াবে ব্রিকস

যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার অর্থনীতি অনেকটাই কোণঠাসা, অন্যদিকে ভবিষ্যৎ নিষেধাজ্ঞার আতঙ্কে আছে চীনসহ অনেক দেশ। এ অবস্থায় ডলারের বিকল্প হিসেবে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন বাড়াতে চায় ব্রিকস দেশগুলো। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা—এই পাঁচ দেশের জোট ব্রিকস স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহার বাড়াতে কাজে লাগাবে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে (এনডিবি)।

এ মাসের শেষেই দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ব্রিকস দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলন।

কিভাবে এনডিবির মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রায় তহবিল সংগ্রহ হবে এবং অর্থায়ন করা হবে, এ বিষয়ে সেখানে আলোচনা করা হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থমন্ত্রী এনক গোডোঙ্গোয়ানা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এসব কথা জানান। তিনি বলেন, ‘এনডিবির সদস্য দেশগুলোর মধ্যে স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়টি আমাদের এজেন্ডায় থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘এটি ডি-ডলারাইজেশন (ডলারমুক্ত লেনদেন) পরিকল্পনা থেকে নয় বরং মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা রোধের লক্ষ্যেই এটি করা হবে।

রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করার পর থেকেই উদীয়মান বাজারের মুদ্রাগুলোর বিপরীতে ডলার শক্তিশালী হতে শুরু করে। মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ২০২২ সালের শুরু থেকে একের পর এক সুদের হার বাড়াতে থাকে। এতে উদীয়মান মুদ্রাগুলোর বিপরীতে ডলারে ঋণ অনেক বেশি ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। গোডোঙ্গোয়ানা বলেন, ‘যেসব দেশ এনডিবির সদস্য তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে স্থানীয় মুদ্রায় ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে।

এনডিবি হচ্ছে ব্রিকস জোটের ফ্ল্যাগশিপ আর্থিক প্রকল্প। ব্যাংকটির লক্ষ্য হচ্ছে উদীয়মান দেশগুলোতে অর্থায়ন এবং আর্থিক ক্ষেত্রে ডলারের আধিপত্য কমিয়ে আনা।

বর্তমানে এনডিবির সদস্য দেশ পাঁচ থেকে বেড়ে আট হয়েছে। ব্যাংকটি শুধু সদস্য দেশগুলোকে ঋণ দিয়ে থাকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, স্থানীয় মুদ্রায় তহবিল সংগ্রহ এবং নতুন সদস্যদের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহ করতে পারলে কঠিন এ সময়ে এনডিবি মার্কিন অর্থবাজারের ওপর নির্ভরতা কমাতে পারবে।

সাংহাইয়ে এনডিবির প্রধান কার্যালয়ের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফএও) লেসলি ম্যাসডর্প রয়টার্সকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ব্যাংকের লক্ষ্য আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় ঋণের পরিমাণ ২২ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে উন্নীত করা। যদিও একেবারে সুনির্দিষ্ট কারণে ব্যাংকের পরিচালন মুদ্রা হচ্ছে ডলার। মূলত ডলার হচ্ছে তারল্যের সহজলভ্যতা যেখানে সবচেয়ে বেশি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে ডলারের আধিপত্যের অন্যতম বড় কারণ যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক দেশ, যার জিডিপির আকার ২৫.৫ ট্রিলিয়ন ডলার এবং যা বৈশ্বিক জিডিপির ২৪ শতাংশ। একটি দেশের অর্থনীতি যত শক্তিশালী তার সম্পদের চাহিদা ও প্রভাবও তত বেশি। সে কারণেই ডলার বর্তমানে শক্তিশালী অবস্থানে আছে। এর বিপরীতে ব্রিকস দেশগুলোর সম্মিলিত জিডিপি ৩২.৭২ ট্রিলিয়ন ডলার, যা বৈশ্বিক জিডিপির ৩১.৫৯ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৭.১৬ ট্রিলিয়ন ডলার বেশি। ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখার সক্ষমতা আছে ব্রিকস দেশগুলোর। তাদের মুদ্রাও ডলারের আধিপত্যের বিরুদ্ধে বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

বর্তমানে ব্রিকস সদস্যরা দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে ডলারের বিকল্প হিসেবে নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্য করছে। যেমন, চীন-রাশিয়ার বাণিজ্যের ৭০ শতাংশের বেশি হচ্ছে স্থানীয় মুদ্রায়। কিন্তু অভিন্ন মুদ্রা থাকলে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর বাণিজ্যই কেবল বাড়বে তা নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নিজেদের মুদ্রা ডলারে রূপান্তরের যে উচ্চ ব্যয়, তা থেকেও রেহাই পাবে তারা।

২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিকল্প হিসেবে ব্রিকস নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) গঠন করে। এনডিবির কন্টিনজেন্ট রিজার্ভ অ্যারেঞ্জমেন্ট (সিআরএ) বা তারল্য ব্যবস্থাপনা অনেক দেশকে আকৃষ্ট করে। এসব দেশের বেশ কয়েকটি এমনিতেই ডলার সংকটে ছিল, আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার কারণে তারা নীতি স্বাধীনতা হারায়। ফলে এমন অনেক দেশ এনডিবির কাছ খেকে ঋণ নিয়েছে। এ ছাড়া এনডিবি স্থানীয় মুদ্রায় বন্ড ছেড়েছে। এই প্রক্রিয়া ব্রিকসকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker