বাণিজ্য

ব্যর্থ হলেও আমাকে পাবেন: ইভ্যালির সিইও রাসেল

২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করে ই-কমার্স প্লাটফর্ম ইভ্যালি। লোভনীয় ডিসকাউন্ট কিংবা ক্যাশ ব্যাকের অফার দিয়ে দ্রুতই গ্রাহকদের কাছে পরিচিতি পেয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু সময়মত পণ্য না দেওয়াসহ নানা অভিযোগে বর্তমানে সমালোচনার শীর্ষে অবস্থান করছে ইভ্যালি।

এদিকে আলোচিত সমা‌লো‌চিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালিতে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ কর‌বে ব‌লে ঘোষণা দি‌য়ে‌ছিল দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ যমুনা। কিন্তু সম্প্রতি এ সিদ্ধান্ত থেকে অনেকটাই সরে আসে শিল্প গ্রুপটি। এছাড়া ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও এম‌ডির নামে পরিচালিত সব অ্যাকাউন্টের তথ্য ও ৫০ লাখ বা তার বেশি টাকা লেনদেনের চেক ও রশিদের কপি চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার রাতে ফেসবুকে সহযোগিতা চেয়ে স্ট্যাটাস দেন ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেল।

তিনি লিখেছেন, ব্যর্থ হলেও আমাকে ভবিষ্যতে পাবেন। কিন্তু কোনও সুযোগ দেওয়ার আগে আমাদের ব্যর্থ বললে আমরা হয়তো বর্তমান গতি বাড়াতে পারব না। মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে তিনি এ কথা উল্লেখ করেছেন। 

তিনি বলেন, আমরা কোনও অর্থনৈতিক দুর্নীতি করিনি। আমাদের ঘাটতি হয়েছে পণ্যে ডিসকাউন্ট দিয়ে ই-কমার্সের প্রতি মানুষের আকর্ষণ তৈরি করার জন্য। হয়তো আমাদের কোনও ব্যবসায়িক ভুল থাকতে পারে। কিন্তু এই ব্যবসায়িক ভুল সঠিক ব্যবসায়িক পদ্ধতি দিয়ে আমরা সমাধান করব।

তিনি আরও বলেন,  স্বীকার করছি, এটা সন্তোষজনক নয়। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমরা শুধুমাত্র আপনাদের সহযোগিতা পেলে এই ই-কমার্স বিজনেস থেকেই ইভ্যালি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। আমাদের এখানে হয়তো আপনার অর্ডার নাই। আমরা অনেকের ডেলিভারি দিতে পারছি না দেখে হয়তো আপনি নেতিবাচক মন্তব্য করছেন। আমি শুধুই ৬ মাস সময় চেয়েছি। আর বাকি ৫ মাস। হয়তো আপনার অর্ডারটি বিলম্বিত হচ্ছে। আমরা প্রতিদিন নতুন পুরাতন ডেলিভারি দিয়ে যাচ্ছি। আমি জানি এই দেশ বিশাল পরিসরে ই-কমার্স বিস্তার লাভ করবে। এই স্বপ্ন থেকেই আমার সমস্ত কার্যক্রম। আমি আছি, আমরা আছি। 

তিনি সকলের উদ্দেশ্যে অনুরোধ করে বলেন, আপনি যদি ইভ্যালির নিকট কোনও পণ্য বা টাকা পাওনা না থাকেন, তাহলে নেতিবাচক মন্তব্য এই কিছুদিন না করুন। বর্তমান বিজনেস দিয়ে যদি এই পেন্ডিং ডেলিভারি কমাতে পারি, অন্তত প্রতিদিন কিছু মানুষ তো পণ্য পাবেন। দিন শেষে কারও ভালো কামনা করাও একটি মহৎ গুন। এই ভালো কামনা ফলাফল পাবেন আমাদের কাস্টমার এবং আমাদের সেলার, যারা দুশ্চিন্তার মধ্যে সময় পার করছেন। 

এর আগে গত বছর আগস্টে ইভ্যালি এবং এর চেয়ারম্যান ও এমডির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেন এক মাসের জন্য স্থগিত করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে প্রতারণা ও গ্রাহক হয়রানির অভিযোগে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও এমডি মোহাম্মদ রাসেলের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জে মামলা করা হয়েছে।

এর আগে ইভ্যালির ‘সম্পদের চেয়ে ছয় গুণ বেশি দেনা’ বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে উঠে আসে ইভ্যালির মোট দায় ৪০৭ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম নিয়েছে ২১৪ কোটি টাকা, আর মার্চেন্টদের কাছ থেকে বাকিতে পণ্য নিয়েছে ১৯০ কোটি টাকার। স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে কমপক্ষে ৪০৪ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা। কিন্তু সম্পদ আছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকার।

সেখানে বলা হয়, গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির নেওয়া অগ্রিম ৩৩৯ কোটি টাকার কোনও হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এ টাকা আত্মসাৎ বা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে গত ১৯ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সম্পদ ও দা‌য়ের হিসাব দেয় ইভ্যালি। সেখানে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তার নিজের ব্র্যান্ড মূল্য ৪২৩ কোটি টাকা। গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত তাদের মোট দায় ৫৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক কোটি টাকা শেয়ারহোল্ডার হিসেবে কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেল কোম্পানিকে দিয়েছেন। বাকি ৫৪৩ কোটি টাকা হচ্ছে কোম্পানিটির চলতি দায়।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker