বাণিজ্য

ইভ্যালির পর আকাশ নীলকাণ্ড, মূলহোতাসহ গ্রেপ্তার দুই

মানুষের টাকা হাপিশ করে বিত্ত-বৈভবের মালিক হবার স্বপ্নটা আলোচিত ইভ্যালিকাণ্ড থেকে পেয়েছিলেন মশিউর রহমান ও ইফতেখারুজ্জামান রনি।

গড়ে তুলেছিলেন ‘আকাশ নীল’ নামের একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানও। মানুষের কাছ থেকে ৩২ কোটি টাকা নিয়ে হাওয়ায় মিলিয়েও গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

ধরা পড়েছেন র‌্যাবের জালে। চক্রের মশিউরকে রাজধানী ও রনিকে ফরিদপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে মোবাইল, ল্যাপটপ এবং একটি প্রাইভেট কার উদ্ধার করা হয়।

আটক দুই জনের মধ্যে মশিউর রহমান ‘আকাশ নীল’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং অপরজন তার কুকর্মের সহযোগী ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ইফতেখাইরুজ্জামান রনি।

ই-কর্মাস প্রতারণার এই নতুন কাহিনীর বিস্তারিত জানাতে, সোমবার দুপুরে কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন র‌্যাব মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ‘আকাশ নীল’ কারসাজির মূলহোতা মশিউর। অনলাইনে অ্যামাজন, আলীবাবার মতো ব্যবসার করার ইচ্ছা ছিল তার। ২০১৯ সালে আকাশ নীল কোম্পানি নামে ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ তৈরি করে ট্রেড লাইসেন্স নেয়।

প্রথমে রাজধানীর কাঁঠাল বাগান এলাকায় একটি অফিস চালু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং কৃষকদের কাছ থেকে শাকসবজি কিনে অনলাইনে হোম ডেলিভারি দেওয়া শুরু করে। তবে করোনা মহামারির কারণে তারা ব্যবসা সচল রাখতে পারেনি।

মশিউর গেলো মে মাস পর্যন্ত ব্যবসা না করার কারণে তার যে পুঁজি দিয়ে অফিস সাজিয়েছিল, তাতে লোকসান হয়। পরে গ্রাহককে বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে অগ্রিম নিয়ে কোম্পানিকে লিমিটেডে রূপান্তরিত করে। কাঁঠাল বাগান থেকে অফিসে পরিবর্তন করে পান্থপথে।

‘আকাশ নীল’ ছিল পরিবার কেন্দ্রিক ব্যবসা। যাতে নিজের নামে ৭৭ শতাংশ, বোনের নামে ১০ শতাংশ, মায়ের নামে ৮ শতাংশ এবং তার স্ত্রীর নামে ৫ শতাংশ শেয়ার রেখেছিল মশিউর। সে ছিল ম্যানেজিং ডিরেক্টর, মা চেয়ারম্যান আর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধু রনি ডিরেক্টর।

ইভ্যালিসহ অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন মোটরসাইকেলের অফার দিয়ে যখন রমরমা ব্যবসা শুরু করেছিল, তখন সেটা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০২১ সালের জুন মাসে একই অফারে সেও পুনরায় তার যাত্রা শুরু করে।

গ্রাহকদের আকৃষ্ট হওয়ার মূল কারণ ছিল, স্বল্পমূল্যে বা ডিসকাউন্টে প্রতিটি মোটরসাইকেলে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড়। আর গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার জন্য হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ মেইনটেন করা হতো। গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে অফার এবং মোটিভেশনাল বক্তব্য দিতো।

তিন দফায় তিনি ৯ হাজারের বেশি গ্রাহককে আকৃষ্ট করে হাতিয়ে নেন প্রায় ৩২ কোটি টাকা। পাশাপাশি মশিউর তার কোম্পানি থেকে লোভনীয় ছাড়ে দেন মোবাইল, ইলেকট্রনিক্স ও গৃহস্থালির অন্যান্য পণ্যের অফার।

তাদের অফার ব্যবসায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গ্রাহক ছিল। তবে শেষ ক্যাম্পেইনে ছাত্র বা যুব সমাজের গ্রাহকরাই মোটরসাইকেলের অফারটি নেন। গ্রাহকদের টাকা সরাসরি মশিউরের নিজের ব্যাংক একাউন্টে জমা হতো।

অন্যান্য ই-কমার্স ব্যবসার মতো গেটওয়ে সিস্টেম থাকলেও সরাসরি গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হতো। সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দেয়া অর্থ নিয়েই তারা প্রতারণা করতেন।

আকাশ নীল লিমিটেড কোম্পানিতে প্রায় ৪০ জন অস্থায়ী কর্মচারী ছিল। যাদের মাসিক চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা বেতন দেয়া হতো।

গ্রাহকের টাকায় ধানমন্ডিতে তিন কোটি টাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনেন মশিউর। তার রয়েছে দুটি ভিন্ন মডেলের দুটি দামি গাড়ি। এছাড়া, তার কোম্পানির চারটি টাটা পিকআপ রয়েছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইভ্যালিসহ অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযানের ফলে গ্রাহকরা পণ্য অথবা টাকা রিফান্ডের জন্য চাপ দেয়া শুরু করেন।

গ্রাহকদের চাপে গত নভেম্বরে মশিউর অফিস বন্ধ করে দিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান। নিজেদের ফোন বন্ধ রাখেন। এক পর্যায়ে দুবাই যাওয়ার জন্য ভিসাও করেন এমডি মশিউর।

আকাশ নীরের বর্তমানে গ্রাহকদের কাছে দেনা প্রায় ৩২ কোটি টাকা। বিভিন্ন ব্যাংকে মশিউরের চারটি অ্যাকাউন্ট পাওয়া গেছে। দায় মেটানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে সদুত্তর দিতে পারেননি তারা।

দেনা না মিটিয়ে ব্যবসায়িক অপকৌশল হিসেবে নতুন গ্রাহকের ওপর দায় চাপিয়ে দিয়ে পুরনো গ্রাহক ও সরবরাহকারীর দায়ের আংশিক পরিশোধ করতেন তারা। অর্থাৎ দায় ‘ট্রান্সফারের’ মাধ্যমে দুরভিসন্ধিমূলক অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছিল আকাশ নীল প্রতিষ্ঠানটি।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker