বাণিজ্য

প্রবাস ফেরত উদ্যোক্তা গড়লেন ডেইরি ফার্ম

প্রবাস থেকে ফিরে কিংবা পড়াশোনা  শেষ করে বেশিরভাগ মানুষ দুশ্চিন্তা রাজ্যের বাসিন্দা হয়ে যায়, গতানুগতিক চাকরি বা ব্যবসার আশায় বসে থেকে। এ সকল চাকরি বা ব্যবসার আশায় না থেকে আমরা যদি নিজেরাই আত্মকর্মসংস্থানের জন্য কিছু গঠনমূলক কাজ করি তাহলে আমাদের ভাগ্যের সঙ্গে সঙ্গে সমাজকেও আমরা কিছু উপহার দিতে পারব।

এমন মনোব্রত থেকে নিজের এবং অন্যদের উৎসাহিত করতে গড়ে তুলেছেন “মা ডেইরি ফার্ম ” কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার ১ নং জিনারী ইউনিয়নের চরকাটিহারী গ্রামের জনাব জালাল ফকিররের ছেলে মোহাম্মদ রনি মিয়া।

স্থানীয় সাইফুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, কঠিন আত্মবিশ্বাস এবং কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠা বিনিয়োগ করে অধীর  চিন্তাভাবনা নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করলে সফলতা দরজায় এসে কড়া নাড়বে। রনির এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। রনি দিন রাত এক করে খামারে মনোযোগ দিয়েছেন। তার সফলতায় হয়তো প্রবাস ফেরত, বেকার যুব সমাজ উদ্বুদ্ধ হবে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার।

দেশে এখন সফল ডেইরি ফার্মের সংখ্যা অনেক। দিন দিন এর চাহিদা ও বাজার বাড়ছে। একদিকে যেমন এ থেকে আদর্শ খাবার হিসেবে দুধ, আমিষের চাহিদা মেটাতে মাংস এবং জ্বালানি হিসেবে গোবর ও জৈব সার পাওয়া যাবে, তেমনি অন্যদিকে এ খাত থেকে বেশ ভালো আয় করাও সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই অল্পবিস্তর জ্ঞান থাকতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ নিলে,এমনই মতামত সচেতন ব্যক্তিবর্গের।

রনি প্রাথমিক পর্যায়ে ৭টি গরু নিয়ে যাত্রা শুরু করেছেন। এতে সময় দিচ্ছেন রনি মিয়ার পাশাপাশি পরিবারের প্রায় সকল সদস্যরাই। দীর্ঘ ১৫ বছর কুয়েতে প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে এসে “মা ডেইরি ফার্ম ” টি  প্রতিষ্ঠিত করেছেন। 

নিজ এলাকায় বিশেষ করে মফস্বলে গরুর ফার্ম গড়ে তুলেন রনি।  গরুর উন্নত জাত হিসেবে বাছাই করেছেন অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের গরু। 

পল্লি পশু চিকিৎসক  ডা: নাহিদ হাসান মুন্না জানান, উন্নত জাতের গরু বাছাই না করলে সারা বছর ফার্মে রোগবালাই লেগে থাকে। ভালো জাতের গরুর পাশাপাশি ফার্মে পর্যাপ্ত ঘাস, খৈল বিচালির ব্যবস্থা রাখতে হয়।

চারপাশে উঁচু দেওয়াল, পরিবেশসম্মত আবাসন, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস এবং গরুর বিশ্রাম ও হাঁটাচলার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। মা ডেইরি ফার্ম এ খাবার হিসেবে দিচ্ছেন, ধানের কুঁড়া, গমের ভুসি, ছোলা, খেসারির খোসা, লবণ, খৈল, নারিকেলের ছোবড়া পাশাপাশি সুপার নেপিয়ার ঘাস চাষ করে গরুর খাবারের ঘাটতি পূরণ করছেন। 

প্রতিটি গরুর জন্য আলাদা মশারি, ফ্যান, ময়লা পরিষ্কারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আলোর জন্য লাইটিং এবং পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারেও নজর দেওয়া হয়েছে রনির “মা ডেইরি ফার্ম” এ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশের প্রায় প্রতিটি উপজেলায় পশু চিকিৎসাকেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া সরকারিভাবেও খামারিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সাহায্য ছাড়াও ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। যুব উন্নয়ন, কৃষিব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকেও প্রশিক্ষিত তরুণরা বিনা জামানতে বেশ মোটা অংকের ঋণ সহায়তা পেতে পারেন। বেকার শিক্ষিত তরুণদের জন্য এটি হতে পারে একটি চমৎকার পেশা।

রনি মিয়া জানান, দেশে এসে বসে না থেকে কিছু করতে চাইলাম নিজের ও পরিবারের জন্য। ডেইরি ফার্মে ইনভেস্ট করলে সফলতার গল্পই বেশি। পাশাপাশি আমার এ উদ্যোগ দেখে প্রবাসী ভাইয়েরা নিজেকে বেকার না রেখে, অন্তত একটা কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারবে, ভালো মুনাফাও অর্জন হবে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker