কৃষি ও পরিবেশ

নার্সারির সফল উদ্যোক্তা মামুন

সমারোহ সবুজ আর সবুজের। গাছের চারা দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। আর্থিকভাবে লাভের পাশাপাশি ওইসব নার্সারির মালিকরা নিজেরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি তৈরি করছেন অন্যের কর্মসংস্থান।

তাছাড়া তাদের এই উদ্যোগ এলাকায় বনায়নসহ জলবায়ু পরির্বতনের কুপ্রভাব থেকে দেশকে মুক্ত করায় রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। নার্সারি থেকে নানা প্রজাতির চারা এখন স্থানীয় বাজার ছাড়াও চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ওই এলাকার বেকার দিন মজুরদের হয়েছে কর্মসংস্থানের সুযোগ।

তেমনি সবুজ শ্যামল ছায়ার তৃষ্ণা মেটাতে ও জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব থেকে পরিবেশকে মুক্ত করতে অবদান রাখছে এ. আর. মামুন নার্সারি। রংপুরের নীলফামারি জেলা সদরের কচুকাটা ইউনিয়নে অবস্থিত কচুকাটা বাজার সংলগ্ন এলাকার লেবু মিয়া ২০০১ সালে তার ক্ষুদ্র একটি ব্যবসার পাশাপাশি শখের বশে এ নার্সারির কাজ শুরু করেন।

প্রাথমিক অবস্থায় ২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে নিম গাছ লাগিয়ে শুরু হয়। দুই দিঘা থেকে বর্তমানে নার্সারি প্রসারিত হয়েছে ৪৯ বিঘায়। শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এ নার্সারির নাম দেয়া হয় তার ছেলের নাম অনুসারে এ. আর. মামুন নার্সারি।

তার ছেলের সে সময় বয়স ছিল চার বছর। যদিও মামুন লেখাপড়া কালীন অবসর সময়ে বাবার কাজে সাহায্য করতেন। একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স কমপ্লিট করা মামুন এখন এ নার্সারির হাল ধরেছেন।

মামুন জানান বর্তমানে উৎপাদিত চারা গাছের সংখ্যা ১০ লক্ষাধিক। নিজস্ব মাতৃ গাছ থেকে কলম পদ্ধতির মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা হয়। কাঠ ছাড়াও রয়েছে ফলমূল ও ঔষধি। ঔষধি গাছ প্রায় ৬০ প্রজাতির। এদের মধ্য উল্লেখযোগ্য তুর্ট্রচন্দ্রাল, কাটা মুকুট, ভীমরাজ। বর্তমানে শোভা বর্ধনকারী গাছ নিয়ে

কাজ করছেন বলে মামুন জানান। তাছাড়া ফলের মধ্য শোভা পাচ্ছে সাদকি ও চায়না কমলা, ফিলিপাইন আখ, কালো আখ, বারো মাসি আম বারি-১১ ও কাটিমন, সুইট লেমন, প্যাশন ফ্রুট বা আনারকলি, ম্যানিলা চেরি, বারো মাসি মিষ্টি আমড়া, ভিয়েতনামি ও সাউথ আফ্রিকান মাল্টা, অ্যাভোকাডো এবং ত্বীন। ফুলের মধ্য রয়েছে বেবিটিয়ার্স, সাদা লজ্জাবতী, অনন্ত লতা, ক্যামেলিয়া, এ্যাজেলিয়া এডেলিয়াম (বীজ) ফনিক্স ও এরিক পাম্প, এবং লাইলী-মজনু উল্লেখযোগ্য।

মোটকথা দেশি-বিদেশি সহ বিভিন্ন জাতের ফুল, ফল, এবং ঔষধি গাছের চারা এখানে রয়েছে। দুধরাজ, হাড়জোড়া ও স্বর্ণ চাপা সহ প্রায় ২৫ প্রজাতির বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া চারাও এখানে পাওয়া যায়। বিদেশেও নার্সারির বিভিন্ন জাতের চারা বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া নার্সারির নিয়ে কনটেইন ক্রিয়েট করেন এবং অনলাইনে চারা বিক্রি করে থাকেন।এখানে মহিলা পুরুষ সহ ৩০ জন লোক প্রতিদিন কাজ করছে। নার্সারির থেকে তাদের প্রতি বছর আয় প্রায় ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকা। এ বাগানের আয় থেকে বানিয়েছেন বাড়ি, কিনেছেন গাড়ি।

২০১৪ সাল থেকে জেলা বৃক্ষ মেলায় টানা ৯ বার প্রথম এবং ২০২২ সালে জাতীয় পর্যায়ে বৃক্ষ মেলায় প্রথম স্থান অধিকার করে এ নার্সারি। বৃক্ষ বৃক্ষরোপণে অসাধারণ অবদান ও প্রতিভা রাখায় ২০২৩ সালে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন এ. আর. মামুন।
মামুন মা-বাবার দ্বিতীয় সন্তান, তার বড় ভাই একই বাগানে তদারকিতে নিয়োজিত আছেন, ছোট বোন অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker