কৃষি ও পরিবেশ

বর্ষা বিলিয়ে দেয় আমাদেরকে ফুলের সৌন্দর্য

শহীদুল ইসলাম শরীফ, স্টাফ রিপোর্টার:

ঋতুর রানি বর্ষা। বর্ষার প্রথম মাস আষাঢ়ের অগ্রদূত। এই বর্ষাতেই ফুলের শুভ্রতা ছড়ায়। পাশ্চাত্য দেশে যেমন বসন্ত কালকে ফুলের ঋতু বলা হয়, তেমনি বাংলাদেশের বর্ষাকালকে ফুলের ঋতু হিসেবে ধরে নেয়া যায়।

Image

বর্ষার ফুল স্বাতন্ত্র্য দিয়ে আসছে আবহমান কাল ধরেই আমাদের দেশে। এ সময়ে প্রেমিকাও হয়ে উঠে প্রেমিকের কাছে আরও আকর্ষণীয়। প্রেমিক-প্রেমিকাদের মনে রং লাগিয়ে আসে ফুলের উজ্জ্বল উপস্থিতি। বর্ষা নামলেই প্রেমিকের হাত চলে যায় প্রিয়ার খোঁপায়, আর প্রেমিকার চোখ চলে
যায় জানালার ফাঁক দিয়ে বাইরে ফুলের উপর টুপটাপ বৃষ্টি পড়ার দিকে।

আপন করে বিলিয়ে দেয় বর্ষা বাংলাদেশকে এবং ফুলের সৌন্দর্য আমাদের করে তোলে সম্পদশালী। নাম না জানা অনেক ফুল ফোটে, ঝরে, যার কোনো ইতিহাস লেখা হয় না। বর্ষার যে ফুলগুলো আমাদের দৃষ্টিকে সচকিত করে তা হলো কেয়া, কদম, কলাবতী, শাপলা, পদ্ম, ঘাসফুল এবং
এছাড়া নানা রঙের অর্কিড।

Image

কদম, বাংলাদেশের কদমফুল বিরহের প্রতীক। রাঁধা ছুটে গিয়েছিলেন কদমগাছের তলে বাঁশীর কলধ্বনিতে। আজ আর সেই কৃষ্ণ নেই, রাধা নেই। চির বিরহের হাহাকার আছে, কিন্তু বাঁশি নেই। আছে রাধাকৃষ্ণের নতুন সংস্করণ। আজও বর্ষায় কদমফুল বেয়ে অশ্রু ঝরে। কেয়া, বর্ষাকালে কদমফুল যেমন দেয় দৃশ্যের আনন্দ. সেরকম এই কেয়া ফুল দেয় সৌরভের গৌরব। রমণীর সুনামের মতোই ছড়িয়ে আছে কেয়া ফুলের সুগন্ধের খ্যাতি।

অনেক সময় ফুলগুলো পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে। সাপ ও বিষাক্ত কীটপতঙ্গ গাছে জড়িয়ে থাকে এর ঘ্রাণে বিমুগ্ধ হয়ে। সুন্দরকে তুলতে গিয়ে মৃত্যু নামক অসুন্দরের কোলে ঢলে পড়তে হয় অনেককেই। কলাবতী, বর্ষার এক অনন্য ফুল। এর আরেক নাম সর্বজয়া। গ্রাম বাংলার আনাচে-কানাচে কিংবা শহরের বিলাসী বাগানে লাল-হলুদ এবং লাল ও হলুদ মেশানো কলাবতী ফুল পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

পদ্মফুল, গ্রাম-বাংলার মানুষের কাছে অতি পরিচিত একটি। এক সময় বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামের নদ- নদী ও জলাশয়ে আপনা আপনি বেড়ে উঠতো এই নান্দনিক সুন্দর পদ্মফুল। প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদ্মের ব্যবহার হয়ে আসছে। পদ্মফুল কে নিয়ে বিভিন্নজন বিভিন্ন উক্তি করেছেন, যেমন- পদ্মফুলের মত আমিও এই জগতে বিশুদ্ধতা ও সৌন্দর্য নিয়ে এসেছি প্রিয়, বন্ধুত্ব কি? তা পানি ও পদ্মফুলের মধ্যেই দেখা যায়, বিপদ দেখে কেউ করিস না ভয়, পিছনে তো পদ্মফুল হাসে, পদ্ম ফুল আমাদের মনে করিয়ে দেয় এই কঠিন পৃথিবীতে কিভাবে ভিতরে নরম থেকে বাহিরে সংগ্রাম করতে হয়।

তুমি যতই প্রতিকূল পরিবেশে থাকনা কেন, তুমি যদি সাহসি ও দৃঢ় প্রত্যয়ী হও সফল তুমি হবেই পদ্মফুলের মত। এ ধরনের আরও অনেক উক্তি আছে। শাপলা, এ ফুলের সাথে অন্য কোন ফুলের তুলনা চলে না। কেননা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা লাভের পর এই ফুল জাতীয় ফুলের মর্যাদা লাভ করেছে। এ ফুল পুকুর-ডোবা, খালবিলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।

এগুলো পানিতে ভাসতে পারে। শাপলা ফুল নোঙর বদ্ধ ভাসমান উদ্ভিদ। শাপলা ফুল ভোর বেলা ফোটে এবং দিনের আলো বাড়ার সাথে সাথে পাপড়ি বুজে যায়। সরাসরি কাণ্ড ও মূলের সাথে যুক্ত থাকে। শাপলার পাতা আর ফুলের কাণ্ড বা ডাটি বা পুস্পদণ্ড পানির নিচে মূলের সাথে যুক্ত থাকে। আর এই মূল যুক্ত থাকে মাটির সঙ্গে এবং পাতা পানির উপর ভেসে থাকে। মূল থেকেই নতুন পাতার জন্ম নেয়। পাতাগুলো গোল এবং সবুজ রঙের হয় কিন্তু নিচের দিকে কালো রঙ।

ভাসমান পাতাগুলোর চারদিক ধারালো হয়। শাপলা ফুল অনেক রঙের হলেও কেবল সাদা শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুলের মর্যাদা পেয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের পয়সা, টাকা, দলিলপত্রে জাতীয় ফুল শাপলা বা এর জলছাপ আঁকা থাকে। ফুল দেয় সৌন্দর্য , দেয় গান , প্রেম দেয়, কর্মোদ্দীপনা দেয়, অলংকার দেয়, সমৃদ্ধি দেয়, দেয় অপার আনন্দ। তাই তো প্রত্যয় দৃপ্তকণ্ঠে উচ্চারিত হয় বর্ষা ও তার ফুল বাংলাদেশের আত্মা, এর প্রকাশ মানেই হৃদয় থেকে হৃদয়ের প্রকাশ।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker