সাদা মেঘের ভেলা আর হাওয়ায় দোল খাওয়া কাশফুল মনে করিয়ে দেয় শরৎ এসে গেছে। আর শরৎ মানেই শারদীয় উৎসব। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। প্রেম-প্রীতি ভালোবাসা আর আত্মীয়তার সেতুবন্ধন সুদৃঢ়ভাবে গড়ে ওঠে এই শারদীয় উৎসবের মধ্য দিয়েই। তাই এ উৎসবকে ঘিরে শেষ সময়ের চরম ব্যস্ততায় সময় পার করছেন টাঙ্গাইলের কালিহাতীর প্রতিমা তৈরির শিল্পীরা। দিন রাত পরিশ্রম করে তাদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি করছেন একেকটি অসাধারণ সুন্দর প্রতিমা। এরই মধ্যে মাটির কাজ শেষ করে এখন চলছে সাজসজ্জার কাজ। রঙ-তুলির আঁচড়ে দেবী দুর্গাকে সাজিয়ে তুলতে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি।
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর কালিহাতী উপজেলায় ১৮২ টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কালিহাতী পৌরসভায় ৪৪ টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
কালিহাতী কেন্দ্রীয় জয়কালি মন্দিরের পুরোহিত মিহির ভট্টাচার্য (মধু) জানান, এ বছর দেবী দুর্গা ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে আসবেন। এর ফল হচ্ছে ছত্রভঙ্গ। আর দেবী স্বপরিবারে স্বর্গালোকে দোলায় (পালকি) চড়ে বিদায় নেবেন। যার ফল হচ্ছে মড়ক।
তিনি আরও জানান, আগামী ১১ অক্টোবর থেকে ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে দুর্গাপূজা শুভারম্ভ হবে। যথাক্রমে ১২ অক্টোবর সপ্তমী, ১৩ অক্টোবর অষ্টমী, ১৪ অক্টোবর নবমী ও ১৫ অক্টোবর দশমীর দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জ্জনের মধ্য দিয়ে এবারের শারদীয় দূর্গোৎসব সম্পূর্ণ হবে।
এদিকে কয়েকদিন পড়েই ঢাকের বাজনা, উলুধ্বনি আর আরতিতে মুখরিত হয়ে উঠবে পাড়া-মহল্লা থেকে গ্রাম।
সরেজমিনে দেখা যায়, এরইমধ্যে মন্দিরগুলোতে খড় ও মাটি দিয়ে পরম যত্নে গড়ে উঠেছে প্রতিমা। প্রতিটি প্রতিমাকে রঙ-তুলির আঁচড়ে রাঙাতে বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পীরা। দুর্গাপূজা উৎসবকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে চলছে ব্যাপক সাজসজ্জার কাজও। প্রতিটি মণ্ডপে দেবী দুর্গার সাথে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ ও কার্তিকসহ অন্যান্য প্রতিমাগুলোকে। যেন দম ফেলার ফুসরত নেই মৃৎশিল্পীদের। নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় প্রতিমাগুলোর রূপকে ফুটিয়ে তুলছেন তারা।
প্রতিমা শিল্পী দীনবন্ধু পাল, গকুল চন্দ্র পাল জানান, তারা এবছর একেকজন ৭ থেকে ১০ টি করে প্রতিমা তৈরি করছেন। ষষ্ঠী পূজা শুরুর দিন পর্যন্ত রঙ-এর কাজ করতে হবে তাদের। তবে চাহিদার তুলনায় মজুরি কম পাচ্ছেন তারা। সেই সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে পরিশ্রমের পর প্রতিমা তৈরি করে যে মজুরি পান তা দিয়ে জীবন যাপন করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে চলে গেলেও বাপ দাদার আদি পেশা টিকিয়ে রাখছেন তারা।
কালিহাতী থানার ওসি মোল্লা আজিজুর রহমান বলেন, হিন্দুধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আমরা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ সহ কালিহাতী উপজেলার প্রতিটি পূজা মন্ডপগুলোর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকদের সাথে ইতিমধ্যে মতবিনিময় সভা করেছি। কোথাও কোন সমস্যা আছে কিনা জানতে চেষ্টা করেছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সজাগ দৃষ্টি রাখছে। পুলিশের পক্ষ থেকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও সহকারী উপ-পরিদর্শকদের (এএসআই) বিভিন্ন মণ্ডপের দায়িত্ব দিয়ে নিয়মিত টহল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি সবকটি পূজামণ্ডপ গোয়েন্দা নজরদারিতেও থাকবে। পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যদেরও টহল থাকবে। এছাড়া আমি নিজেও মাঠে থেকে তদারকি করব। আশা করছি কোথাও কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হবে এবারের শারদীয় দুর্গাপূজা। তবে এ জন্য তিনি সকল স্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন।
Subscribe
Login
0 Comments
Oldest