প্রমত্তা যমুনার ওপর বিদ্যমান যমুনা বহুমুখী সেতুর ৩০০ মিটার উজানে নবনির্মিত যমুনা রেল সেতু দিয়ে বুধবার(১২ ফেব্রুয়ারী) বাণিজ্যিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা ১১টি বগি সম্বলিত সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ৬০০ যাত্রী নিয়ে এদিন সকাল ১১টা ১৮ মিনিটে যমুনা রেলসেতু পারাপারের মধ্য দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
মাত্র ছয় মিনিটে ১১টা ২৪ মিনিটে ট্রেনটি সেতু পাড় হয়। ট্রেনের গতিবেগ ছিল প্রায় ৭০ কিলোমিটার। এর মধ্য দিয়ে যমুনা বহুমুখী সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেল।
যমুনা রেল সেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান জানান, ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকের লাইনের সেতুর দুটি লাইনের মধ্যে একটি লাইনে আজ বাণিজ্যিকভাবে ট্রন চালু হলো। পর্যায়ক্রমে শিডিউল অনুযায়ী বাকি ট্রেনগুলো চলবে। ফলে যমুনা বহুমুখী সেতু দিয়ে আর ট্রেন চলবে না।
তিনি জানান, ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ যমুনা রেল সেতুতে দুটি লাইন থাকলেও প্রথমে একটি লাইন দিয়েই উভয় দিকে ট্রেন চলাচল করবে। ঢাকা থেকে যেতে ডান পাশের লাইন, অর্থাৎ সেতুর উত্তর পাশের লাইনটি দিয়ে ট্রেন চলবে।
আপাতত একটি লাইনে উভয়দিকে ট্রেন চলবে। তবে আগামি ১৮ ফেব্রুয়ারি রেল সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। যোগাযোগ উপদেষ্টাসহ কর্মকর্তারা ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। ওই দিন থেকে দুই লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জের প্রমত্তা যমুনা নদীর ওপর যমুনা বহুমুখী সেতুর ৩০০ মিটার উজানে নির্মিত দেশের দীর্ঘতম যমুনা রেল সেতু দিয়ে বুধবার সকালে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
এ সেতু দিয়ে বিরতিহীনভাবে কমপক্ষে ৮৮টি ট্রেন দ্রæতগতিতে সেতু পারাপার হতে পারবে। ফলে সেতু পারাপারে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় বেঁচে যাবে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মন্ডল জানান, প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক ট্রেন যমুনা রেলওয়ে সেতু পাড় হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সিডিউল অনুযায়ী বাকি ট্রেনগুলো চলাচল করবে। এখন থেকে নিয়মিতভাবে যমুনা রেলওয়ে সেতু দিয়েই ট্রেন চলাচল করবে। যমুনা বহুমুখী সেতুতে (বঙ্গবন্ধু সেতুতে আর ট্রেন চলবে না।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আজাদুর রহমান মোবাইল ফোনে জানান, এদিন সকালে রাজশাহী থেকে ৬০০ যাত্রী নিয়ে ১১ বগির সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে গেছে।
১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যমুনা নদীর ওপর নির্মিত সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। বুধবারের আগ পর্যন্ত প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হচ্ছিল।
এ সমস্যা সমাধানে ২০২০ সালের ৩ মার্চ যমুনা নদীর ওপর বিদ্যমান সড়ক সেতুর উজানে আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর সমান্তরালে ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকের ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলসেতু নির্মাণের পরিকল্পনা অনুমোদন করে তৎকালীন সরকার। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর রেল সেতুটির নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর
২০২১ সালের মার্চে রেল সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। প্রথমে প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা নির্ধারিত হলেও পরে তা ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় উন্নীত হয়।
এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ অর্থায়ন এসেছে দেশীয় উৎস থেকে এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি(জাইকা)। দেশের বৃহত্তর এ রেল সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেছে জাপানি কোম্পানি ওটিজি ও আইএইচআই(জয়েন্টভেঞ্চার)।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকের এ রেলসেতু ব্যবহারের জন্য ৭ দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ, সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হয়।
প্রকল্পের শুরুতে এই সেতুর নাম ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বছরের ডিসেম্বরে সেতুটির নাম পাল্টে যমুনা রেল সেতু রাখা হয়।