বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্দেশ্যে সারা দেশের নাগরিকদের মতামত গ্রহণের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আজ বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন এ কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’।এ সংক্রান্ত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মুখে গণহত্যাকারী আওয়ামী ফ্যাসিবাদী লীগের পতন ঘটে এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের পতন ঘটলেও রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী উপাদানের বিলোপ ঘটেনি।
গণঅভ্যুত্থানের এক দফা তথা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়ন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ প্রদান এবং সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের বাংলাদেশ গড়ার কাজ এখনও অসমাপ্ত রয়ে গেছে । এই জনপদের মানুষ ১৯৪৭-এর পাকিস্তান আন্দোলন, ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ এর অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি জুলুম-শোষণহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা বারবার ব্যক্ত করেছে।
কিন্তু পূর্বের বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো এই আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবরূপ দিতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আরেকবার এদেশের মানুষের সামনে গাঠনিক মুহূর্ত হাজির হয়েছে। সময়ের পরিক্রমায় ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে সংঘটিত অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করা দেশের সর্বস্তরের নাগরিকগণের; বিশেষত, তরুণ জনগোষ্ঠীর নতুন আকাঙ্ক্ষা ও রাষ্ট্রকল্প তৈরি হয়েছে। কিন্তু বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো তা ধারণ করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।
ফলে অভ্যুত্থানের শক্তি ছাত্র-তরুণরা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হওয়া নতুন আকাঙ্ক্ষা ও রাষ্ট্রকল্পকে ধারণ করে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী জনতাকে সাথে নিয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আসল পরিবর্তন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসগুলোতে ঘটে না। এই কারণেই আমরা মাঠে আছি, কৃষকদের সাথে আছি, রিক্সাচালকদের কথা শুনব এবং বিরতির সময় পোশাক শ্রমিকদের কথা শুনব । এই দল উপরে থেকে নয়, জনগণের মধ্য থেকে উঠে আসবে।’‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ ’ স্লোগানের আওতায় পরামর্শমূলক উদ্যোগের লক্ষ্য সারা দেশে সকল কমিটি এবং তাদের কর্মীদের বিস্তৃত নেটওয়ার্ককে যুক্ত করা।
রিকশাচালক, দোকানদার, দিনমজুর, গৃহকর্মী, শিক্ষক, ঝাড়ুদার এবং সর্বস্তরের এক লক্ষেরও বেশি মানুষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনার বিষয়ে তাঁদের মতামত চাওয়া এই কর্মসূচির লক্ষ্য।নতুন দলটি কিছু মানুষের নয়, অনেকের কণ্ঠস্বর হতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং যারা বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার দ্বারা বাদ পড়েছে তাদের প্রতিনিধিত্ব করবে।
আমরা সকল নাগরিকের কথা শোনার মধ্য দিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা ধারণ করি।মূল তথ্য: কর্মসূচীর লক্ষ্য হল নতুন রাজনৈতিক দল সম্পর্কে তাদের মতামত সংগ্রহের জন্য প্রায় এক লাখ মতামত সংগ্রহ করা। নতুন দলের জন্য নাম ও প্রতীক প্রস্তাব দেওয়ার জন্যও জনগণকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি একটি অনন্য উদ্যোগ, যেখানে এত ব্যাপক আকারে জনমত সংগ্রহ করা হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি উভয়ই জুলাই বিপ্লবের চেতনা রক্ষার জন্য স্বতন্ত্র রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসাবে অব্যাহত থাকবে এবং জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে এমন একটি রাজনৈতিক দল গড়ে তোলার জন্য একসাথে কাজ করবে।