জাতীয়

নির্বাচন কমিশন এর প্রস্তাবনা: পুরোনো পাত্রে নতুন দ্রব্য

বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তথা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন যে প্রস্তাবনা দিচ্ছে, তা অনেকের কাছেই বিতর্কিত হয়ে উঠেছে। নতুন এই প্রস্তাবনায় নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় এমন পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে, যা অনেকের মতে গণতন্ত্রের মৌলিক নীতির পরিপন্থি।

নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ইউনিয়ন পরিষদ এবং পৌরসভায় চেয়ারম্যান বা মেয়র পদে সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচন না হয়ে শুধুমাত্র মেম্বার বা কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার বিধান করা হচ্ছে। এটি অনেকটা পাকিস্তান আমলের পদ্ধতির মতো, যেখানে চেয়ারম্যানকে প্রেসিডেন্ট বলা হতো এবং নির্বাচনের ক্ষেত্রে মেম্বারদের প্রভাব ছিল প্রধান।

তৎকালীন সময়ে অর্থের বিনিময়ে কিংবা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চেয়ারম্যান পদ দখলের ঘটনা ঘটেছিল। পরবর্তীতে এ পদ্ধতিটি পরিবর্তন করা হয়েছিল, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করেছিল। কিন্তু বর্তমান প্রস্তাবিত ব্যবস্থায় ধনী ও প্রভাবশালীরা আরও সুবিধাজনক অবস্থানে চলে যাবে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নষ্ট হতে পারে।

প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে মেম্বার বা কাউন্সিলররা নিজেদের স্বার্থরক্ষার জন্য একত্রিত হয়ে একজন চেয়ারম্যান বা মেয়র নির্বাচন করবেন। ফলে নির্বাচনী অনিয়ম, দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতির আশঙ্কা অনেকগুণ বেড়ে যাবে। তাছাড়া, ধনী ও প্রভাবশালীরা মেম্বারদের আর্থিক সুবিধা বা ভয়ভীতির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। ভোটের দিন তারা নিছক আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে উপস্থিত হবে এবং আগেই নির্ধারিত প্রার্থীকে নির্বাচিত করবে।

নির্বাচন কমিশনের আরেকটি আলোচিত প্রস্তাবনা হলো নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্তারোপ। যদিও শিক্ষিত ব্যক্তিদের নেতৃত্বে আসা জরুরি, তবে বাস্তবতা হলো দেশে শিক্ষিত দুর্নীতিবাজের সংখ্যা নেহাত কম নয়। ব্যাংক কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে নানা অর্থনৈতিক অনিয়মের সাথে শিক্ষিত ব্যক্তিরাই বেশি জড়িত। ফলে শুধুমাত্র শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে যোগ্য নেতৃত্ব নির্ধারণ করা যথাযথ হবে না।

এছাড়া চাকরিজীবীদের মেম্বার নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হলে তারা কি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে? চাকরির পাশাপাশি তারা জনপ্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব কতটুকু সঠিকভাবে পালন করতে পারবে তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। জনসেবা কোনো পার্ট-টাইম কাজ নয়; এটি পূর্ণ সময়ের দায়িত্বের বিষয়।

নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবনার বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণ এবং বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া তীব্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ মানুষ এই পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এমন করলে মেয়র বা চেয়ারম্যান হওয়া সহজ হবে যাদের টাকা থাকবে। ৯ জন মেম্বারকে টাকা দিলেই চেয়ারম্যান হওয়া সম্ভব৷

চেয়ারম্যান হতে যদি ডিগ্রি লাগে তাহলে এমপি হতে তো ডক্টরেট ডিগ্রি লাগবে, জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারলে এই কমিশনের কোনো দরকার নেই। শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে আপত্তি নেই, তবে মেম্বারদের ভোটে যদি মেয়র নির্বাচিত হয়, তবে এই নিয়মকে প্রত্যাখ্যান করলাম। আমরা মেয়র নির্বাচনে সরাসরি ভোট চাই।

চেয়ারম্যান বা মেয়র নির্বাচন সরাসরি জনগণের ভোটে হওয়া উচিত- এতে গণতন্ত্রের প্রকৃত চর্চা নিশ্চিত হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতার পরিবর্তে নৈতিকতা ও দক্ষতা বিবেচনা করা উচিত- দুর্নীতি প্রতিরোধে স্বচ্ছ প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।

নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সম্পদের হিসাব সংযুক্ত করা উচিত- প্রার্থীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির বিবরণ নির্বাচন পূর্বে ও পরে দাখিল করা বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। চেয়ারম্যান বা মেয়র নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের সরাসরি প্রভাব থাকা উচিত নয়- এতে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা বজায় থাকবে।

ফেইস বুক (facebook) এ কয়েক জনের অভিমত হুবহু তুলে ধরা হলো: MD Nasir Uddin: এমন করলে মেয়র বা চেয়ারম্যান হওয়া সহজ যাদের টাকা থাকবে। একটা ইউনিয়ন এ ৯টা ওয়াড নয় জন মেম্বার কে টাকা দিলেই কাজ হয়ে যাবে যার টাকা বেশি থাকবে

@oppochatkhil5088: চেয়ারম্যান হতে যদি ডিগ্রি পাশ লাগে তাহলে এমপি হতে তো ডক্টরেট ডিগ্রি লাগবে @peace9127: জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারলে এই কমিশনের প্রয়োজন নেই। @GskhGskhh: তাহলেতো মেয়র চেয়ারম্যানদের কোন খরচ কম হবে অল্প লোকজনরে টাকা দিয়ে কিনতে হবে বেশি টাকা লাগবে না কার নির্বাচন হলেই তো টাকার খেলা একজন চেয়ারম্যান যদি শুধু মেম্বারকে টাকা দিয়ে কিনতে পারে তাহলেই তোষে চেয়ারম্যান হয়ে যাবে

@HumaunKobir-x1v: শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে আমার কোন আপত্তি নাই এটা একটা ভালো নিয়ম। তবে কমিশনারদের ভোটে যদি মেয়র নির্বাচিত হয় তবে এই নিয়ম কে প্রত্যাখ্যান করলাম। আমরা মেয়র নির্বাচনের সরাসরি ভোট চাই।

@MdTohid-jh7zn: মেয়র,কমিশনার,এবং চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত থাকলে তারাও নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে না। এমন নিয়ম করা উচিত।

@md.abdurrafiqsha9271: ভালোই,,,হবে,,,,,তবে,,,,,,জনগনের ভোট সব জায়গায় রাখতে হবে,,,,,শুধু মেম্বার বা কাউন্সিলার ভোটে সরাসরি জনগনের অংশগ্রহণ থাকলে হবে না,,,,একই সাথে,,চেয়ারম্যান ও মেয়র পদেও সরাসরি জনগনের অংশগ্রহণ থাকতে হবে,,,,,,,তা না হলে যদি শুধু মেম্বারদের ভোটে চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলার এর ভোটে মেয়র নির্বাচিত হয়,,,,তাহলে ব্যপক দুর্নীতি মাধ্যমে চেয়ারম্যান ও মেয়র পদ বাগিয়ে নিবে,,,,সমাজের ক্রিমিনাল, কালোবাজারি,,,করা ব্যাক্তিরা।,,,,,,ভালো মানুষ ও সততাবান ব্যাক্তিরা,,,,,শুধু টাকার কাছে হেরে জাবে,,,,,,,,।

নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত পরিবর্তন বাস্তবায়িত হলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচিত না হলে তা স্থানীয় সরকারের কার্যকারিতা দুর্বল করতে পারে এবং অনিয়মের সুযোগ বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই, প্রস্তাবিত পরিবর্তন পুনর্বিবেচনা করা দরকার, যাতে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা পায় এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও ন্যায়সংগত হয়।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker