চট্টগ্রাম

চমেক হাসপাতাল বার্ণ ইউনিট নির্মাণে পাহাড় না কাটার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভঙ্গ, গাছ লাগিয়ে প্রতিবাদ পরিবেশকর্মীদের

বিগত কয়েকমাস আগেও পাহাড়টি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে ছিল স্বমহিমায়। চট্টগ্রাম নগরের কাটা পাহাড় সংলগ্ন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ছাত্রাবাসের পাশেই বিশাল এই পাহাড়টির সামনে একটি বিশেষায়িত বার্ণ ইউনিট স্থাপনের উদ্যোগ নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পাহাড়কে রেখে এই ইউনিট করার কথা থাকলেও আচমকাই বিশাল এই পাহাড়টি কাটা শুরু করে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সবার অগোচরে পাহাড় কাটার এই কর্মযজ্ঞ চট্টগ্রামে কর্মরত পরিবেশকর্মী ও বিভিন্ন সংগঠনের নজরে পড়ায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিক বৈঠক হয় পরিবেশ সংগঠন ও কর্মীদের। সেখানে কর্তৃপক্ষ পাহাড়টি রেখেই বার্ণ ইউনিট গড়ে তোলার অঙ্গীকার করে। 

কিন্তু ২ দিন না যেতেই সবাইকে ফাঁকি দিয়ে প্রধান গেইট বন্ধ করে রাতে ও দিনে স্কেভেটর দিয়ে পুরো পাহাড়টির অর্ধেক অংশ কেটে সাবাড় করে ফেলে কর্তৃপক্ষ। কেটে ফেলা হয় শতবর্ষী বেশ কয়েকটি গাছও। উপড়ে ফেলা হয় গাছগুলোর শেকরও।

পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা, এবং কোনো ধরণের ছাড়পত্র না নিয়েই পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষাকারী পাহাড় কেটে সাবাড় করার দৃশ্যটি চোখে পড়ে পরিবেশকর্মীদের। 

Image

মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে সেই পাহাড়ে অবস্থান নেন চট্টগ্রামের পরিবেশকর্মী ও পরিবেশ বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠন। সেখানে প্রতিবাদ সমাবেশের পাশাপাশি প্রায় আড়াই শতাধিক গাছ লাগিয়ে প্রতিবাদ করেন তারা। পরিবেশ কর্মীদের আহবানে সাড়া দিয়ে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগও অংশ নেয় গাছ লাগানোর কর্মসূচিতে। সরকারি এই সংস্থাটি আড়াই শতাধিক গাছ নিয়ে পরিবেশকর্মীদের সাথে নিয়ে রোপন করে দেন পাহাড়টিতে। 

মঙ্গলবার এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন পরিবেশবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মাহফুজুর রহমান, উদ্ভিদ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এমএ গফুর, ডা. মনজুরুল করিম বিপ্লব, পরিবেশকর্মী ঋতু পারভীন, রাশেদ সুফিয়ান, মো. শফিকুল ইসলাম খান, মাহমুদ মুরাদ, এআরটি রাহী, মো. রহিম, আনোয়ার জাহান রোজি, পরিবেশ, মানবাধিকার ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এমএ হাশেম রাজুসহ পরিবেশ সংগঠন সম্মিলিত পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন, সংহতি প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ

সমিতি (বেলা), ভোরের আলোসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন।  প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, আমরা উন্নয়নের বিপক্ষে নই। চট্টগ্রামে বার্ণ ইউনিটের অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু সেটি পাহাড় কেটে, পরিবেশ ধ্বংস করে নয়। কয়েকজনকে বাঁচানোর নামে লক্ষ কোটি মানুষকে মৃত্যুঝুঁকিতে ফেলার অধিকার কারও নেই।

কয়েকজন মানুষকে অক্সিজেন দিতে গিয়ে লক্ষ কোটি মানুষের প্রাকৃতিক অক্সিজেন ধ্বংস করার অধিকার আপনাদের নেই। পরিবেশকর্মীরা বলেন, একাধিকবার বৈঠক করে পাহাড় না কাটার অঙ্গীকার করেও রাতের আঁধারে পাহাড় কেটে সাবাড় করার নির্দেশদাতা প্রতিটি পাহাড়কখেকো, বার্ণ ইউনিটসংশ্লিষ্ট প্রকল্পের কর্মকর্তা, প্রকৌশলীসহ যারা এই পাহাড় কাটার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষাভাবে জড়িত তাদেরকে অতিদ্রুত আইনের আওতায় আনার জোড় দাবি জানাচ্ছি।

সেই সাথে হুঁশিয়ার করে দিয়ে তারা বলেন, এই পাহাড়ে যদি আর একটিও কোপ পড়ে তাহলে এখানে পরিবেশকর্মী শুধু নয়, চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে।

যারা পাহাড় কাটবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা ভঙ্গ করেছে তাদেরও শেষবারের মতো হুঁশিয়ারি দেয়া যাচ্ছে- ছাড় দেয়া হবে না। প্রকৃতি-পরিবেশ ধ্বংস করে কোনো উন্নয়ন কাজ আমরা চাই না।

Author

মোহাম্মদ ইসমাইল (ইমন), স্টাফ রিপোর্টার

পেশায় একজন সাংবাদিক। তিনি ৩০ মে থেকে মিশন ৯০ নিউজে চট্টগ্রাম বিভাগীয় এলাকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে, সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker