জাতীয়

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আবার উঠছে ২০ বছর আগের প্রশ্ন

ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ২৪ জনের প্রাণহানি এবং তিন শতাধিক মানুষের আহত হওয়া, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলা সাজিয়ে নিরপরাধ কিছু মানুষকে নির্যাতন-হয়রানির শিকার করা এবং মর্মান্তিক ওই ঘটনার বিচার অনিশ্চিত হয়ে যাওয়ার দায় কাদের? এই প্রশ্ন এখন অনেকের।

২০ বছর আগেই প্রশ্ন উঠেছিল, আওয়ামী লীগ সেদিন সমাবেশের স্থান মুক্তাঙ্গন থেকে হঠাৎ কেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেওয়া হয়েছিল? পূর্বঘোষিত কর্মসূচি থাকলেও কেন ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিলেন শেখ হাসিনা? শুধু কি গ্রেনেড বিস্ফোরণ হয়েছিল, নাকি প্রাণঘাতী নয়—এমন বোমাও ছিল? শেখ হাসিনার বক্তব্যের মাঝে হামলা না করে কেন হামলাকারীরা বক্তব্য শেষ করার সুযোগ দিয়েছিল? 

ট্রাকের পেছনে যে বোমা বিস্ফোরিত হয়েছিল তাতে হতাহত না হওযার কারণ কী? শেখ হাসিনা ট্রাক থেকে নেমে কিছু দূর হেঁটে নিজের গাড়িতে ওঠার সময় প্রশিক্ষিত হামলাকারীদের গুলি কিভাবে এড়াতে পারলেন? একমাত্র আইভী রহমান ছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মৃত্যু এড়াতে পারলেন কিভাবে? শেখ হাসিনা মার্সিডিজ গাড়ির কাচে যে চিহ্ন দেখানো হয়েছিল তা কি আসলেই গুলির চিহ্ন? এ হামলার জন্য আসলে করা দায়ী?

ঘটনা তদন্তে বিচারপিত জয়নুল আবেদীন কমিশনের প্রতিবেদনে এ ঘটনার জন্য প্রতিবেশী দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়ী করা হয়।

অবসরপ্রাপ্ত এএসপি এম এ রশীদও গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাদেরও মনে হয়েছিল, ওই ঘটনায় প্রতিবেশী দেশের হাত রয়েছে। তবে নানা ধরনের সমালোচনা ও প্রতিবন্ধকতার কারণে বিস্তারিত তদন্ত করতে পারিনি।

গত ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত সব আসামিকে খালাস দিয়ে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, আইনের ভিত্তিতে মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়নি। ২৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দির একটি আরেকটিকে সমর্থন করেনি। কোনো চাক্ষুষ সাক্ষী ছিল না।

আলোচিত ওই রায়ের পর মামলাটি কেন ও কিভাবে সাজানো হয়েছিল, ‘জজ মিয়া’ কি আসলেই সাজানো নাটক, গ্রেনেড না চেনা নিরপরাধ-নিরীহ ব্যক্তি—এসব প্রশ্নের উত্তর মিলছে।

জানা যাচ্ছে কিভাবে একজন সন্ত্রাসী ও ভয়ংকর অপরাধে একাধিক মামলার আসামিকে কারা ‘জীবনে গ্রেনেড দেখিনি, থানায় মামলা নেই’ বলে প্রচার চালিয়ে এ মামলার প্রথম তদন্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল। 

কোনো পত্রিকা ‘গভীর অনুসন্ধান’ হিসেবে ‘ইট ওয়াজ হাওয়া ভবন প্লট’ নামের প্রতিবেদন ছাপিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা এবং গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কর্মকর্তাদের আসামি করতে আওয়ামী লীগ সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে।

এদিকে গত ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এই অভিমত দেওয়া হয় যে যথাযথ ও বিশেষজ্ঞ সংস্থার মাধ্যমে নতুন করে তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এ মামলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো উচিত।

১ ডিসেম্বর রায় ঘোষণার দিন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা উচিত বলে নিজের মত  জানান। নতুন করে মামলাটি তদন্তের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি আছে কি না জানতে চাইলে গতকাল বুধবার অ্যাটর্নি জেনারেল কালের কণ্ঠকে বলেন, রায় না দেখে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। 

আলোচিত ওই মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী এস এম শাহজাহান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত নিয়ে হাইকোর্টের যে পর্যবেক্ষণ (পুনঃ তদন্তের), তাতে আইনে কোনো বাধা নেই। কিন্তু কথা হচ্ছে, কোনো একটি ঘটনা বা অপরাধের দুইবার বিচার হয় না।’

 

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker