রাজনীতি

কুমিল্লার রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের আবসান

কুমিল্লা জেলার রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে পরিবারতন্ত্রের কালো ছায়ায় আবদ্ধ ছিল। জেলার প্রায় প্রতিটি সংসদীয় আসন ও স্থানীয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাজনৈতিক পরিবারের সদস্যরা আসীন ছিলেন। তবে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবারতন্ত্রের এই প্রভাবের অবসান ঘটেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সিটি করপোরেশন এবং উপজেলা পরিষদ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্তদের অপসারণের মাধ্যমে পরিবারতন্ত্রের এই প্রভাব ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়।

কুমিল্লা এক আসনের সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভুইয়ার ছেলে মোহাম্মদ আলী ছিলেন দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।কুমিল্লা দুই আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল মজিদের স্ত্রী রেহানা মজিদ ছিলেন হোমনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ।

কুমিল্লা তিন আসনের সাংসদ জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ছেলে আহসানুল আলম সরকার কিশোর ছিলেন। মুরাদনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। কুমিল্লা ছয় আসনে টানা চার বারের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দীন এর জ্যেষ্ঠ কন্যা ডাক্তার তাহসিন বাহার সূচনা কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনের  মাধ্যমে মেয়র হয়েছিলেন। বিগত সরকারের সময় এ ভাবেই চলছিল কুমিল্লায় পরিবারতন্ত্র  ।

পারিবারিক রাজনীতির ঘেরাটোপে আবদ্ধ ছিল পুরো কুমিল্লা জেলা । কেমন ছিল কুমিল্লার রাজনীতির অবস্থা সেটি জেলার সংসদীয় আসনগুলো সাংসদ এবং তাঁদের আত্মীয়দের স্থানীয় প্রশাসনে পদ পদবি দেখলেই বোঝা যায়। জাতীয় সংসদের কুমিল্লা এক দাউদকান্দি ও তিতাস আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভুঁইয়া। তাঁর ছেলে দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন মুহাম্মদ আলি। এমনকি একই আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন বাবা ছেলে দুজনই। 

কুমিল্লা ছয় আসনের টানা চার বারের এমপি ছিলেন না ক ম বাহাউদ্দীন। এ বছরের গেল নয় মার্চ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের উপ নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন তাঁরই জ্যেষ্ঠ কণ্যা ডাক্তার তাহসিন বাহার সূচনা।

কুমিল্লা দুই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন অধ্যাপক আবদুল মজিদ। এ বারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন তিনি। এ আসনের হোমনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তার স্ত্রী রেহানা মজিদ।

কুমিল্লা তিন আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম সরকার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন তিনি। মুরাদনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন তাঁরই ছেলে আহসানুল আলম সরকার কিশোর। 

এদিকে এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা চার আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন আবুল কালাম আজাদ। পরবর্তীতে তার ছোট ভাই মামুনুর রশিদ নির্বাচিত হন, দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান হিসাবে। ২০২০ সালে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার চেয়ারম্যান আবু তাহেরের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে জয়ী হন এম এ জাহের। এর চার বছর পর জাতীয় নির্বাচনে কুমিল্লা পাঁচ আসনের সংসদ সদস্য হন  তিনি।

আর ওই ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার চেয়ারম্যান হন, তার ভাতিজা আবু তৈয়ব অপি। কুমিল্লার বরুড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের শ্যালক হামিদ লতিফ ভুঁইয়া। 

কুমিল্লা নয় আসনে টানা চারবার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, ছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের দুই মেয়াদে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে ছিলেন তার ভাতিজা মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম। শুধু তাই নয়, তাজুল ইসলামের শ্যালক মহব্বত আলী টানা তিনবার লাকসাম উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। 

লালমাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ভাতিজা কামরুল হাসান শাহীন।এ ছাড়া তার ছোট ভাই গোলাম সারওয়ার তিন মেয়াদে সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। উল্লেখ্য, গত  ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে পলাতক রয়েছেন এরা সবাই, আর এখন তাদের কারোরই পদপদবী না থাকায় পরিবারতন্ত্রের কালো ছায়া থেকে একরকম মুক্তি পেয়েছে কুমিল্লাবাসি।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker