ক্রিকেট

পাপন ছিলেন ক্রিকেটের ‘হাসিনা’

‘হোয়াট মিস্টার প্রেসিডেন্ট?’

পাশে বসা ভদ্রলোকের বাংলায় বলা কথার ‘লন্ডন’ শব্দটিই শুধু উদ্ধার করতে পেরেছিলেন ইংলিশ কোচ স্টিভ রোডস। বাকিটা বুঝতে না পেরে জানতে চেয়ে জবাব পেয়েছিলেন, ‘না, না…তেমন কিছুই নয়।’

আসলে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কথাটি বাংলাদেশ দলের হেড কোচের জন্য প্রীতিকর ছিল না মোটেও, ‘হুম বুঝেছি, তোমাকে লন্ডনের ফ্লাইটে তুলে দেওয়ার সময় এসে গেছে!’ এটি ২০১৮ সালের এশিয়া কাপ ফাইনালের আগের দিন সন্ধ্যার ঘটনা। দুবাইয়ের ফেস্টিভাল সিটির হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে টিম মিটিংয়ে আলোচনা চলছিল পরের দিন ভারতের বিপক্ষে ফাইনালের একাদশ নিয়ে।

রোডস তিন সংস্করণের বর্তমান অধিনায়ক নাজমুল হোসেনকে খেলানোর প্রস্তাব তুলতেই বিসিবি সভাপতি নিজের বিরক্তি প্রকাশ করেন বাংলায়।

টিম মিটিংয়ে তাঁর ছড়ি ঘোরানোর এটি একটি নমুনা মাত্র। এ রকম অসংখ্য আছে। দলীয় সভায় অন্য দেশের ক্রিকেট বোর্ডের প্রধানদের ঢুকে পড়ার ঘটনা বিরল হলেও নাজমুলের ছিল অবাধ প্রবেশাধিকার।

এমনকি নির্বাচকদের কাজেও ছিল তাঁর নিয়মিত হস্তক্ষেপ। নির্বাচকরা দল দেওয়ার পর সেটি বদলে দেওয়ার ঘটনাও শোনা গেছে নিয়মিত। যদিও দীর্ঘদিন নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করা জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার এখানে একটি সংশোধনী দিলেন, ‘(নির্বাচকরা) দল দেওয়ার পর বদলানোর ঘটনা তেমন নেই। কারণ এটি তো ওপেন সিক্রেট যে দল গড়ার আগে উনার (নাজমুল) সঙ্গে বসেই চূড়ান্ত করা হতো।

অবশ্য কোনো টুর্নামেন্ট-সিরিজের দল কিংবা ম্যাচের একাদশ শুধু নয়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের যেকোনো কিছুতে তাঁর চূড়ান্ত অনুমোদন নেওয়াকে অঘোষিত নিয়ম বানিয়ে ফেলেছিলেন প্রায় এক যুগ সভাপতির দায়িত্ব পালন করা নাজমুল। ঠুনকো বিষয়েও তাঁকে সংবাদমাধ্যমের সামনে কথা বলার জন্য ঠেলে দিতেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালকরা। এখনো দায়িত্বে থাকা তাঁদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছিলেন, ‘আগ বাড়িয়ে কোনো বিষয়ে কথা বলে কেউ তাঁর চক্ষুশূল হতে চাইতেন না। প্রতিটি বিষয়ে তাঁর কাছে চূড়ান্ত মতামত চাওয়ার বিষয়টি উনি পছন্দ করতেন।’ যা ছিল গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনামলের চর্চার প্রতিচ্ছবি।

স্বেচ্ছাচারিতায় ক্রিকেটের ‘শেখ হাসিনা সংস্করণ’ হয়ে উঠেছিলেন নাজমুল।

তাঁর অধীনে জাতীয় দলের বিক্ষিপ্ত কিছু সাফল্য এলেও বেশির ভাগ সময় পারফরম্যান্সে ছিল ভাটার টান। ২০১২ সালে আ হ ম মুস্তফা কামালের জায়গায় সরকার মনোনীত সভাপতি হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু নিজের বলা আগের কথা পরে অস্বীকার করার জন্য ‘ডিনায়াল লেলে’ নাম পেয়ে যাওয়া ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সাবেক সচিব জয়ন্ত লেলের মতো নিজের ভাবমূর্তি দাঁড় করিয়েছিলেন নাজমুল। কয়েক বছর আগে টেস্ট নিয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি তেমন কিছু বলেনইনি বলে দাবি করেছিলেন। ২০২২ সালের এশিয়া কাপে ভরাডুবির পর এবং অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বলেছিলেন, ‘একটি জিনিস আপনাদের বলতে পারি, এখন যা করছি, তা এই বিশ্বকাপের জন্য নয়। এখন আমরা টার্গেট করেছি পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।’ ২০২৪ সালে পরের আসরে ব্যর্থতার পর সেটি মনে করিয়ে দেওয়া হলে পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনারা এগুলো বানান কোত্থেকে?’ অথচ ততক্ষণে তাঁর দুই বছর আগের বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। পাপনের এই মিথ্যাচার নিয়ে ক্রিকেটারমহলও বিস্মিত হয়েছে নানা সময়ে। 

পাইপলাইনে প্রচুর খেলোয়াড়ের মজুদ আছে বলে দাবি করে এলেও নাজমুলের সময়ে সেই সরবরাহব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। এমনই যে এখনো উদীয়মান ক্রিকেটারদের আসর ইমার্জিং এশিয়া কাপ খেলতে পাঠানো হয় জাতীয় দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের। ত্রুটিপূর্ণ স্কুল ক্রিকেট নিয়মিত আয়োজিত হলেও সেখান থেকে খেলোয়াড় তুলে আনার প্রক্রিয়া কখনোই পায়নি প্রত্যাশিত রূপ। এমনকি ভেঙে পড়েছিল ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো। প্রথম শ্রেণির দুটি ক্রিকেট প্রতিযোগিতা থেকে ‘পিকনিক’ আমেজ ঝেড়ে সেটিকে পেশাদার ছাঁচে ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে নাজমুলের নেতৃত্বাধীন দেশের সর্বোচ্চ ক্রিকেট প্রশাসন। বিশেষ করে ভোটের রাজনীতিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিং দিয়ে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটকে ধ্বংস করার অভিযোগ আছে নাজমুলের বিরুদ্ধে। বিসিবি পরিচালকদের মধ্যে নিজের একটি বিশেষ বলয় তৈরি করেছিলেন পাপন, যা তাঁর ইচ্ছাপূরণের হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল ক্রিকেট প্রশাসনে।

২০১২ সালে চালু হয়েছিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। শুরুতে হৈ চৈ ফেলে দেওয়া সেই ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরটি পাপনের অধীনে পরিণত হয়েছিল বিতর্কিত এবং হাস্যোষ্পদ এক টুর্নামেন্টে। পাপন ছিলেন বেক্সিমকোর কর্মকর্তা। তাই বিপিএলে এই ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের দল ঢাকাকে সর্বোচ্চ সুবিধা দিতেই ব্যস্ত ছিল টুর্নামেন্টটির গভর্নিং কাউন্সিল। ম্যাচের সূচী, উইকেটের ধরন এবং আম্পায়ার নির্বাচন হতো ঢাকা ডায়নামাইটসের (বেক্সিমকোর দল) চাহিদামাফিক। একইভাবে ভোটের বাজার নিয়ন্ত্রণে ঢাকার প্রিমিয়ার, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ করতো পাপনের বোর্ড। এই অপশাসনের শিকার ক্লাব কর্মকর্তা সৈয়দ আলী আসাফ বলেছেন, ‘(পক্ষপাতমূলক) আম্পায়ারিং দিয়েই আসলে সব শেষ করে ফেলা হয়েছিল।

বিশেষ নির্দেশনায় সব কিছু হতো। সভাপতি নিশ্চয়ই এর দায় এড়াতে পারবেন না।’ কিভাবে শেষ করে ফেলা হয়েছিল? সেটি জানাতে গিয়ে আসাফ দিলেন নিজের ক্লাবের উদাহরণ, ‘আমার দল ইয়াং পেগাসাস ছিল প্রথম বিভাগের দল। সেখান থেকে আমরা নামতে নামতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ হয়ে একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাই। স্কোরকার্ডগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন আম্পায়ার লেলিয়ে দিয়ে আমাদের কিভাবে নাজেহাল করা হয়েছিল।’

এই অনাচারের কাছে বশ্যতা স্বীকার করে টিকে যাওয়া অনেক ক্লাবকে আবার নাজমুলদের ভোটব্যাংকেও পরিণত হতে দেখেছেন আসাফ, ‘আমরা যাইনি। তবে বেঁচে থাকতে অনেকে আপোষ করেছিলেন। বিনিময়ে ক্লাবের কাউন্সিলর হওয়ার সুযোগ দিতে হতো কর্তাদের পছন্দের লোককে।’ এভাবে প্রিমিয়ার, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ লিগ মিলিয়ে ৭৬টি ক্লাবের ৬০টিই চলে আসে পাপন সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। তাতে নির্বাচন করে ভিন্নমতের কারো বিসিবিতে আসার পথ বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি নাজমুলের সময় বিসিবির গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সুপার লিগে ওঠা ছয়টি ক্লাবের প্রতিটির জন্য দুটি করে কাউন্সিলরশিপ তথা ভোটার প্রথাও চালু করা হয়। তৃতীয়বার সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর অবশ্য আবার গঠনতন্ত্র সংশোধন করে বাড়তি

কাউন্সিলরশিপ বাতিল করেন সাবেক বিসিবি সভাপতি, কিন্তু তাতে বিরুদ্ধ মতের সংগঠকদের বিলীন করে দেওয়ার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিংয়ের বিরুদ্ধে অভিনব প্রতিবাদ করে উল্টো নিষিদ্ধ হওয়ার মতো ঘটনা আছে নাজমুলের জামানায়। ২০১৭ সালের এপ্রিলে এক্সিওম ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে লালমাটিয়া ক্লাবের বোলার সুজন মাহমুদের ৪ বলে ৯২ রান দেওয়ার ঘটনা বিশ্বজুড়েই নেতিবাচক খবরের শিরোনামে নিয়ে আসে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। আম্পায়ারের নির্লজ্জ পক্ষপাতমূলক আচরণের প্রতিবাদে ইচ্ছাকৃতভাবে রান দিয়েছিলেন সুজন। কিন্তু এ জন্য ওই ক্রিকেটারকে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করার ঘটনা নাজমুলদের ‘বে-নজির’ স্বেচ্ছাচারিতার উদাহরণ হয়ে আছে। নানা অভিযোগ নিয়ে কথা বলার জন্য চেষ্টা করেও অবশ্য পাওয়া যায়নি নাজমুলকে। তিনি পলাতক, আছেন দেশের বাইরে। তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরও নিষ্ক্রিয় পাওয়া গেছে।

ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবে মহাক্ষমতাধর হয়ে ওঠা নাজমুলের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সময় মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের প্রেসিডেন্ট বক্সে আলাদা একটি ক্যামেরা রাখতে বাধ্য করা হতো সম্প্রচার সংস্থাকে। ব্যয়বহুল হলেও বিসিবি সভাপতিকে তুষ্ট করতে তাঁকে ফাঁকে ফাঁকে টিভিতে দেখানোর রেওয়াজ চালু হয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশ দল জিতলেই টিভি ক্যামেরায় পাপনকে ফোনালাপে ব্যস্ত দেখা যেত। পরে তিনি ঘটা করে জানাতেন যে, ফোনের অন্য প্রান্তে ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বোর্ডের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ থাকলেও কখনোই সেগুলো নিয়ে সোচ্চার না হওয়া নাজমুল অপচয়ের নতুন সব দিগন্ত খুলে গেছেন বিসিবিতে। ঢাকার বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে চার্টার্ড ফ্লাইট ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করতেন। ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের নিয়ে ওভাবে যাতায়াতের পেছনে দেদার অপব্যয় করেছেন। বিদেশে টুর্নামেন্ট চলাকালে একাধিকবার বিজনেস ক্লাসে দেশে আসা-যাওয়ার সুবিধা নিয়েছেন বিসিবিতে তাঁর স্নেহধন্য পরিচালকরা। নাজমুলের সময়ে চালু করা হয়েছিল বিদেশ সফরে পরিচালকদের জন্য দৈনিক ৫০০ ইউএস ডলার ভাতা। একেকটি বিশ্বকাপের সময় বিসিবির টাকায় কোটি কোটি টাকার টিকিট কিনে সেগুলো নিজের ব্যাবসায়িক স্বার্থে পরিচিতদের বিলানোর অভিযোগ আছে নাজমুলের বিরুদ্ধে। বিপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি ঢাকা ডায়নামাইটসের মত তাঁর দল আবাহনীও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে পেয়েছে বাড়তি সুবিধা। বিসিবি সভাপতি হওয়ার আগে ২০১২ সালে ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পক্ষে না যাওয়ায় আবাহনীকে মাঠ থেকে তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন দলটির তখনকার ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান নাজমুল।

সেই তিনি ক্রিকেট প্রশাসক হওয়ার পর অসংখ্য বিতর্কের মুখে ফেলেছেন বাংলাদেশকে। সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি তিনিই প্রথম প্রকাশ্যে এনেছিলেন। অপ্রয়োজনীয় কথা বলে কখনো কখনো চাপে ফেলেছেন ক্রিকেটারদের। জাতীয় দলের হেড কোচ হিসেবে দ্বিতীয়বার ফিরিয়ে আনা চন্দিকা হাতুরাসিংহে তাঁর অবাধ প্রশ্রয়েই স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছিলেন বলে একমত ক্রিকেটাঙ্গন। তবে স্টিভ রোডসের বিষয়ে তিনি ছিলেন কঠোর। ২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যর্থতা কিছুতেই স্বীকার করতে চাননি নাজমুল। অথচ সেই তিনিই ঢাকায় ফিরিয়ে এনে ব্যর্থতার অভিযোগে চাকরিচ্যুত করেছিলেন রোডসকে।

তা-ও ভালো যে এই ইংলিশ কোচ টিকেছিলেন আরো ১০ মাস। নাজমুল তো তাঁকে লন্ডনের ফ্লাইটে তুলে দিতে চেয়েছিলেন ২০১৮ সালের এশিয়া কাপ ফাইনালের আগের দিনই। ক্ষমতার ‘ব্ল্যাংক চেক’ পেয়ে নাজমুল হাসান পাপন হয়ে উঠেছিলেন ক্রিকেটের ‘শেখ হাসিনা’!

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker