প্রকৃতি শিকারী মানুষজনের কাছে, হাওর অঞ্চল গুলি মন প্রফুল্ল করা বা মনের ক্লান্তি দুর করার এক উত্তম যায়গা।বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রকৃতির রাণী হাওর কন্যার ডাকে ছুটে চলা অবিরাম বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে অতিথি মানুষের আগমনে বিশাল জনস্তুপের সৃষ্টি হয়। তবুও মনাঙ্গনে সুখের বৃষ্টি হয়।
সবুজ শ্যামল বাংলার ৬৪ টি জেলার মধ্যে দৃষ্টি নন্দন হাওর বেষ্টিত জেলা, রুদ্রের পশরে চিকচিক করা জলরাশীর মেলা, একমাত্র অনিন্দ্য সুন্দরের জেলা কিশোরগঞ্জ।
কিশোরগঞ্জ জেলার ১৩ টি উপজেলার মধ্যে মিনি কক্সবাজার নামে খ্যাত উপজেলা হল নিকলী। হাওর সৌন্দর্যের মহারাণী হয়ে আকৃষ্ট করে অজস্র পর্যটক বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। নিকলি উপজেলার বৃক্ষ সুন্দরী একটি জনপদ ছাতির চর।
জলের বুকে উচ্চ শিরে দাড়িয়ে থাকা গাছগুলি ভালবাসায় জড়িয়ে রাখে হাজার প্রকৃতি সুন্দরী মানুষজনকে। বিস্তীর্ণ হাওরে সুনীল জলরাশির বুকে জেগে উঠা অপরূপ সুন্দর এক জনপদ ছাতিরচর। ভরা বর্ষায় চারপাশে অথৈ পানি, দৃষ্টি সিমান্তে আকাশ আর জলের মিলনরেখা, এ যেন উপচে পরা মোহনীয় রূপ। সংস্কৃতি মনা মানুষদের নিয়ে যায় অন্য রাজ্যে। এমনই এক গ্রামের নাম ছাতিরচর।
জানা যায়-প্রকৃতির বাহ্যিক সুন্দর্যের গভীরে রয়েছে এখানকার মানুষের সংগ্রামী জীবনের বিশেষ অধ্যায়। ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ছাতিরচর গ্রামটির আবির্ভাব হয়।
ঘোরাউত্রা নদীর আশির্বাদে। ১৮৫০ সালের দিকে ঘোরাউত্রার তীব্র ভাঙ্গনে নদীর ওপারে জেগে উঠে বিস্তীর্ণ চর। তখন সবে জমিদারী প্রথা তালুকদারীতে রূপান্তর হয়েছে। তালুকদারগণ খাজনা আদায়ের নিমিত্তে নিজেদের প্রতিনিধি প্রেরণ করতো এই হাওরে। সময়টা সাধারনত ফসল কাটার মৌসুম, গ্রীস্মকাল। এই হাওরে কোন গাছপালা না থাকায় তালুকদারগণ তাদের প্রতিনিধিদের একটি করে ছাতা দিতেন রোদ বৃষ্টি থেকে গা বাচাঁতে। তারা ঐ ছাতা নিয়ে নদীর পারে ঐ চরে অবস্থান করতো এবং কৃষকদের থেকে খাজনা আদায় করতো। তখন ছাতা বেশ সমাদৃত হয়। লোকজন ছাতা উপহার বিনিময় করতো। এই ছাতার চর থেকেই ছাতিরচর নামকরণ হয়। প্রায় পৌনে দুইশত বছরের একটি সমৃদ্ধ জনপদ। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে আজ ছাতিরচর একটি অনন্য গ্রাম।
তত্ত্ব মতে মিশন ৯০ জানতে পারে- ২০০৪ সালে নিকলী উপজেলার সাত নং ইউনিয়ন হিসেবে আত্নপ্রকাশ করে ছাতির চর।প্রায় বিশ হাজার মানুষের বসবাস। ছাতিরচরে রয়েছে একটি উচ্চ বিদ্যালয়, তিনটি স:প্রা: বিদ্যালয়, দুইটি মাদ্রাসা, সাতটি মসজিদ ও একটি করে কমিউনিটি স্বাস্থ কেন্দ্র ও বাজার। পৌনে দুইশত বছর ধরে প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে টিকে থাকা আজকের ছাতিরচর গ্রামটি অস্তিত্ব সংকটে।
যে ঘোরাউত্রার আশির্বাদে জন্ম নিয়েছিল, কালের পরিক্রমায় আজ সে ঘোরাউত্রা নদী অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে কূলনাশা রূপে।
খোঁজ নিয়ে টিম মিশন ৯০ জানতে পারে- নদীটির প্রবল ভাঙ্গনে পৌনে দুই বর্গ কি.মি. আয়তনের গ্রামটি আজ প্রায় এক কি.মি.। ১ ও ২নং ওয়ার্ড সম্পূর্ণ নদীগর্ভে বিলীন, ৩নং ওয়ার্ডের একাংশ ইতিমধ্যে খেয়ে নিয়েছে ঘোরাউত্রা। অসংখ্য মানুষ বাপ দাদার ভিটে-মাটি হারিয়ে গ্রামছাড়া হয়েছে, সর্বহারা হয়েছে বহু পরিবার। এমতাবস্থায় জনপদটি রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের কার্যকরী ভূমিকা জরুরী।
সম্প্রতি কয়েক বছরে ছাতিরচরের মোহনীয় রূপ সারাদেশে সুনাম কুড়িয়েছে। রাজধানী সহ সারাদেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটক আসছে যা নিকলীর স্থানীয় অর্থনীতিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। হাজারো পর্যটকের আনন্দ যোগানো মাধ্যম ছাতির চর থাকলেও অভ্যন্তরিন কষ্টে কপোকাত।