চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের মদ, জুয়ার গডফাদার কে এই অনুপ বিশ্বাস

চট্টগ্রামের মাদক সাম্রাজ্যের একক সম্রাট অনুপ বিশ্বাস! তার হাতের ছোঁয়ায় চট্টগ্রামজুড়ে ছেয়ে গেছে চোলাই মদের রমরমা ব্যবসা। মেয়রের নাম ভাঙ্গিয়ে ও চট্টগ্রামের প্রভাবশালীদের অর্থের বিনিময়ে হাত করে চলে অনুপ বিশ্বাসের বেপরোয়া মদবাণিজ্য। সেই সাথে দল ভারী করতে সাবেক ছাত্রলীগ ক্যাডার সাক্ষর দাশকে বানিয়েছেন নিজের পিএস! বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মেয়রের সাথে তোলা ছবিকে ব্যবহার করেন ব্যাবসার ঢাল হিসাবে। “কথায় আছে ছবি কথা বলে”

কে এই অনুপ বিশ্বাস? এক সময়ের চাল চুলো হীন এই অনুপ বিশ্বাস রাউজান থেকে শহরে এসে টিউশনি করে চলত। পরে কোন এক ভাগ্য চক্রে বিয়ে করেন চট্টগ্রামের আরেক মাদক ব্যবসায়ীর মেয়েকে। পেয়ে যান রাজ কন্যা আর রাজত্ব দুটোই। সেই থেকে বদলে যেতে থাকে তার জীবনের হালচাল। আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। সিনেমার কল্প কাহিনীর মত বদলে যেতে থাকে তার জীবন। গড়ে তোলেন মাদকের বিশাল সাম্রাজ্য। শহরের বুকে রয়েছে বিশাল বিশাল আলিশান বাড়ী। চলেন দামী দামী গাড়ীতে। চলাফেরা করেন বড় বড় রাজনৈতিক নেতাদের সাথে।

এই অনুপ বিশ্বাস —কখনও জাতীয় পার্টি, কখন বা আওয়ামী লীগ। কখনও সংস্কৃতিসেবী, কখনও ক্রীড়া সংগঠক। এ সবই তার লোক দেখানো। টাকার বিনিময়ে পদ বাগিয়ে নিয়ে দশকের পর দশক তার নেতৃত্বে চট্টগ্রামজুড়ে চলছে একচেটিয়া চোলাই মদের রমরমা ব্যবসা।

২০০৯ সাল থেকে অনুপ বিশ্বাস জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর সঙ্গে ছিল তার ঘনিষ্ঠতা। জাতীয় পার্টির সুবিধা নিয়ে দীর্ঘ সময় তিনি পাথরঘাটা ২ নম্বর পুলিশ বিটের কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সভাপতি ছিলেন। আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ সাল থেকে অনুপ বিশ্বাস জাতীয় পার্টির সখ্য ছেড়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন।

জানা গেছে, অনুপ বিশ্বাস আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদে জাতীয় পার্টি করলেও তখন থেকেই ভেতরে ভেতরে সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মোটা অংকের অনুদান দিতেন বলে জানা গেছে। এই সময় থেকে মেয়রের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার চেষ্টা চালান অনুপ বিশ্বাস। পরবর্তীতে সিটি মেয়রের পৃষ্ঠপোষকতায় এ সময় অনুপ বিশ্বাস বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট (একাংশ) চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান বলে জনশ্রুতি রয়েছে। বর্তমানে তিনি ওই সংগঠনের চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি। সেই সাথে অবৈধ ব্যবসার ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেন ক্রীড়া অঙ্গনকে।

অনুপ বিশ্বাস বর্তমানে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বাংলাদেশ তায়কোয়ানডো দলের ম্যানেজার হিসেবে অনুপ বিশ্বাস গেল বছর ৫ই এপ্রিল থেকে ১৩ই এপ্রিল তিউনিশিয়া সফর করেন।

সিজেকেএস-তায়কোয়ানডো লীগ এবং সিজেকেএস-সিডিএফ প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগের স্পন্সরও অনুপ বিশ্বাস এন্ড ব্রাদার্স। গত বছর সিজেকেএস-তায়কোয়ানডো লীগের দুদিনব্যাপী পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের পাশে বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুপ বিশ্বাসকে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।

বৈধ লাইসেন্স নিয়ে অবৈধ ব্যবসা চালান অনুপ বিশ্বাস। চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানার ফিশারিঘাট এলাকার ১২৮ নম্বর ইকবাল রোডের চারতলা একটি ভবনে মদের মহালের লাইসেন্স পান। এর আগে এ মহালটি ছিল ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায়। ২০০৫ সাল থেকেই মূলত মদের মহালের আড়ালে শুরু হয় চোলাই মদের ব্যবসা। শুরুতে ব্যবসা প্রসারের লক্ষ্যে এলাকার প্রভাবশালী একশ্রেণীর যুবক ও মধ্যবয়স্ক শ্রেণীদের এক থেকে তিন লিটার পর্যন্ত মদ বিনামূল্যে দেওয়া হতো। বিনামূল্যে পাওয়া মদের কিছুটা নিজেরা কিছু সেবন করতো, বাকি মদ অন্যজনের কাছে বিক্রি করে দিতো। এভাবে একসময় এই ব্যবসা জমজমাট হয়ে ওঠে।

আর এই মাদক সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন তার আর এক সহযোগী সাগর দাশের নেতৃত্ব ক্যাডার বাহিনী। কেউ টু শব্দ করলে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার ক্যাডার বাহিনী। প্রতিবাদ করলেই হয়রানির স্বীকার হতে হয় এলাকার লোকজনকে।অবৈধ চোলাই মদের ব্যবসাকে নির্বিঘ্ন রাখতে অনুপ বিশ্বাস স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ রাখা ছাড়াও রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন উদার হাতে টাকা ছিটিয়ে। অনুপ বিশ্বাস এর পিএস সাবেক ছাত্রলীগ ক্যাডার সাক্ষর দাশই তার অন্যতম ক্যাডার সাগর দাশের দেখভাল করেন। এই সাক্ষর দাশ এক সময় কাউন্সিলর জালাল উদ্দিন ইকবালের অনুসারী ছিল। কিন্তু মাদকের সাথে সম্পৃক্ততার জন্য তাকে তাদের গ্রুপ থেকে বের করে দেয় বলে জানা গেছে।

রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ার পাশাপাশি প্রশাসনের নীরবতায় অনুপ বিশ্বাস পুরো এলাকাকে মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছেন। রাজনৈতিক নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়ে চালিয়ে যাচ্ছেন মাদক বানিজ্য। একদিকে ধংস করে হচ্ছে যুব সমাজ। অন্যদিকে নিজে গড়ে তুলেছে টাকার পাহাড়। জানা গেছে তার চোলাই মদ পান করে অনেকেই ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তবুও নীরব প্রশাসন!

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker