নড়াইল

নড়াইল নার্সিং কলেজে জনবল সংকটে ক্লাস রুম ঝাড়ু ও রান্নার তরকারি কাটতে হয় শিক্ষার্থীদের

নড়াইল নার্সিং কলেজে জনবল সংকটে ক্লাস রুম ঝাড়ু ও রান্নার তরকারি কাটতে হয় শিক্ষার্থীদের। নড়াইল নার্সিং কলেজের অবস্থা আমরা কি এখানে ঝাড়ু দিতে এসেছি, নাকি নার্সিং পড়তে’ শিক্ষক, অফিস সহকারী, অফিস সহায়ক, ঝাড়ুদার, কুক মাশালচিও নেই। ক্লাস রুম ঝাড়ু দিতে হয় নিজেদের। এমনকি রান্নার জন্য তরকারিও কাটতে হয়।

স্যাররা বলছেন, বাইরে থেকে যারা আসে, তাদের এখন থেকে গেটেও ডিউটি করতে হবে। আমরা কী এখানে ঝাড়ু দিতে বা তরকারি কাটতে এসেছি? নাকি নার্সিং পড়তে এসেছি? কথাগুলো বলছিলেন, নড়াইল নার্সিং কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী অঙ্কিতা কুণ্ডু।

নড়াইল নার্সিং কলেজ শহরের ভওয়াখালী এলাকায় ২ একর ৯০ শতাংশ জমির ওপর ১১ কোটি ৯৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয়। বর্তমানে দুটি ব্যাচ লেখাপড়া করছে। প্রথম বর্ষে ৪৬ জন এবং দ্বিতীয় বর্ষে ৪৮ জনসহ মোট ৯৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন কলেজটিতে।

শুরু থেকেই এখানে কোনো প্রকার পদ সৃজন ছাড়াই কলেজটির কার্যক্রম শুরু হয় ২০২৩ সালে। কলেজটিতে অধ্যক্ষসহ পাঁচজন শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে দুজন ছুটি নিয়ে আর আসেন না। এছাড়া অফিস সহকারী, হিসাবরক্ষক, অফিস সহায়ক, ঝাড়ুদার, কুক মাশালচিসহ কোনো জনবল নেই।

শিক্ষার্থীদের হাতেকলমে শিক্ষার জন্য কোনো ল্যাব নেই, হোস্টেল না থাকায় শ্রেণিকক্ষেই ঘুমাতে হয় তাদের। এসব শিক্ষার্থীদের মাসিক সম্মানী দেওয়ার কথা থাকলেও কেউ পান না। ফলে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত খরচ করে পড়ালেখা করতে হয়।

দ্বিতীয় বর্ষের শ্রবণী মণ্ডল বলেন, শুরু থেকেই আমরা বিভিন্ন সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এখানে শিক্ষক নেই, ল্যাব নেই। ঠিকমতো ক্লাসও হয় না। কোনো কোনো দিন ২-৩টা হয়, আবার হয় না। অধ্যক্ষ মহোদয়কে একাধিকবার জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। বাধ্য হয়ে গত ১ জুন বিভিন্ন দাবি নিয়ে আমরা সিভিল সার্জনের কার্যালয় ঘেরাও করি। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কোনো প্রকার সুযোগ-সুবিধা ছড়াই আমরা এখানে আছি।

প্রথম বর্ষের হামিমা বিনতে হায়দার বলেন, আমরা নামেমাত্র সরকারি নার্সিং কলেজে ভর্তি হয়েছি। এখানে সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। লেখাপড়ার পরিবেশ খুবই খারাপ। মাসিক ভাতা টাকাও আমরা পাই না। পরিবারের কাছ থেকে টাকা এনে লেখাপড়ার খরচ চালানো অসম্ভব।

আরেক শিক্ষার্থী অন্তিম বিশ্বাস বলেন, আমাদের থাকার কোনো হোস্টেল নেই। এক রুমে ক্লাস করি, আর পাশের রুমগুলোতে আমরা ১০-১৫ জন করে থাকি। সামনে আমাদের ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা। এ সময় লেখাপড়ার চেয়ে ল্যাবে কাজ বেশি থাকে। কিন্তু আমাদের ল্যাবের কোনো সুবিধা নেই। ফাইনাল পরীক্ষায় কী লিখব? কিছুই জানি না। এমনকি এখানে কোনো নিরাপত্তা প্রহরী নেই। এখন বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদেরই পর্যায়ক্রমে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমরা এখানে পড়তে এসেছি, না নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করতে এসেছি? কলেজে অধ্যক্ষসহ পাঁচজন শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে দুজন ছুটিতে আছেন। বাকি তিনজনকে অফিসের কাজসহ ক্লাস নিতে হয়।

কলেজের বিভিন্ন সমস্যার কথা স্বীকার করে অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) আফরোজা খাতুন বলেন, কলেজের নামে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। ছাড়পত্রটি এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ে আছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থনৈতিক কোড পেলে পদ সৃজনসহ জনবল পাব। আমরা প্রতিনিয়ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সমস্যার কথা জানিয়ে আসছি। আশা করছি, দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান হবে।

Author

দ্বারা
উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker