জাতীয়

এমপি আনার হত্যা : কে এই আখতারুজ্জামান?

ভারতে খুন হয়েছেন সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। গতকাল দেশটির পুলিশ এই তথ্য জানিয়েছেন। এরপর থেকেই উঠে আসছে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য। কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশিরাই জড়িত এমপি আনার হত্যায়।

ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে আটক করা হলেও খোঁজা হচ্ছে সন্দেহভাজন আরেকজনকে। পুলিশ জানিয়েছে, এমপি আনার যে বাসায় খুন হয়েছেন; সেই বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন আখতারুজ্জামান নামের এক বাংলাদেশি।

জানা গেছে, আখতারুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। তবে আনার ভারতে অবস্থানকালে আখতারুজ্জামানও সেখানে ছিলেন।

যে ফ্ল্যাটে আনার খুন হন বলে ধারণা করা হচ্ছে সেই ফ্ল্যাটে আখতারুজ্জামানও ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী আখতারুজ্জামান ঝিনাইদহের বাসিন্দা। আনার খুনের পর তিনি নেপাল, দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। গত ২০ মে ভিসতারা এয়ারে দিল্লি থেকে আখতারুজ্জামান নেপালের কাঠমান্ডু চলে যান। পরের দিন ফ্লাই দুবাইয়ে করে তিনি দুবাই চলে যান। তার পরবর্তী গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র বলে জানা গেছে। 

পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির প্রধান জানিয়েছেন, পূর্ব কলকাতার নিউটাউন অঞ্চলে যে ফ্ল্যাটে আনোয়ারুল আজিম উঠেছিলেন, সেটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবগারি দপ্তরের কর্মকর্তা সন্দ্বীপ কুমার রায়ের। তার কাছ থেকে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন আখতারুজ্জামান। তিনিই ওই ফ্ল্যাটে আনারের থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আনার ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন। এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। তদন্ত শুরু হয় দুই দেশে। বুধবার সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউটাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পরে বলেন, আনারকে কলকাতার ওই বাসায় ‘পরিকল্পিতভাবে খুন’ করা হয়েছে। তবে তার মরদেহ এখনও পাওয়া যায়নি। ভারতীয় পুলিশের কাছ থেকে এ বিষয়ে তথ্য পওয়ার পর বাংলাদেশের পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং যেটুকু তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে খুনিরা বাংলাদেশের বলে তারা জানতে পেরেছেন।

বিকেলে নিউটাউনের সঞ্জীভা গার্ডেনস নামের ওই বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক ঘুরে দেখে কলকাতার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির আইজি অখিলেশ চতুর্বেদী। তিনি বলেন, আমাদের কাছে যা তথ্য আছে; তাতে এমপি আনোয়ারুলকে সর্বশেষ ১৩ মে এখানে ঢুকতে দেখা গেছে। এর আগে তিনি এখানে এসেছিলেন কিনা সেটি আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। তবে তার লাশ উদ্ধার করা যায়নি।

লাশ উদ্ধার না করে কীভাবে তাকে হত্যার বিষয়ে নিশ্চিত হচ্ছেন জানতে চাইলে অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, আমাদের কাছে ইনপুট আছে। পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, যে ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্য আনারকে খুন করা হয়েছে, সেই ফ্ল্যাটের মালিক সন্দ্বীপ রায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মচারী। ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন আখতারুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।

তবে আখতারুজ্জামান এখনো ধরা পড়েননি। ভারত থেকে নেপাল হয়ে এরইমধ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন বলে খবর পেয়েছে ঢাকার পুলিশ।

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর থানার ওসি সৈয়দ আল মামুন বলেন, আপনার মতো আমিও শুনেছি যে মেয়র সাহেবের ভাই শাহীন মিয়ার পুরো নাম আখতারুজ্জামান। তবে আমাদের কাছে তার বিরুদ্ধে আগের কোনো অভিযোগ নেই বা কোনো ডকুমেন্ট নেই।

কোটচাঁদপুরের মেয়র সহিদুজ্জামানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ওর পুরো নাম আখতারুজ্জামান। ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ওর পরিবার সেখানে থাকে। ও নিজেও সেখানে থাকে। এক সপ্তাহ আগে ও বাড়ি ছেড়েছিল।’

বাড়ি থেকে আখতারুজ্জামান কোথায় গেছেন জানতে চাইলে মেয়র বলেন, সেটা আমি জানি না। ভারতে গেছেন কিনা জানতে চাইলে মেয়র বলেন, যেতে পারে।

কলকাতায় আখতারুজ্জামানের কোনো ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়া আছে কি না প্রশ্ন করলে তার ভাই সহিদুজ্জামান বলেন, ‘ঠিক ভাড়া না, পরিচিত একজনের ফ্ল্যাটেও মাঝে মাঝে গিয়ে থাকত।

কলকাতার পুলিশ বলছে যে ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্য আনার খুন হয়েছেন, সেটি আখতারুজ্জামান ভাড়া নিয়েছিলেন; সে বিষয়ে কিছু জানেন কি না– এই প্রশ্নে মেয়র বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker