স্বপন মাহমুদ, জামালপুর প্রতিনিধি:
সত্যি সত্যি জীবিত থেকেও কাগজে-কলমে মৃত চিহ্নিত হয়ে আছেন ৩ নারী। ভোটার আইডি কার্ডের তালিকায় মৃতের সারিতে রাখা হয়েছে তাদের নাম। যে কারণে ব্যাংক লোন, সন্তানদের লেখাপড়া-চাকরি থেকে শুরু করে সরকারের ১০ টাকা কেজির চালসহ বয়স্ক ও বিধবা ভাতাও জুটছে না তাদের।
জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের হিরণ্যবাড়ী গ্রামের ৩ নারী এমনই বিড়ম্বনার শিকার। নিজেদের জীবিত প্রমাণ করতে চান তারা। ঘুরছেন ভোটার লিস্ট করা ব্যক্তি শফিকুল ইসলাম (ভোলা) পিছনে।
বুধবার (৬ মার্চ) দুপুরে সুবিধা বঞ্চিত ওই ৩ নারীর সাথে কথা হলে তারা জানান, জাতীয় পরিচয়পত্রে মৃত থাকায় তারা কোন প্রকার সরকারি সুবিধা পাচ্ছেন না। ছেলেদের স্কুলে ভর্তি করা, উপবৃত্তি সুবিধা, ব্যাংক থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নেওয়া, ডিজিটাল মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা, বয়স্ক ও বিধবা ভাতা, বিজিডি চাউল, টিসিবি সুবিধা, ভোটাধিকার প্রয়োগ, আরো নানা রকম সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত তারা।
তারা আরও জানান, সবচেয়ে বড় বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন করোনা মহামারির সময়। সংকট কালীন এই মুহূর্তে পাননি সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা। আইডি কার্ড না থাকায় করোনা টিকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন তারা। পরে অবশ্য নতুন করে জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি করে টিকা নিয়েছেন।
উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের হিরণ্যবাড়ী গ্রামের ভুক্তভোগী নারী মোছাঃ আনঞ্জুয়ারা বলেন, আমার আইডি কার্ড না থাকার কারণে আমার সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করাতে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আমার মেয়ে কলেজ থেকে উপবৃত্তি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারছি না। যে কোন সরকারী কাজেই আইডি কার্ড লাগে। কিন্তু আমার আইডি কার্ড দিয়ে কোন কাজ করা যায় না। যেখানেই যায় বলে আমি মারা গেছি।
আনঞ্জুয়ারার বড় ভাইয়ের স্ত্রী মোছাঃ মরিয়ম । তিনিও জাতীয় পরিচয়পত্রে মৃতের তালিকায়। কথা হলে তিনি বলেন, আমার স্বামী বেশ কিছুদিন আগে মারা গেছেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর আমি বিধবা ভাতা তুলছি। কিন্তু আমাকে মৃত বানিয়ে আমার কার্ড মেম্বারা অন্য আরেকজনকে দিয়ে দিয়েছে। আমার কোন ছেলে মেয়ে নাই। আমি বিধবা ভাতার টাকা তুলেছি তা বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া আমি সরকারের কোন কিছু পাচ্ছি না। গেল নির্বাচনে আমি ভোটও দিতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, আমি কয়েকবার নির্বাচন অফিসে গিয়েছি। তারা ঠিক করে দেই নাই। ঠিক করে দেওয়ার জন্য শফিকুল ইসলাম (ভোলা) আমার কাছ থেকে টাকাও নিয়েছে। কিন্তু ঠিক করে দেই নাই।
একই বাড়ির ভোক্তভোগী নারী মোছাঃ জাহানারা বলেন, আমার স্বামী মারা গেছেন। আমি বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করলে আমি মৃত বলে আমাকে কার্ড দেওয়া হয় না। আমি কোন সরকারী সুযোগ সুবিধা নিতে পারছি না। আমি গত নির্বাচনে ভোট দিতে পারি নাই। আমি আইডি কার্ড ঠিক ঠাক চাই। আমি ভোট দিবার চাই, সরকারি সুবিধা চাই।
তিনি আরও বলেন, আমিও টাকা দিয়েছি শফিকুল ইসলাম (ভোলা) কে। আজ না কাল, না পরশু, আটদিন পর এই বলে বলে দুই বছরেও আমার আইডি কার্ড ঠিক করে দেই নাই।
উপজেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, মোছাঃ মরিয়ম বেগম ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসের ১৭ তারিখে মারা গেছেন। মোছাঃ জাহানারা মারা গেছেন ২০১৭ সালের জুন মাসের ১৬ তারিখে। আর মোছাঃ আনঞ্জুয়ারা মারা গেছেন ২০১৮ সালের আগস্ট মাসের ১০ তারিখে। জাতীয় পরিচয়পত্র হালনাগাদের সময় তিনটি জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন শফিকুল ইসলাম (ভোলা)।
বর্তমান ইউপি সদস্য নূর ইসলাম (কেজি) বলেন, এ ঘটনা যখন ঘটেছে তখন আমি মেম্বার হিসেবে নির্বাচিত ছিলাম না। এইটা দুর্নীতি করছে দুইজন ব্যাক্তি। একটা হলো সাবেক ইউপি সদস্য আলতাব আর একজন ভোটার লিস্ট করছে শফিকুল ইসলাম (ভোলা)।
বিধবা কার্ড নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ.কে.এম আনিছুর রহমান জুয়েল মুঠোফোনে বলেন, এগুলো মিথ্যা কথা। উত্তেজিত হয়ে সাংবাদিকে বলেন আপনি এত পেছাইতাছেন ক্যা আমাকে? শুনেন অতিরিক্ত সব কিছুই কিন্তু খারাপ! সাংবাদিকতা করেন ঠিক আছে এত বাড়াবাড়ি করবেন না মহাদান ইউনিয়ন নিয়ে।
এ-বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসার সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, ‘তারা অফিসে আসলে তাদের আইডি কার্ডের বিষয়টি সমাধান করে দেওয়া হবে। যাতে তারা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন।
এ-ব্যাপারে উপজেলা নিবার্হী অফিসার (ইউএনও) শারমিন আক্তার মুঠোফোনে বলেন, ভোক্তভোগীরা অফিসে এসে আবেদন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।