মৃত কয়েকজন মানুষ মেঝেতে পড়ে আছে। এর মধ্যে দেখলাম একটি ছোট শিশু। সম্ভবত স্কুলে যাওয়ারও বয়স হয়নি। পদদলিত হয়ে তার গলার অংশটি প্রায় শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অবস্থা। বোঝা গেল কেউ তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেনি। সবাই নিজের জীবন রক্ষায় ছুটছে।
আগুনের ভয়ংকর ঘটনার এ মর্মস্পর্শী বর্ণনা দিয়েছেন বেঁচে ফেরা তরুণ মোহাম্মদ আনান (২১)। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন তিনি।
আনান বলেন, তিনি দুই বন্ধুর সঙ্গে ভবনটির এক রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন। হঠাৎ দেখেন ধোঁয়ার কুণ্ডলী বের হচ্ছে। নিচতলা থেকে চিৎকার ও কান্নাকাটির শব্দ শোনা যাচ্ছে। এক সময় জানতে পারেন, আগুন লেগেছে।
তখন যে যার মতো তৃতীয় তলা থেকে বের হয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টা করে। দেখেন মানুষের প্রচণ্ড ভিড়, হুড়োহুড়ি। বিদ্যুৎ নেই, ঘন ধোঁয়ায় মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট অন করেও ভালো দেখা যাচ্ছিল না। সামান্য যে আলো ছিল তাতেই দেখি একটি শিশুসহ বেশ কয়েকজনের লাশ পড়ে আছে।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আনান বলেন, ‘চোখের পলকে আগুন এমন ভয়াবহ ভাবে ছড়িয়ে পড়ায় ভয় পেয়ে যাই। মনে হচ্ছিল এখানে থাকলে হয়তো আমিও মারা যাব। তাই যেভাবে হোক বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’
ষষ্ঠ তলার রেস্তোরাঁর কিচেনের রেলিং দিয়ে কোনো রকমে বের হন আনান। এরপর ডিশ ও ইন্টারনেটের কেবলসহ বিভিন্ন তারের গোছা বেয়ে নিচের দিকে আসেন। দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত আসার পর সেই তারও শেষ হয়ে যায়। তখনো তার ধরে ঝুলে থাকায় এক সময় তালুর ত্বক ছড়ে গিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। তখন তার ছেড়ে দিয়ে নিচে পড়ে যান তিনি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আনানকে উদ্ধার করে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করান।
এবার এইচএসসি পাস করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিচ্ছেন মোহাম্মদ আনান। এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সমাজসচেতন তরুণটিকে খুব ক্ষুব্ধ করেছে। তিনি বললেন, ‘কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছি। হাঁটতে বা ভালো করে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছি না। হয়তো আমিও মারা যেতে পারতাম, ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছি। যারা মারা গেছে, তাদের কথা একটু ভাবুন। তাদের পরিবারের কথা একটু ভাবুন। এত বড় বড় বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ হচ্ছে, কিন্তু আগুন নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই। বের হওয়ার জরুরি পথও নেই। এসব ঘটনার দায়ভার কে নেবে?’
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts to your email.