স্বপন মাহমুদ, জামালপুর প্রতিনিধি:
খেয়ে না খেয়ে পঙ্গু স্বামী-সন্তান নিয়ে ধারে ধারে ঘুরছেন রিক্তা বেগম। দাঙ্গাবাজ ভূমি খেকু মোহাম্মদ আলী নামে এক ব্যক্তি তার বসত-ভিটা সহ ঘরবাড়ী বেদখল করে তাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে দিয়েছেন। নিজের বসতবাড়িতে গেলেই মোহাম্মদ আলী দেন হুমকি। আইনি কোন সহায়তা না পেয়ে মানুষের ধারে ধারে ঘুরছেন তার পরিবার।
তিনি পাশ্ববর্তী মাদারগঞ্জ উপজেলা সিদুলী ইউনিয়নের চর-লোটাবর গ্রামের বাসিন্দা। সোমরার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে ঐ ভাড়া বাসায় গেলে সাংবাদিকদের তিনি এসব ঘটনার বর্ণনা করেন। তারা বর্তমানে নিঃস্ব হয়ে সরিষাবাড়ী পৌর শিমলা এলাকায় অন্যের বাসায় দিন কাটাচ্ছেন।
জানা যায়, জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার বীর নোটাবর গ্রামে মৃত অদ্দিন মিয়ার ছেলে শহীদ মিয়া ওয়ারিশমুলে ৮শতাংশ জমি পায়। সেই জমিতেই শহীদ মিয়া তার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। সেই জমিতে কিন্তু একই গ্রামের দাঙ্গাবাজ ভুমি খেকু মোহাম্মদ আলীর নজর পড়ে। এদিকে শহীদও অভাবের তাড়নায় পেটের দায়ে আড়াই শতাংশ জমি ৫ লক্ষ টাকা দাম ধর ঠিক করে মোহাম্মদ আলীর নিকট বায়না করে। মোহাম্মদ আলী ২ লক্ষ টাকা দিয়ে বায়না পত্র দলিল করে। বাকী টাকা দিবে বলে কৌশলে রেজিস্টারি করে নেন। কিন্তু মোহাম্মদ আলী ২ লক্ষ টাকা দিয়েই জমি দখল নিতে চেষ্টা করে। এমনকি এক পর্যায়ে গত (১৫ এপ্রিল) শনিবার সকালে শহিদ মিয়ার উপর অতর্কিত হামলা করে শহিদের ‘এক পা রামদা দিয়ে’ কুপিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়। আশে পাশের লোকজন শহিদকে উদ্ধার করে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করালে কয়েকদিন চিকিৎসার পর ডাক্তার অবস্থার অবনতি দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেলে স্থানান্তর করে। দীর্ঘ ৩/৪ মাস চিকিৎসার পরে ধার কর্জ করে দামী দামী ঔষধ পত্র খেয়ে শহিদ একটু একটু হাড়তে সক্ষম হয়। শহিদ বর্তমানে ভাঙ্গা পা নিয়ে কোন কাজ কর্ম করতে না পারায় স্ত্রী ২ সন্তান নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন।
ভুক্তভোগী শহিদের স্ত্রী রিক্তা বেগম বলেন, ‘এলাকার লোকদের কোন সহায়তা না পাওয়ায় অবশেষে ০২/০৬/২০২৩ইং তারিখে মাদারগঞ্জ থানায় মোহাম্মদ আলীকে প্রধান আসামী করে ৬ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তুু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্যামগঞ্জ কালিবাড়ী তদন্ত কেন্দ্রের এসআই মাসুদ পারভেস মামলাটি ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করায় আমরা এর কোন সুফল পাচ্ছিনা। পুলিশ বলে শহিদ মিয়ার এটা সামান্য আঘাত, কি রিপোর্ট দিবো।
এ-ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মাসুদের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ‘আমি বাদীর স্বামী শহিদ মিয়ার ব্যাপারে হাসপাতালে ভর্তির কোন ডকুমেন্ট না পাওয়ায় তাদের মামলার চার্জসিট প্রেরন করতে পারছিনা। বাদী আমার সাথে কোন রকম যোগাযোগ না করায় আমি এখনো মামলার চার্জসিট দেই নাই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম বাদীর অভিযোগ সত্য না বলে দাবী করে বলেন, ‘বাদীর স্বামী সহিদ মিয়া টাকা নিয়ে জমি রেজিষ্টি বায়না করে। তবে জমির টাকা সব নিছে কিনা আমি স্পষ্টনা। নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে অনেকেই জানান, মোহাম্মদ আলী একজন দুস্কৃতিকারী, তার সাথে কেউ কথা বলতে গেলে তার স্ত্রী সন্তানেরা উগ্র হয়ে উঠে। আমরা এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারবনা।
এ-বিষয়ে সিদুলী ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান মিলন বলেন, বাদী রিক্তা বেগম এবং বিবাদী মোহাম্মদ আলীর মাঝে জমি জমার বিষয়ে আমি বেশী কিছু জানিনা, তাদের বিষয়ে তেমন কিছু জানা নেই। তবে এতটুকু জানি উভয় পক্ষের মাঝে জমিজমা নিয়ে একটা বিরোধ আছে।