বাণিজ্য

ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু : বীমা পণ্যের ব্যবসা করবে ব্যাংক

ইনস্যুরেন্স বা বীমা পলিসি বিক্রি করতে পারবে ব্যাংক। আর ব্যাংক থেকে বীমার পণ্য কেনার এই ব্যবস্থার নাম ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স’। এখন থেকে দেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংক বীমা কম্পানির এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারবে। একই সঙ্গে বীমা পণ্য বিপণন ও বিক্রির ব্যবসা করতে পারবে ব্যাংকগুলো।

গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এসংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বীমা পণ্যের জন্য গ্রাহকদের বীমা কম্পানিতে যেতে হবে না, ব্যাংকের শাখায় গেলেই চলবে। অর্থাৎ ব্যাংক তার নিজের গ্রাহকের কাছে ব্যাংকিং পণ্যের পাশাপাশি বীমা পণ্যও বিক্রি করবে। পণ্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পেনশন, স্বাস্থ্য, দুর্ঘটনা, দেনমোহর, শিক্ষা, ওমরাহ, হজ ইত্যাদি।

বীমা খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বীমা কম্পানির সঙ্গে সংযুক্ত হতে ২০২০ সাল থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এ ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ব্যাংকাস্যুরেন্সে গ্রাহক সহজে পলিসি করতে সক্ষম হবেন। আবার এতে করে দুটি সুবিধা হবে। এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁদের কাছে মাঠকর্মীরা পৌঁছতে পারেন না।

কিন্তু ব্যাংকের কাছে তাঁরা নিয়মিতই আসেন। তাঁরা সহজেই বীমার গ্রাহক হতে পারেন, মানুষের মধ্যে বীমা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়বে। দ্বিতীয়ত, গ্রাহক আস্থা তৈরি হবে। কারণ বর্তমানে বীমা নিয়ে মানুষের মধ্যে কিছুটা বিরূপ মনোভাব দেখা যায়। এখনো অনেক কম্পানি তাদের গ্রাহকের বীমা দাবি পরিশোধ করতে কালক্ষেপণ করছে।

জানতে চাইলে মেটলাইফ বাংলাদেশের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আলা আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ব্যাংকাসুরেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশে বীমা খাত আরো বিস্তৃত করা সম্ভব হবে এবং বীমা বিক্রির একটি নতুন চ্যানেল হিসেবে এটি আরো বেশি লোককে বীমার আওতায় আনবে। এটি গ্রাহকদের জন্য ভালো, কারণ তাদের বীমা নেওয়া আরো সুবিধাজনক হবে। এটি বিদ্যমান এজেন্ট চ্যানেলকেও উপকৃত করবে, কারণ আরো বেশি লোক বীমা সম্পর্কে সচেতন হবে। মেটলাইফ বাংলাদেশ ব্যাংকাসুরেন্সের এবং এজেন্টদের সফলতা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে।’

‘ব্যাংকাস্যুরেন্স’-এর নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কার্যরত তফসিলি ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংকাস্যুরেন্স প্রবর্তন করা হয়েছে। ব্যাংক কম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৭(১)(ল) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদনক্রমে সব তফসিলি ব্যাংক বীমা কম্পানির ‘করপোরেট এজেন্ট’ হিসেবে বীমা পণ্য বিপণন ও বিক্রয় ব্যবসা ১২ ডিসেম্বর থেকে করতে পারবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ব্যাংকাস্যুরেন্স ফরাসি শব্দ। ১৯৮০ সালের দিকে ফ্রান্স ও স্পেনে প্রথম এটি চালু হয়। ইউরোপের বেশির ভাগ দেশে ব্যাংকের মাধ্যমে জীবন বীমা পলিসি বিক্রি হয়। এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও তা জনপ্রিয়তা পেয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এটি চালু হয় প্রায় তিন যুগ আগে। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাও ব্যাংকাস্যুরেন্সে সফল হয়েছে।

‘ব্যাংকাস্যুরেন্স’ নীতিমালায় যা আছে: অনুমোদিত নীতিমালা ও নির্দেশিকা অনুযায়ী ব্যাংকাস্যুরেন্স বাস্তবায়িত হবে মূলত দেশের ব্যাংকগুলোর শাখার মাধ্যমে। বীমা কম্পানির করপোরেট এজেন্ট বা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবে ব্যাংক। দীর্ঘদিন ধরেই এমন অভিযোগ আছে যে বীমা খাতের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা তুলনামূলক কম। তাই ব্যাংকাস্যুরেন্স হতে পারে মানুষের ভরসার জায়গা।

বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলো ব্যাংকাস্যুরেন্সের এজেন্ট হতে পারবে। এ জন্য বীমা কম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। তবে কোনো ব্যাংকাস্যুরেন্স এজেন্ট তিনটির বেশি বীমা কম্পানির সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে না। এ জন্য বীমা কম্পানিকে আইডিআরএ এবং ব্যাংকাস্যুরেন্স এজেন্টকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে।

এর আগে ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স নীতিমালা’ ও ‘করপোরেট এজেন্ট (ব্যাংকাস্যুরেন্স) নির্দেশিকা’ দুটির খসড়া অনুমোদন করেছে সরকার।

ব্যাংকাস্যুরেন্স নিয়ে ফাউন্ডেশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব লাইফ অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড (এফএএলআইএ) পরিচালিত এক জরিপে বলা হয়, ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ৭৯ শতাংশ পলিসি বিক্রি হয় তুরস্কে। ভারতে এই হার ২০.৮।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ব্যাংকের মোট শাখা রয়েছে ১১ হাজার ২৩৯টি। এর মধ্যে গ্রামে শাখা আছে পাঁচ হাজার ২৮৭টি।

বীমা খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংকাস্যুরেন্স চালুর ফলে বীমার ডিস্ট্রিবিউশন বাড়বে, আস্থার জায়গা তৈরি হবে। অন্যদিকে বীমা কম্পানিগুলোর খরচ কমে আসবে। আর ব্যাংক যখন বীমা পলিসি বিক্রি করবে, তখন সবার মধ্যে আস্থার জায়গা তৈরি হবে। কারণ ব্যাংকের কর্মীরা পেশাদারির দিক থেকে অনেক এগিয়ে আছেন। এতে বীমা খাতে প্রিমিয়াম পেনিট্রেশন হার আরো বাড়বে। এতে জিডিপিতে বীমার অবদান বাড়বে। বর্তমানে অবদান ১ শতাংশেরও কম।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker